ঘুষ না দেওয়ায় এক কর্মচারীর ঋণ না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের জুনিয়র অডিটর উজ্জল হোসেনের বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য দীর্ঘ একমাস ধরে ঋণের চেষ্টা করছিলেন ভেদরগঞ্জ উপজেলা জনস্বাস্থ্য অফিসে সরকারী লেবার করম আলী। কিন্তু ঋণ না পেয়ে জমি বিক্রি করে স্ত্রীর চিকিৎসা করাতে বাধ্য হন তিনি। পরে বিভাগীয় হিসাব নিয়ন্ত্রক বরাবর এ বিষয়ে আবেদন করলে এক মাসের এর বেশি সময় পর লোন দেন উজ্জল হোসেন। তবে ঘুষের জন্য স্ত্রীর চিকিৎসা বিলম্ব ও নিজের জমি বিক্রি করতে বাধ্য করায় সংশ্লিষ্টদের কাছে উজ্জল হোসেনের বিচার দাবি করেছেন ভুক্তভোগী করম আলী।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার বাসিন্দা উজ্জল হোসেন নিজের বাড়ির পাশে ভেদরগঞ্জ উপজেলায় নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই অফিসের সকল ব্যাপারে দাপট দেখাতে শুরু করেন। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে পেনশন, অফিস বিল, সাধারণ তহবিলসহ সকল প্রকার বিল থেকে ৫ শতাংশ হারে ঘুষ নেওয়া শুরু করেন। উজ্জল হোসেন তার কর্মরত উপজেলা ভেদরগঞ্জ এম এ রেজা সরকারি কলেজের সাবেক ছাত্র হওয়ায় অফিস ঘিরে তৈরি করেন বেপরোয়া দালাল সিন্ডিকেট। যাদের ভয়ে কেউ তার অপকর্মের প্রতিবাদও করতে পারে না।
তারই ধারাবাহিকতায় গত ২২ আগস্ট ভেদরগঞ্জ উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসের লেবার করম আলী হিবাররক্ষণ অফিসে একটি লোনের জন্য আবেদন করেন। ক্যানসার আক্রান্ত স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য তার সাধারণ ভবিষ্যৎ তহবিল থেকে এ লোনের আবেদন করেছিলেন তিনি। তবে দিনের পর দিন কোনো কারণ ছাড়াই লোনটি দিতে গড়িমসি করেন জুনিয়র অফিসার উজ্জল হোসেন। পরে বাধ্য হয়ে করম আলী এ বিষয়ে তার অফিসের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী ও অফিসের হেড ক্লার্ক রফিক মিয়াকে অবগত করেন। এ সময় বিলটি পাস করতে ১০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন জুনিয়র অডিটর উজ্জল হোসেন।
ভুক্তভোগী করম আলী বলেন, আমি জনস্বাস্থ্য অফিসে একজন সাধারণ লেবার হিসেবে কর্মরত আছি। আমার স্ত্রীর চিকিৎসার টাকা থেকেও উজ্জল হোসেন ১০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করে। ঘুষের জন্য আমার স্ত্রীর চিকিৎসা ১ মাস পিছিয়েছে। পরে আমি বাধ্য হয়ে জমি বিক্রি করে স্ত্রীর চিকিৎসা করিয়েছি। আমি তার বিচার চাই।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসের হেডক্লার্ক রফিক মিয়া বলেন, চিকিৎসার কথা শুনেও আমরা বিলটির জন্য সুপারিশ করেছিলাম। ১০ হাজার টাকার জন্য এতদিন লোনটি আটকে রাখায় করম আলী মিয়া জমি বিক্রি ফেলেছে।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী শমেস আলী কালবেলাকে বলেন, করম আলীর স্ত্রীর অসুস্থতার কথা শুনে আমিও লোনটি দ্রুত দেওয়ার জন্য অডিটর উজ্জলের কাছে সুপারিশ করেছিলাম।
এ বিষয়ে উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের জুনিয়র অডিটর উজ্জল হোসেন বলেন, আমি তার কাছে ১০ হাজার টাকা ঘুষ চেয়েছি তার কোনো প্রমাণ আছে? সব মিথ্যা কথা। তাহলে ঋণ দিতে এত দেরি কেন, এমন প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি উজ্জল হোসেন।
তবে উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ঘুষ চাওয়ার এ বিষয়ে আমার জানা নেই। যদি এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে থাকে আমি তদন্ত করে দেখব।
মন্তব্য করুন