বকেয়া মজুরির দাবিতে সিলেট নগরীর আম্বরখানা এলাকায় ওসমানী বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন এনটিসির মালিকানাধীন লাক্কাতুরা চা শ্রমিকরা।
রোববার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে প্রায় দুই ঘণ্টা অবরোধ করে রাখায় গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে দীর্ঘ যানজট দেখা দেয়।
পরে দুপুর ২টার দিকে বকেয়া পরিশোধে দুই দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন শ্রমিকেরা। তারা জানান, দুই দিনের মধ্যে বকেয়া মজুরি না দিলে লাগাতার আন্দোলনে নামবেন তারা। আল্টিমেটাম চলাকালে কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে।
জানা যায়, গত ৬ সপ্তাহ ধরে মজুরি পাচ্ছেন না সরকারের ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) মালিকানাধীন ১৮টি চা বাগানের শ্রমিকরা। মজুরি না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। বকেয়া মজুরির দাবিতে লাগাতার আন্দোলনে নেমেছেন শ্রমিকরা। আন্দোলনের কারণে ৭ দিন ধরে অচল হয়ে পড়েছে সরকারি মালিকানাধীন ১৮টি চা বাগান। বন্ধ রয়েছে এসব বাগানের উৎপাদন।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ন্যাশনাল টি কোম্পানির তৎকালীন সব পরিচালকরা পদত্যাগ করেন। এতে কোম্পানিতে অচলাবস্থা দেখা দেয়। বন্ধ হয়ে পড়ে কোম্পানির সব বাগানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা ও মজুরি। এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন বাগান শ্রমিকরা। মাত্র ১৭৮ টাকা দৈনিক মজুরিতে কাজ করা শ্রমিকরা ৬ সপ্তাহ ধরে মজুরি না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
বকেয়া মজুরির দাবিতে গত সপ্তাহ থেকে লাগাতার আন্দোলনে নেমেছেন এনটিসির মালিকানাধীন বাগানগুলোর শ্রমিকরা। সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে একযোগে আন্দোলন করছেন তারা।
সিলেটে এনটিসির মালিকানাধীন চা বাগানগুলো হলো লাক্কাতুরা, দলদলি ও কেওয়াছড়া চা বাগান। দেশের ছোট-বড় মিলিয়ে এনটিসির ১৮টি চা বাগান রয়েছে। এসব বাগানে লক্ষাধিক শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন। এই সবগুলো বাগানেই বকেয়া মজুরির দাবিতে কাজ বন্ধ রেখে আন্দোলনে নেমেছেন শ্রমিকরা।
আন্দোলনকারী শ্রমিকরা জানান, গত দুর্গাপূজার আগ থেকেই তাদের মজুরি ও বোনাসের দাবিতে আন্দোলন চলছে। আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পূজার সময়ে বোনাস প্রদান করলেও দেড় মাসের মজুরি বকেয়া রয়ে গেছে।
সিলেটের দলদলি চা বাগানের শ্রমিক সজিব মুন্ডা বলেন, যে টাকা মজুরি পাই, তা দিয়ে সংসারই চলে না। কোনো রকমে চালাতে হয়। এরমধ্যে দেড় মাস ধরে মজুরি বন্ধ থাকলে আমরা না খেয়ে বাঁচবো কী করে? দোকানে বাকির টাকার অংশ বড় হচ্ছে। এখন দোকানদারও বাকি দিতে চায় না। ফলে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি।
লাক্কাতুরা বাগানের আন্দোলনকারী শ্রমিকরা জানান, আন্দোলনের শুরুতে প্রথমে তারা সিলেটের জেলা প্রশাসকের কাছে বকেয়া মজুরির দাবিতে স্মারকলিপি দেন। এরপর জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে প্রত্যেক শ্রমিক পরিবারকে ২০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া এ পর্যন্ত আর কোনো সাহায্য পাননি তারা।
রোববারের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে দুদিনের আল্টিমেটাম প্রদান করেন চা শ্রমিক ইউনিয়নের সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা। তিনি নিজেও এনটিসির মালিকানাধীন লাক্কাতুরা চা বাগানের শ্রমিক। রাজু বলেন, আমাদের দেড় মাসের মজুরি বকেয়া পড়ে আছে। মজুরি না পেয়ে লক্ষাধিক শ্রমিক মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
তিনি বলেন, কে সরকারে আসলো বা গেল, তা নিয়ে নিরীহ চা শ্রমিকদের কিছু আসে যায় না। আমরা কোনো রাজনীতিতে নেই। আমরা কেবল আমাদের মজুরি চাই।
এ ব্যাপারে লাক্কাতুরা চা বাগানের ব্যবস্থাপক আক্তার শহিদ কালবেলাকে বলেন, শ্রমিকদের মতো আমরা নিজেরাও সমস্যায় আছি। আমাদেরও বেতন বন্ধ হয়ে আছে। তবে শুনেছি শিগগিরই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
মন্তব্য করুন