যশোরের চৌগাছার ফতেপুর জেলেপল্লীর বাসিন্দাদের আতঙ্ক যেন কাটছেই না। উপজেলায় আওয়ামী লীগ নেতার পোষ্য সন্ত্রাসীদের হাতে নির্যাতনের শিকার জেলে এ সম্প্রদায়। ছোট মাছ ধরার অপবাদ দিয়ে বাড়ি লুটপাট, অন্তঃসত্ত্বা নারী, বৃদ্ধ ও পুরুষদের ধরে শারীরিক নির্যাতন করে আসছে আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি ও ৫নং সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম বাহিনী। ভয়ে স্থানীয় প্রশাসনকেও অভিযোগ জানাতে ভয় পাচ্ছে এ জেলে সম্প্রদায়।
জেলেপল্লী বাসিন্দারা জানিয়েছেন, চলতি মাসের ২০ তারিখ ভোরে বেড়গোবিন্দপুর বাওয়রে ফতেপুর অংশে বাদল হালদার ও শিমুল সরদার মারপিট করেন বেড়গোবিন্দপুর গ্রামের অপুল, বাবুল, পাভেল, তারক, সাইদুর, গার্ড বাবুল, হুদপাড়ার সুজ্জালসহ ১০-১২ জন। মারপিটের একপর্যায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে জোরপূর্বক মোবাইলে ভিডিও ধারণের জন্য মাছ চুরির কথা স্কীকার করতে বাধ্য করেন চেয়ারম্যানের লোকজন। পরে ধারণ করা ভিডিও স্যোশাল মিডিয়ার ছড়িয়ে দিয়ে সম্মানহানি করে তাদের।
এ ছাড়াও গত জুলাই মাসে পুলিশ পরিচয়ে বাড়ি থেকে তুলে অন্তঃসত্ত্বা এক নারী, বৃদ্ধকে শারীরিক নির্যাতন চালায় কাশেম চেয়ারম্যানের পোষ্য বাহিনী। লাখ টাকার জাল লুট করে নিয়ে যায় এই বাহিনী। সে সময় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার কারণে থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরও কোনো সুরাহা হয়নি বলে জানান তারা।
জেলে নিরঞ্জন হালদার বলেন, আমরা বাওরে মাছ ধরে বড় হয়েছি। সরকার থেকে কাশেম চেয়ারম্যানকে বাওর লিজ দেওয়ার পর থেকে আমাদের আর বাওরে নামতে দেয় না। পেটের দায়ে আমারা ছোট মাছ ধরতে গেলে চোর অপবাদ দিয়ে কাশেম চেয়ারম্যান গ্যাং মারপিট করেন। এভাবে চলতে থাকলে পেটের দায়ে আমাদের ভিক্ষা করা ছাড়া উপায় থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, কাশের চেয়ারম্যান বাঁওড় লিজ পাওয়ার পর চুক্তি ছিল ছোট মাছ ধরার ৫০ শতাংশ মালিকপক্ষ পাবে। বাকিটা জেলেরা পাবে। কিন্তু চুক্তি মোতাবেক মাছ না দিয়ে সব ছোট মাছ সে একা নিতে চাচ্ছে। আমার মাছ ধরতে গেলে চুরির অপবাদ দিয়ে মারপিট করে তার গ্যাং।
ভুক্তভোগী বাদল হালদার ও শিমুল সরদার বলেন, ২০ অক্টোবর ভোরে ছোট মাছ ধরতে বাঁওড়ে যাই। হঠাৎ পাড় থেকে নৌকা ভেড়ানোর জন্য বাবুল, পাভেল, তারক, সাইদুর, গার্ড বাবুল, হুদপাড়ার সুজ্জালসহ ১০-১২ জন এসে হাজির হয়। আমাদের পাড়ে আসতে বলে। পাড়ে আসলে পিস্তল, হাঁসুয়া, মাংস কাটা চাপাতি নিয়ে এলোপাতাড়ি মারপিট করে তারা। মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে ছোট মাছ লুট করে নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় তারা বলে, যদি প্রশাসনকে জানায় তাহলে রাতে এসে গুলি করে মেরে ফেলবে।
ভুক্তভোগী জেলে সঞ্জয় কুমার বলেন, গত ১৮ জুলাই ভোরে পুলিশ পরিচয়ে ঘুম থেকে ডেকে নিয়ে আমার বাবা, মা, আমার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীসহ সবাইকে মারধর করেছে। আমার মাছ ধরার জাল আর আমার মেয়ের গলা থেকে সোনার চেন নিয়ে গেছে। মাছ ধরা জাল ফেরত না দিলে সংসার চালাব কীভাবে তাই জানি না।
ভুক্তভোগী রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার বাসা থেকে মাছ বিক্রির সব টাকা নিয়ে গেছে। টাকা দিতে চাইনি তাই মাছ চুরির কথা বলে আমাকে ও আমার স্ত্রীকে অনেক মারধর করেছে।
চৌগাছা আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি ও ৫নং সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম বলেন, ওরা মাছ চুরি করছিল। এ জন্য লোকজন গিয়ে বাধা দিয়েছে। এ সময় তিনজন স্থানীয় সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। তারা ভিডিও করেছে।
চৌগাছার থানায় ওসির দায়িত্বে থাকা উপপরিদর্শক মেহেদি হাসান বলেন, আমি চার দিন দায়িত্ব পেয়েছি। জেলে পল্লীর নির্যাতনের বিষয়ে আমার আগের ওসি স্যার বলতে পারবেন। তবে এ বিষয়ে নতুন করে অভিযোগ দিলে আমি ব্যবস্থা নেব।
মন্তব্য করুন