কুমিল্লা ব্যুরো
প্রকাশ : ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ০২:২৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

‘অনুদান নয়, চিকিৎসা চাই’

আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ মেহেদী হাসান। ছবি : কালবেলা
আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ মেহেদী হাসান। ছবি : কালবেলা

‘আমি দৃষ্টিশক্তি প্রায় হারিয়েছি, বাবা হারিয়েছেন উপার্জনের মাধ্যম। এখন অনুদান নয়, আমি চাই উন্নত চিকিৎসা,’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চোখে গুলিবিদ্ধ মেহেদী হাসান ওরফে শুভ (১৮)।

মেহেদী হাসান কুমিল্লা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী। ১৭ জুলাই কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার কোটবাড়ী এলাকায় পুলিশের গুলিতে আহত হন তিনি। ছররা গুলি লাগে তার বুক, চোখ ও মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে।

মেহেদীর বাবা কুমিল্লার লালমাই উপজেলার বেলঘর উত্তর ইউনিয়নের পালপাড়া গ্রামের বাসিন্দা লিটন মিয়া ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালক। চার সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় মেহেদী হাসান ছোটবেলা থেকেই মেধাবী। এসএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন। বাড়িতে একটি দোচালা টিনের ঘর ছাড়া তেমন কিছুই নেই।

১৭ জুলাই দুপুরের পর ছেলে গুলিবিদ্ধ শুনেই সঙ্গে সঙ্গে নিজের উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন ব্যাটারিচালিত রিকশাটি ৪৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন লিটন। সেই টাকায় হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরলেও মেহেদীকে সুস্থ করতে পারেননি। সম্ভব হয়নি ছেলের শরীর থেকে ছররা গুলি বের করা। এরই মধ্যে মেহেদীর চোখে পাঁচটি অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার অভাবে মেহেদী এখন দৃষ্টিহীন হওয়ার পথে।

লিটন মিয়া বলেন, রাজধানীর গ্রিন রোডের ভিশন আই হাসপাতালের চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচার শেষে তাকে বলেছেন, ছররা গুলিতে মেহেদীর ডান চোখের প্রায় ৯০ শতাংশ ও বাঁ চোখের অন্তত ৫০ শতাংশ অকেজো হয়ে পড়েছে। উন্নত চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হলে দৃষ্টিশক্তি কিছুটা ফিরে পেতে পারেন মেহেদী। তবে তাকে সারা জীবনই ছররা গুলি শরীরে বহন করতে হবে। ছেলের চিকিৎসার ব্যয় আর পরিবারের ভরণপোষণ যোগাতে অনেকটাই দিশাহারা তিনি।

বুধবার (৩০ অক্টোবর) বিকেলে পালপাড়া গ্রামের নিজ বাড়িতে কথা হয় মেহেদী হাসানের সঙ্গে। মেহেদী বলেন, ১৭ জুলাই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমিও মহাসড়ক অবরোধ করেছিলাম। কোটবাড়ী এলাকায় পদচারী–সেতুর পূর্ব পাশে অবস্থান করছিলাম। হঠাৎ পুলিশের গুলি লাগে আমার বুকে, রক্ত বের হচ্ছে দেখে আমি মহাসড়কে বসে পড়ি। পুলিশ আবারও গুলি করে। এবার আমার চোখ, মুখ ও মাথায় গুলি লাগে। এতে আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আমাকে কুমিল্লা শহরের দুটি বেসরকারি হাসপাতালে নেন। কিন্তু ঝামেলা মনে করে কেউ রাখেননি, পরে শিক্ষার্থীরা আমাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। ছাত্রলীগের হামলা ও গ্রেপ্তারের আতঙ্কে আমাকে ভর্তির ১২ ঘণ্টার মধ্যেই হাসপাতাল ছাড়তে হয়। এরপর বাবা আমাকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে আমার চোখের পাঁচটি অপারেশন হয়েছে। আমি এখন ওই হাসপাতালের একজন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে বাড়িতে আছি।

মেহেদী বলেন, আমাদের পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস ছিল বাবার অটোরিকশাটি। সেটিও আমার চিকিৎসার জন্য প্রথম দিনেই বিক্রি করে দিয়েছেন বাবা। এরপর থেকে বাবার আয় বন্ধ। আমার চিকিৎসার জন্য ছোটাছুটি করতে গিয়ে বাবা অন্য কিছু করতেও পারছেন না। তবে আহত হওয়ার পরপরই আন্দোলনে অংশ নেওয়া কিছু ব্যক্তি আমাকে আর্থিক সহায়তা করেছেন। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকেও চিকিৎসা বাবদ কিছু আর্থিক সহায়তা পেয়েছি। আন্দোলনের কারণে আমি দৃষ্টিশক্তি প্রায় হারিয়েছি। বাবা হারিয়েছেন উপার্জনের মাধ্যম। আমার পরিবারের হাল ধরার স্বপ্ন শেষ। চোখসহ পুরো শরীরে শতাধিক ছররা গুলি নিয়ে প্রতিনিয়ত যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছি। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের হয়ে কেউ কোনো সহযোগিতা করেননি। তবে সরকারের কাছে আমি কোনো অনুদানও চাই না। আমি চাই, এই সরকার আমিসহ সব আহত শিক্ষার্থীর উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করুক। আমাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সহায়তা করুক। আহত ব্যক্তিদের সুস্থতা সাপেক্ষে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হোক। আর আমার যেন সেমিস্টার ড্রপ না হয়, লেখাপড়াটা আমি শেষ করতে চাই।

মেহেদীর বাবা লিটন মিয়া বলেন, জুলাইয়ের ১৭ তারিখ আমার ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়েছে শুনে ব্যাটারিচালিত রিকশাটা বিক্রি করে দিয়েছি। কিন্তু এই টাকা দিয়া ছেলেটার চিকিৎসার কিছুই হয়নি। এই সরকারের কাছে বেশি কিছু চাই না, আমার ছেলেটার ভালো চিকিৎসা, শিক্ষা আর কাজের একটা ব্যবস্থা চাই। আমি অটো চালিয়ে যা পেতাম, তা দিয়ে ঘরের খরচ ও সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ চালাতাম। এখন যদি কোনোভাবে একটা ব্যাটারিচালিত রিকশা কিনতে পারতাম, তাইলে পরিবার নিয়ে চলতে পারতাম।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ব্রিটিশ কারিকুলামে পড়েও হাফেজ হয় যে স্কুলের শিক্ষার্থীরা

সরকারকে নির্বাচন কার্যক্রম দৃশ্যমান করা দরকার : খেলাফত মজলিস

রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরে যাওয়াই একমাত্র সমাধান : অস্ট্রেলিয়ান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

কোটি টাকা বেতনের ক্রিকেটারদের ব্যর্থতা ঢাকা পড়েছে মেয়েদের সফলতায়!

সন্ধ্যায় প্রকাশ হতে পারে প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের ফল

চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলামের ইন্তেকাল

‘জামায়াতের সঙ্গে মহাঐক্য চাই’

বাঘিনীদের মেহজাবীনের শুভেচ্ছা

সাবেক ভূমিমন্ত্রীর অর্থ পাচারের অনুসন্ধানে সিআইডি

কিশোর-তরুণদের সুরক্ষায় মেডিকেল স্টুডেন্ট সোসাইটির বিবৃতি

১০

ছাদখোলা বাসে চ্যাম্পিয়নদের যাত্রা শুরু

১১

আইফোনের জন্য খালা ও ভাইকে খুন

১২

ক্লান্তি-অবসাদে ভুগছেন ইসরায়েলের রিজার্ভ সেনারা

১৩

চীন সফরে যাচ্ছেন বিএনপির ৪ নেতা

১৪

মালয়েশিয়ায় ভবন থেকে পড়ে বাংলাদেশির মৃত্যু

১৫

চট্টগ্রামে চিন্ময় ব্রহ্মচারীসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা

১৬

ঢাকা উত্তর সিটির শ্রমিক পদের নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত

১৭

পুকুর থেকে নারী ও শিশুর মরদেহ উদ্ধার

১৮

আজ রাতে দেশে ফিরছেন আরও ৫২ লেবানন প্রবাসী

১৯

শেখ হাসিনার ভাতিজা মঈন রিমান্ড শেষে কারাগারে

২০
X