বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে চোখ হারিয়ে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন আমির হামজা। এতে অভাব-অনটনে মানবেতর জীবন কাটছে তার পরিবারের। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার ছোট ভাগলা ইউনিয়ন পরিষদের নলডুবি গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল হকের ছেলে তিনি।
এইচএসসি পরীক্ষা শেষে পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে ঢাকায় গিয়েছিলেন তার পরিচিত এক ভাইয়ের ফ্যাক্টরিতে কাজ করতে। বৃদ্ধ বাবার পরই পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারীর থমকে গেছে অর্থনীতির চাকা। এদিকে ছেলের চোখে গুলিবিদ্ধের খবরে স্ট্রোক করে বিছানায় পড়ে আছেন বৃদ্ধ কৃষক বাবা।
জানা যায়, গত ১৮ জুলাই নিজ কর্মস্থল সাইনবোর্ড এলাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ ও বিজিবি গুলির শব্দে বাইরে গেলে চোখে গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে যান তিনি। হাসপাতালের বেড থেকেই জানতে পারেন সারা দেশে ১০ হাজার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। সে ভয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে চলে যান। বাড়িতে গিয়ে দুদিন ভালো থাকলেও চোখের যন্ত্রণায় ছটফট করলে পরে জাতীয় চক্ষু হাসপাতালে অপারেশন করা হয় তার। অপারেশন শেষে চিকিৎসক জানান, তিনি আর কখনই চোখে দেখতে পাবেন না।
সরেজমিনে শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) আমির হামজাকে দেখতে তার বাড়িতে গেলে তার মা মিনা বেগম কালবেলাকে বলেন, আমার ছেলেকে স্বৈরাচারী সরকারের বাহিনী দিয়ে গুলি করে একটা চোখ অন্ধ করে দিয়েছে। আমি ওই স্বৈরাচার সরকারের উপযুক্ত বিচার চাই। পাশাপাশি বর্তমান সরকারের কাছে আমার ছেলেটাকে ভালো একটা কর্মসংস্থানে কাজ দেওয়ার দাবি জানাই।
প্রতিবেশী সাকিরুন বেগম বলেন, আমির হামজা ভালো ছেলে। ঢাকায় কাজ করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে একটা চোখ অন্ধ হয়ে গেছে। ছেলেটা তিন মাস ধরে বাড়িতে পড়ে আছে।
এলাকাবাসী জানান, আমির হামজা ভদ্র ছেলে। পরিবারের অভাব-অনটনের জন্য লেখাপড়া শেষ করতে পারেনি। ছাত্র জনতার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে একটা চোখ অন্ধ হয়ে গেছে। এখন পরিবারের অবস্থা খুব খারাপ। আমরা সবাই সহযোগিতা করছি। যদি সরকারের পক্ষে থেকে কোনো সহযোগিতা পায় তাহলে পরিবার সচ্ছল হবে।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র কালবেলাকে বলেন, আমরা আন্দোলনে হতাহতদের তালিকা তৈরি করেছি। সেখানে তার নাম রয়েছে। চিকিৎসার পাশাপাশি যদি আর্থিক সাহায্য প্রয়োজন হয়। তাহলে দ্রুত সমাজসেবা থেকে তাকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে।
মন্তব্য করুন