ঝিনাইদহে অনলাইনে কাজ দেওয়ার নামে শিক্ষার্থী ও বেকার যুবকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত ওই ব্যক্তির নাম আব্দুল গাফ্ফার। সাত শতাধিক শিক্ষার্থী ও যুবকের কাছ থেকে এ টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেছেন বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।
আব্দুল গাফ্ফারের খোঁজে গত রোববার (২৭ অক্টোবর) তার বাড়ি ঘেরাও করে কয়েকশ ভুক্তভোগী। তবে তাকে না পেয়ে পরে প্রশাসনের দ্বারস্ত হন তারা। দ্রুত তাকে আইনের আওতায় আনার দাবিও জানিয়েছেন। গাফ্ফার সদর উপজেলার হলিধানী ইউনিয়নের বেড়াদি গ্রামের বাসিন্দা।
জুনায়েদ আহমেদ নামে ভুক্তভোগী এক যুবক বলেন, টাকা নেওয়ার প্রমাণ তাদের কাছে রয়েছে। সজল নামে আরেক ভুক্তভোগীর ভাষ্য, এ ঘটনায় গত রোববার তারা পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তারা বলছেন, একটি ব্যাংকের হিসাব নম্বরে টাকা জমা দিয়েছেন। এটি আব্দুল গাফ্ফারের নামে। তবে এ হিসাব নম্বরে লেনদেনের বিষয়ে জানতে চাইলে তথ্য দিতে রাজি হননি সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা।
নয়ন ইসলাম নামে হরিণাকুণ্ডুর কাপাশহাটিয়া গ্রামের ভুক্তভোগী এক যুবকের ভাষ্য, আট মাস আগে তিনি বন্ধুদের কাছে জেনে এসকে আইটি ইনস্টিটিউট নামে একটি ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপের সদস্য হন। সেখানে প্রথমে ১৬ হাজার এবং পরে পেপার মেম্বারশিপ পেতে আরও ১ লাখ ১০ হাজার টাকা জমা দেন। এ টাকা তিনি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে জমা দিয়েছেন। তিনি ছাড়াও শত শত শিক্ষার্থী ও যুবক তার প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে অন্তত ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে দাবি এ যুবকের। এর মধ্যে কয়েকজন ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা তুলতে পেরেছেন বলে জানান নয়ন। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, প্রতারণার সঙ্গে আব্দুল গাফ্ফারের পরিবারের একাধিক সদস্য জড়িত। ইতোমধ্যে বাড়ি থেকে পালিয়েছেন তার ভাই প্রান্ত।
মেহেদী হাসান নামে আরেক শিক্ষার্থী জানান, তিনি স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছেন। গাফ্ফার আগে দুবাই ছিলেন। দেশে ফিরে এলাকার যুবকদের ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপে বিনিয়োগের জন্য প্রলুব্ধ করেন। ওয়েবসাইটের সদস্য হলে দিনে ৬ ডলার আয় করা যাবে বলে তাদের জানানো হয়। সদস্য হতে ১৬ হাজার ৫০০ ও চেকার মেম্বারশিপ নিতে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা লগ্নি করতে হবে। এতে প্রতিদিন ১২ ডলার আয়ের প্রলোভন দেখান তিনি।
যদি কেউ পাঁচজন সদস্য বানাতে পারেন, তাহলে আরও বেশি আয় করতে পারবেন বলেও তাদের জানানো হয়। নিয়মিত কাজ করলে ক্রমেই আয় বাড়বে। এমন প্রলোভনে সাগান্না, হলিধানী, কোলাসহ বিভিন্ন গ্রামের শত শত যুবক প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলেও জানান এ শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, ২০২২ সালে এসকে আইটি ডটকম নামে একটি ডোমেইন কেনা হয়। অনলাইনে আয়ের প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় সাড়ে চার হাজার মেম্বারশিপ বিক্রি করা হয়েছে। এর মধ্যে দুই হাজারের বেশি বাংলাদেশি রয়েছেন। ওয়েবসাইটের ঠিকানা দেওয়া হয়েছিল দুবাই। ভুক্তভোগীদের ধারণা, দুবাই থাকতেই গাফ্ফার এ প্রতারণা শুরু করেন।
মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) সকালে গাফ্ফারের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোন নম্বরও বন্ধ পাওয়া যায়। বাড়িতে ছিলেন না তার বড় ভাই প্রান্ত ইসলাম। এসময় তার মা রোকসানা বেগম বলেন, তিনি ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় বসবাস করেন। টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আপনারা মামলা করেন। মামলায় যদি জয়ী হন, তাহলে সব টাকা ফেরত দেব।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অবস) মুহাম্মদ মহিদুর রহমান কালবেলাকে বলেন, বিষয়টি তারা তদন্ত করে দেখবেন। সত্যতা পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন