সড়ক ও জনপথ এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড পাবনার চাটমোহরে গুমানী নদীর পাড়ে ‘আত্রাই নদী’ লিখে সাইনবোর্ড স্থাপন করেছে। এর আগে বরাবরই পানি উন্নয়ন বোর্ড তাদের সাইনবোর্ডে নদীটির নাম ‘গুমানী’ লিখেছে। কয়েক বছর আগে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর চাটমোহরের বওশা এলাকায় গুমানী নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ করে।
সেতুর নাম ফলকে তারা লেখে চাটমোহর উপজেলার আত্রাই নদীর ওপর ‘আত্রাই সেতু’। জুলাই আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত সরকার প্রধান শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালীন ২০১৮ সালের ১৪ জুলাই সেতুটি উদ্বোধন করেন।
মূলত চাটমোহরের মধ্য দিয়ে আত্রাই নামের কোনো নদী প্রবাহিত হয়নি। সড়ক ও জনপথের ফলকে নদীটির নাম ভুল লিপিবদ্ধ হওয়ায় এবং সেই ফলকে উদ্বোধক হিসেবে শেখ হাসিনার নাম থাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিউৎসাহী কর্মকর্তারা সেটি অনুসরণ করে তাদের নতুন সাইনবোর্ডে নদীটির নাম ‘আত্রাই নদী’ লেখে। ফলে শতশত বছর ধরে প্রবাহিত মানচিত্রে স্থান পাওয়া গুমানী নদী তার নাম হারাতে বসেছে।
সড়ক ও জনপথ এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের এরকম ভুলে ক্ষোভে ফুঁসছেন গুমানী নদী পাড়ের মানুষ। নতুন প্রজন্ম এখন ভুল নামে নদীটিকে চিনছেন। এটি নিছক ভুল নাকি এর পেছনে কোনো অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে তা খতিয়ে দেখার দাবি তুলছেন নদী পাড়ের বাসিন্দারা। আত্রাই নদী লেখা সাইনবোর্ড ও নামফলক অপসারণ করে গুমানী নদী লেখা সাইনবোর্ড ও নামফলক স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নাটোরের গুরুদাসপুরের চাঁচকৈড় বাঁশ হাঁটা এলাকায় আত্রাই নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে নন্দকুজা নদী। আত্রাই ও নন্দকুজার মিলিত স্রোত গুমানী নামে প্রবাহিত হয়েছে ভাটির দিকে। নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ২২ কিলোমিটার। চাটমোহরের ছাইকোলা ইউনিয়ন সদরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বিলচলন ও নিমাইচড়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বওশার ভাটিতে সেনগ্রামের ত্রিমোহনীতে নদীটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে। ভাটিতে গিয়ে এ দুই ভাগ মিলিত হয়ে যমুনায় পড়েছে।
চাটমোহর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএমআই অধ্যক্ষ আব্দুর রহিম কালু জানান, ছোটবেলা থেকে জেনে এসেছি এটি গুমানী নদী। মানচিত্রে এ নদীর নাম গুমানী লেখা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাইনবোর্ডেও নদীর নাম লেখা ছিল ‘গুমানী’। হঠাৎ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড কেন নদীটিকে আত্রাই নদী নামে অভিহিত করছে, তা বোধগম্য নয়।
ছাইকোলা গ্রামের হারুন অর রশীদ জানান, ছোটবেলা থেকে এ নদীটিকে গুমানী নদী বলে জানি। হঠাৎ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং সড়ক ও জনপথ কেন নদীটির নাম পরিবর্তন করল বুঝতে পারছি না। যে নদীর সঙ্গে আমাদের হাজার স্মৃতি জড়িত, সেই নদীর নাম বদলিয়ে সাইনবোর্ড স্থাপন করা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। চলনবিল রক্ষা আন্দোলন এবং বড়াল রক্ষা আন্দোলনের সদস্য সচিব এস এম মিজানুর রহমান জানান, ‘গুমানী নদী’ নাম খচিত সাইনবোর্ড অপসারণ করে তদস্থলে ‘আত্রাই নদী’ লেখা সাইনবোর্ড স্থাপনে সংশ্লিষ্টদের দুরভীসন্ধি বা অজ্ঞতা আছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং সড়ক ও জনপথের কর্মকর্তাদের নদীর নাম বদলানোর এখতিয়ার নেই। শতশত বছর ধরে বয়ে চলা গুমানী নদী রাতারাতি আত্রাই নদী হয়ে যাবে—এটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর পাবনার নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল মনসুর আহমেদ কয়েকমাস পূর্বে খোঁজ নিয়ে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানালেও তিনি কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগেই ৫ আগস্ট উত্তেজিত জনতা শেখ হাসিনার নামাঙ্কিত ফলকটি ভেঙে ফেলে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড পাবনার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আশ্বাস দিলেও ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি।
নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী জানান, আমি নতুন এসেছি। তবে এটি গুমানী নদী। কর্মকর্তারা ভুল করে থাকতে পারেন।
মন্তব্য করুন