টানেল দেখাতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে চট্টগ্রামের আনোয়ারার দেয়াং পাহাড়ে নিয়ে স্ত্রীকে আমেনা বেগমকে (৩৫) হত্যা করে করে আরব আমিরাতে পালিয়ে গেছেন স্বামী ইয়াসিন আরাফাত। স্ত্রীকে বেড়ানোর কথা বলে চট্টগ্রামের আনোয়ারার দেয়াং পাহাড়ে নিয়ে যান স্বামী ইয়াসিন আরাফাত। সেখানে স্বামী ইয়াসিনের এক পুলিশ বন্ধুসহ চারজন মিলে আমেনাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। পরে দুবাইয়ে পালিয়ে যান ইয়াসিন আরাফাত।
হত্যায় জড়িত সন্দেহে দুই আসামিকে গ্রেপ্তারের পর রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
গ্রেপ্তার দুজন হলেন, নিহত আমেনার স্বামীর বন্ধু মো. নাহিদ ও মো. ইরফান। এর মধ্যে ইরফান রাঙামাটি জেলায় কনস্টেবল পদে কর্মরত ছিলেন। ২১ অক্টোবরের পর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
বুধবার (২৩ অক্টোবর) চট্টগ্রাম জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জবানবন্দি শেষে দুই আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর আগে তাদের খাগড়াছড়ি ও বাঘাইছড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই।
পুলিশ সূত্রে জানায়, গত ৩ অক্টোবর দুপুরে আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নের চায়না ইকোনমিক জোন কার্যালয়ের পাশে পরিত্যক্ত একটি ইটভাটা থেকে গৃহবধূ আমেনার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ সময় মরদেহের কিছু অংশ শেয়াল বা কুকুরে খেয়ে ফেলায় এবং পঁচে যাওয়ায় পরিচয় শনাক্ত করা যাচ্ছিল না। এ অবস্থায় পিবিআইয়ের ক্রাইম সিন ইউনিটকে পরিচয় শনাক্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
পুলিশ সূত্রে আরও জানা গেছে, একদিনের মাথায় পরিচয় শনাক্তের পর পিবিআই জানায়, উদ্ধার করা মরদেহটি কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার নাগেরকান্দি গ্রামের বাসিন্দা কামাল উদ্দিনের মেয়ে আমেনা বেগমের। দুবাই প্রবাসী কুমিল্লার বাসিন্দা ইয়াসিন আরাফাতের সঙ্গে তার দ্বিতীয় বিয়ে হয়। সেই সংসারে একটি সন্তান রয়েছে। তার আগের সংসারেও দুই সন্তান ছিল। কিন্তু ইয়াসিনের পরিবার আমেনাকে মেনে নেয়নি। এ কারণে স্ত্রীকে ইয়াছিন নগরের বাকলিয়া তক্তারপুল এলাকায় ভাড়া বাসায় রাখতেন। ইয়াসির আরব আমিরাত প্রবাসী। স্ত্রীকে হত্যার কিছুদিন আগে তিনি দেশে আসেন। স্ত্রী আমেনাকে না জানিয়ে আরেকটি বিয়ে করেন তিনি। পরে সেটি আমেনা জানতে পারেন। বিষয়টি নিয়ে স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য চলছিল।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, জবানবন্দিতে আসামিরা উল্লেখ করেন, গত ৩০ সেপ্টেম্বর আমেনার স্বামী ইয়াসিন আরাফাত ফোন করে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের বন্ধু নাহিদকে জানান, সে দুবাই থেকে আসছে, পার্টি করবে। পরে ইয়াসিনের সঙ্গে আরেক বন্ধু ইরফানসহ আগ্রাবাদে আসে। সেখান থেকে রাতে আনোয়ারায় ইরফানের বাড়িতে গিয়ে নেশা করেন তিন বন্ধু। ১ অক্টোবর রাত ১২টার দিকে ইয়াসিনের স্ত্রী আমেনাকে নিয়ে আবারও ইরফানের বাসায় ফিরে যান তারা। পরে চারজন মিলে এক সঙ্গে নেশা করেন। রাত ৩টার দিকে তারা পরিকল্পনা করেন গাড়ি নিয়ে টানেলে ঘুরতে বের হবেন। বের হয়েই তারা সিদ্ধান্ত নেন পাহাড়ে বসে নেশা করবে। ইরফান তাদের দেয়াং পাহাড়ে নিয়ে যায়।
আরও জানা গেছে, সেখানে যাওয়ার পর ইয়াসিন ও তার স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়। একপর্যায়ে হঠাৎ ইরফান আমেনার পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। পরে ইয়াসিন ছুরি বের করে আমেনার পেটে ঢুকিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর আমেনার মৃত্যু হলে তিনজনে মিলে নিহতের কাপড় কেটে নালার মধ্যে লাশ ফেলে দেয়। তারপর সেখান থেকে তিনজন ইয়াসিনের খালাতো ভাইয়ের বাসায় গিয়ে যে যার মতো চলে যান। স্ত্রীকে খুন করে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নের চায়না ইকোনমিক জোন পাহাড় রেখে গত ৩ অক্টোবর ইয়াসিন পুনরায় দুবাই চলে যান।
নিহত আমেনার বাবা কামাল উদ্দিন বলেন, আমার মেয়েকে বেড়ানোর কথা বলে আনোয়ারায় নিয়ে যায় তার স্বামী। সেখানেই আমার মেয়েকে তার খুন করেছে মেয়ের স্বামীসহ তার বন্ধুরা। তাকে বিদেশ থেকে ধরে আনা হোক। ইয়াসিনের ফাঁসি চাই।
আনোয়ারা থানার ওসি মো. মনির হোসেন বলেন, নিহত আমেনার বাবা কামাল উদ্দিন বাদী হয়ে আনোয়ারা থানায় মামলা করেছেন। পিবিআই দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে। বাকি আসামিদেরও গ্রেপ্তার করতে পিবিআই কাজ করছেন।
মন্তব্য করুন