দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়েই নারায়ণগঞ্জ থেকে মুন্সীগঞ্জসহ পাঁচটি রুটে সানকেন ডেকের ৩১টি যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করছে। এই লঞ্চগুলো অনেক আগেই বিশেষজ্ঞরা ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছেন। তবু বিশেষ ব্যবস্থায় লঞ্চমালিকরা বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কাছ থেকে এসব লঞ্চ চলাচলের অনুমোদন বাড়িয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, ২০২২ সালের ২০ মার্চে শীতলক্ষ্যা নদীতে কার্গো জাহাজের ধাক্কায় এম এল আফসার উদ্দিন যাত্রীবাহী লঞ্চ ডুবে ১০ জনের মৃত্যু হয়। ডুবে যাওয়া লঞ্চটি সানকেন ডেক মডেলের লঞ্চ ছিল। এরপর থেকে সানকেন ডেকের লঞ্চগুলো ঝুঁকিপূর্ণ আখ্যা দিয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে চলাচল বন্ধ করে দেয় বিআইডব্লিউটিএ। তবে এর কিছুদিন পর যাত্রী দুর্ভোগসহ সার্বিক দিক বিবেচনা করে সেই লঞ্চগুলো হাইডেক মডেলে উন্নীতকরণের শর্তসাপেক্ষে লঞ্চগুলা চালু করার অনুমতি দেওয়া হয়। তবে সানকেন ডেকের সেই লঞ্চগুলো হাইডেক মডেলে উন্নীতকরণের শর্ত আজও মানা হয়নি।
বিআইডব্লিউটিএর নারায়ণগঞ্জ জেলা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালে লঞ্চ দুর্ঘটনার পরে সানকেন ডেকের লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর ওই বছরের ২৪ এপ্রিল ১৮টি, ৩০ এপ্রিল চারটি ও ১৪ জুন ১০টিসহ মোট ৩২টি সানকেন ডেকের লঞ্চ চালুর অনুমতি দেওয়া হয়। তবে এর মধ্যে একটি লঞ্চ বিক্রি করে দিয়েছে মালিকপক্ষ। এ ছাড়া আরও তিন লঞ্চের হাইডেক বিশিষ্ট হওয়ায় তা চলাচলে কোনো বাধা ছিল না। সব মিলিয়ে এখন ৩৪টি লঞ্চ চলাচল করছে।
মাত্র কয়েক বছর আগেও নারায়ণগঞ্জ থেকে পাঁচটি রুটে মোট ৭০টি লঞ্চ চলাচল করত। বর্তমানে মাত্র ৩৪টি লঞ্চ চলাচল করছে। এর মধ্যে ৩১টি লঞ্চ ঝুঁকিপূর্ণ। নারায়ণগঞ্জ-চাঁদপুর রুটে ১৬টি, নারায়ণগঞ্জ-মতলব রুটে পাঁচটি, নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জ রুটে সাতটি, নারায়ণগঞ্জ-রামচন্দ্রপুর রুটে দুটি, নারায়ণগঞ্জ-নড়িয়া রুটে তিনটি ও ঈদগাহ ফেরিঘাট রুটে একটি লঞ্চ চলাচল করছে।
যাত্রীরা বলছেন, লঞ্চগুলো অনেক ছোট হওয়ায় বেশ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। এতে করে মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তবে এসব দেখার যেন কেউ নেই। লঞ্চ মালিকপক্ষ ওপর মহলকে ম্যানেজ করে ঝুঁকিপূর্ণ লঞ্চ দিয়েই যাত্রীদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে। যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানান যাত্রীরা।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্র বলছে, শুরুতে সানকেন ডেক থেকে এক বছরের মধ্যে হাইডেকে রূপান্তরের শর্তে মালিকদের লঞ্চ চলাচলের অনুমতি দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু দুই বছরেও মালিকরা সেই শর্ত পূরণ করেননি। এখন নতুন করে ফের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে।
তবে সানকেন ডেকের লঞ্চগুলো ঝুঁকিপূর্ণ মানতে নারাজ বাংলাদেশ নৌপরিবহন (যাত্রী) সংস্থা নারায়ণগঞ্জ জোনের সভাপতি বদিউজ্জামান বাদল। তিনি বলেন, এসব লঞ্চ চলাচল অনিরাপদ তা ঠিক নয়। আজ থেকে ৫০-৬০ বছর আগে এসব সানকেন ডেকের লঞ্চ দিয়ে যাত্রী পারাপার করা হতো। এখন কেন সেটা ঝুঁকিপূর্ণ হবে। তবে বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে লঞ্চগুলো হাইডেক করার নির্দেশনা দিলেও ডিজি শিপিং আমাদের প্ল্যান দিচ্ছে না। ফলে আমরা এই লঞ্চগুলোকে হাইডেকে উন্নীত করতে পারছি না।
বিআইডব্লিউটিএর নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের উপপরিচালক (নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক) বাবু লাল বৈদ্য সানকেন ডেকের লঞ্চ চলাচল প্রসঙ্গে কালবেলাকে বলেন, দুই বছর আগে লঞ্চ দুর্ঘটনার পরে ঝুঁকিপূর্ণ আখ্যা দিয়ে এসব লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে এক বছরের মধ্যে এসব লঞ্চ হাইডেকে উন্নীত করার শর্তে চলাচল করার অনুমতি দেওয়া হয়। আগামী ৩০ জুন ২০২৫ পর্যন্ত এই অনুমোদনের মেয়াদ রয়েছে।
মন্তব্য করুন