কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

গণমাধ্যমের পরাজয় মানে রাষ্ট্রের পরাজয় : কাদের গণি চৌধুরী

সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজারের বার্ষিক সাধারণ সভায় বক্তব্য রাখেন বিএফইউজে মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী। ছবি : কালবেলা
সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজারের বার্ষিক সাধারণ সভায় বক্তব্য রাখেন বিএফইউজে মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী। ছবি : কালবেলা

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী বলেছেন, গণমাধ্যমের পরাজয় মানে জনগণের পরাজয়। আর জনগণের পরাজয় মানে রাষ্ট্রের পরাজয়। তাই গণমাধ্যমকে পরাজিত হতে দেয়া যাবে না।

শুক্রবার (১ নভেম্বর) দুপুরে কক্সবাজার প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজারের বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজার সভাপতি জি এ এম আশেক উল্লাহর সভাপতিত্বে কাদের গণি চৌধুরী আরও বলেন, সত্য বলার সাহসিকতা সাংবাদিকতার মূলমন্ত্র। সৎ সাংবাদিকতা সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করে। সৎ সাংবাদিকতা সত্যের আরাধনা করে। বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা সমাজকে এগিয়ে নেয়, গণতন্ত্রকে বিকশিত করে। তাই সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে সাংবাদিকতা করতে হবে। সততা না থাকলে সাংবাদিকতা থাকে না। সাংবাদিকদের কলম মুক্ত হলে সমাজ উপকৃত হয়। আবার কলমের শক্তিকে ইতিবাচক কাজে ব্যবহার না করলে জাতির সর্বনাশ ঘটে। তাই বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশে কোনো অজুহাত নয়। একপেশে, দলবাজি সাংবাদিকতা নয়, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য নয়, গণমানুষের মনের কথা পত্রিকার পাতায় পাতায় তুলে ধরতে হবে। যতই অলিখিত সরকারি কালাকানুন থাকুক না কেন, ক্ষমতাশালীদের বাধা থাকুক না কেন, গণমানুষের কথা আমাদের বলতে হবে।

তিনি বলেন, জনগণ দাস সাংবাদিকতাকে মনে প্রাণে ঘৃণা করে। তাদের আত্মসমর্পণকে ঘৃণা করে। তাই অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে সম্পাদক-সাংবাদিকদের নির্ভীক, নির্লোভ ভূমিকা পালন করতে হবে। সংবাদপত্র জাতির দর্পণ শুধু কাগজ-কলমে নয়, বক্তৃতা-ভাষণে নয়; সত্যিকারভাবে জাতির বিবেকের ভূমিকা পালন করতে হবে। মোহমুক্ত হয়ে সাংবাদিকতা করতে পারলেই বাংলাদেশকে দুর্নীতি ও ফ্যাসিবাদমুক্ত করা সম্ভব হবে।

এই সাংবাদিক নেতা বলেন, দলবাজি, দাসবাজি সাংবাদিকতায় আমরা এত জড়িয়ে পড়েছি যে, পথ ভুলে অন্ধ গলিতে হাবুডুবু খাচ্ছি। সাদাকে সাদা বলতে পারছি না। রাজনীতির চোরা গলিতে সংবাদপত্র ডুবে আছে। এমন দলবাজি-দলদাসী মানসিকতা সৃষ্টি হয়েছে যে, তথ্যনির্ভর কোনো সংবাদ বা কলাম বিগত ১৫ বছরে পত্রিকায় দেখা যায়নি। তখন পত্রিকা অফিস থেকে বলা হতো, প্রকাশে অনেক ঝুঁকি আছে। ঝামেলা আছে। বাধা আছে। সত্যিকার অর্থে একটি ভালো মানের পত্রিকার কোনো ব্যবসায়িক স্বার্থ থাকে না। কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, সরকার বা বিদেশি রাষ্ট্র বা তাদের কোনো এজেন্টদের কাছে কোনো দায়বদ্ধতা থাকে না।

এই সাংবাদিক নেতা আরও বলেন, একজন সাংবাদিকের কাজ সমাজের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা। সে জন্য গণমাধ্যমকে সমাজের দর্পণ বলা হয়। এই দর্পণে প্রতিবিম্বিত হয় সমাজের প্রতিচিত্র। অন্যায়, অনিয়ম, নিগ্রহ, শোষণ-বঞ্চনা ও অধিকার হরণের বিরুদ্ধে একজন সাংবাদিককে সোচ্চার থাকতে হয় সবসময়। চোখ রাঙানোকে তোয়াক্কা না করে নির্ভীক ও নিরলসভাবে কাজ করতে হয়। প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থার চিত্র প্রত্যক্ষ করতে হয়। মানুষের সমস্যার কথা তুলে ধরার দায়িত্ব পালন করতে হয়। অনেক বাধা বিপত্তির মধ্যে তাদের দিন যায়। ক্ষমতাধরদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সাহসিকতার সঙ্গে এগিয়ে যেতে হয়। অভাব অনটনের ভেতর শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়াতে হয়। পরিশ্রম করতে হয় অনেক।

জেইউসির সাধারণ সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের এখনও চুড়ান্ত বিজয় আসেনি। আংশিক বিজয় এসেছে। এখনও দেশের বিরুদ্ধে নানা ভাবে ষড়যন্ত্র চলছে। কখনও আনসার বিদ্রোহ হয়ে, কখনও বিচার বিভাগে, কখনও সরকারের উপদেষ্টাদের বিতর্কিত করার চেষ্টার মধ্যদিয়ে। এখন আমাদের ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে।

তিনি বলেন, কাজ ও কথায় যদি আমাদের না মেলে তখন নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট হয়। এখন সেই সময় নয়। ঐক্যবদ্ধ থাকতে না পারলে বিজয় ধরে রাখা যাবে না। যারা ফ্যাসিবাদের হয়ে যারা ভূমিকা রেখেছেন তাদের বড় একটা অংশ হলো সাংবাদিক। এই সাংবাদিকরা ঠিক থাকলে দেশে ফ্যাসিবাদ হতো না।

তিনি দেশে কোন গণমাধ্যম বন্ধ হবে না জানিয়ে বলেন, ফ্যাসিবাদের দোসরের মতো সাংবাদিকতা করলে হবে না।

সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজার সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা সরওয়ারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সাধারণ সভায় আরও বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম শ্রম অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক আবদুস সাব্বির ভূঁইয়া, কক্সবাজার প্রেসক্লাব সভাপতি মাহবুবর রহমান, সাংবাদিক নেতা তালুকদার রুমি, সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মুহম্মদ নুরুল ইসলাম, সাবেক সভাপতি ও কক্সবাজার প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক মমতাজ উদ্দিন বাহারী, সিনিয়র সদস্য এস এম আমিনুল হক চৌধুরী, আতাহার ইকবাল, কামাল হোসেন আযাদ, আবু সিদ্দিক ওসমানী, রুহুল কাদের বাবুল, বর্তমান সহ-সভাপতি এম আর মাহবুব, ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক কালের কন্ঠের কক্সবাজার ব্যুরো চিফ আনছার হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম জাফর, সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসানুর রশীদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজার সভাপতি জি এ এম আশেক উল্লাহ।

পরে সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজার-জেইউসির ত্রি-বার্ষিক নির্বাচন পরিচালনার জন্য নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মুহম্মদ নূরুল ইসলাম প্রধান নির্বাচন কমিশনার, কক্সবাজার প্রেসক্লাব সভাপতি মাহবুবর রহমান ও সিনিয়র সদস্য এস এম আমিনুল হক চৌধুরীকে নির্বাচন কমিশনার মনোনীত করা হয়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কাঁচামালের সংকট দেখিয়ে টেক্সটাইল কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই

রংপুরে মাটি লুটের মহোৎসব ঝুঁকিতে কালুরঘাট সেতু

জাকের বীরত্বে ক্যারিবীয়দের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য দিল বাংলাদেশ

পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় হচ্ছে : ডা. এম জেড জাহিদ

কৃষকের ধান পুড়িয়ে দিল দুর্বৃত্তরা

সূর্যের আলো থেকে শত কোটি টাকা আয় চীন-পাকিস্তানের!

জনগণের প্রত‍্যাশা অনুযায়ী ক্রীড়াঙ্গন গড়ে তোলা হবে : আমিনুল হক 

আলো ফিরে পেতে চান গুলিবিদ্ধ নাহিদ

১০ হাজার ৫০ পিস ইয়াবাসহ মূল হোতা গ্রেপ্তার

দুই বন্ধুর মাছের বারবিকিউ, মাসে বিক্রি ৬ লাখ টাকা

১০

ফেনীতে জামায়াতের সহযোগিতায় নতুন ঘর পেলেন সুধীর রঞ্জন মজুমদার

১১

বিপিএলের থিম সংয়ে অবদান রেখেছেন ড. ইউনুসও

১২

কেপি শর্মা অলির বেইজিং সফর কী বার্তা দিচ্ছে?

১৩

জবির ছাত্র ঐক্যের মঞ্চে থাকবেন হাসনাত-রাকিব-মঞ্জুরসহ ১২ সংগঠনের নেতা

১৪

পরকীয়া সন্দেহে স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ স্বামীর বিরুদ্ধে

১৫

‘স্বৈরাচারের দোসররা দেশ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত’

১৬

আইসিবির ৩ হাজার কোটি টাকার ঋণে সুদের হার নামল ৪ শতাংশে

১৭

বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত হেনেছে ভারত : খেলাফত মজলিস

১৮

ক্রীড়াঙ্গনে হট্টগোল, ব্লেম-গেম চলছেই!

১৯

আবারও সাজেক ভ্রমণে ‘মানা’

২০
X