ভোগান্তির আরেক নাম গাইবান্ধা জেলা রেজিস্ট্রার অফিস। এ অফিসে সেবা নিতে এলেই নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। প্রতিটি দপ্তরে ঘুষ দিয়েও মাসের পর মাস এই অফিসের বারান্দায় বসে থেকে সময় পার করছেন জেলার শত শত মানুষ। তবুও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত সেবা। এমন অভিযোগ সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষদের। অন্যদিকে দলিল লেখকদের অভিযোগ, বর্তমান খণ্ডকালীন অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত সদর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার মেহেদী হাসান ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ করেন না। শুধু ঘুষ দিলেই কাজ করেন, না দিলে করেন নানা টালবাহানা। এতে হয়রানি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
জানা যায়, গাইবান্ধা জেলায় নিয়মিত সদর সাব-রেজিস্ট্রার না থাকায় সেবা পাচ্ছেন না এখানকার জমির সেবাগ্রহীতারা। গাইবান্ধাবাসীর সেবা নিশ্চিতের জন্য ২০২২ সালের ১৩ নভেম্বর অতিরিক্ত দায়িত্ব পান সাব-রেজিস্ট্রার মেহেদী হাসান। তার কার্যকাল শেষ ছিল ২০২৩ সালের ২২ জুন। পরে তিনি আবার সদর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পান। তিনি সপ্তাহের পাঁচ দিনের মধ্যে তিন দিন সদরে ও দুদিন সাদুল্যাপুর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে খণ্ডকালীন দায়িত্ব পালন করেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সদরে নিয়মিত তিন দিনও অফিস করেন না এবং তিনি যখন ইচ্ছা তখন অফিসে যান। নিয়মিত সাব-রেজিস্ট্রার না থাকায় বেশিরভাগ সময় ভোগান্তিতে পড়েন জমির ক্রেতা-বিক্রেতারা।
এ ছাড়া দলিল রেজিস্ট্রির যাবতীয় ফি, কর, ট্যাক্স যথারীতি সোনালী ব্যাংক, এনআরসি ব্যাংকে পে-অর্ডারসহ সব শর্ত পূরণ করে জমি দলিল নিবন্ধন করার পরও দলিল সরবরাহ দিচ্ছেন না তিনি। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন সেবাগ্রহীতারা।
এদিকে, তার বিরুদ্ধে দলিল লেখকদের জিম্মি করে দলিল সম্পাদন করারও অভিযোগ রয়েছে। দলিল লেখকদের একটি চক্র, সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কিছু কর্মচারীর যোগসাজশে পে-অর্ডার জালিয়াতি করে এক দলিলের পে-অর্ডার আরেক দলিলে ব্যবহার করে রেজিস্ট্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে আঙুল ফুলে কলাগাছও হয়েছেন অনেকে। এসব নিয়ে বিভিন্ন সময় সচেতন মহল থেকে আন্দোলনও করেছেন সচেতন মানুষ ও দলিল লেখকরা।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, শুধু তিনি নন, এ অফিসের প্রতিটি দপ্তরে পিয়ন থেকে শুরু করে সব কর্মকর্তা-কর্মচারী ঘুষ ছাড়া সেবা দেন না। বিশেষ করে ভলিউম দেখার কথা বলেই ১৭০ টাকা থেকে শুরু করে যেমন খুশি তেমন অর্থ নিচ্ছেন এখানকার কর্মচারী-কর্মকর্তারা। তাদের সঙ্গে আবার ভাগাভাগি করে খাচ্ছেন নকলনবিশরাও। এমন অর্থ নেওয়ার নিয়ম না থাকলেও সাধারণ মানুষকে বাধ্য করে অর্থ নিচ্ছেন তারা। এ ছাড়া মাসের পর মাস সেবার নামে নানাভাবে হয়রানি করছেন এই রেজিস্ট্রার অফিস সংশ্লিষ্ট কর্মচারী ও কর্মকর্তারা।
দলিল লেখক কমিটির সাবেক সভাপতি রুবেল মল্লিক অভিযোগ করে জানান, ২০১৪ সাল থেকে নানা অনিয়মে চলছে গাইবান্ধা জেলা সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিস। পুরোনো অনেক দলিল এখনো সরকারের কোষাগারে জমা করেননি বর্তমান সাব-রেজিস্ট্রার মেহেদী হাসান। দলিল তুলতে গেলে আজ না কাল বলে সেবাগ্রহীতাদের বিদায় করেন তিনি। ১৫০৮/২১দ, ৪৮৩৭/২১দ, ৫২৩৫/২১দ, ২২১৮/১৪দ, ৯৯০০/১৬দ, ৯০৬৭/১৭দ, ৩২৪০/১৯দ, ৩২৪১/১৯দ, ৩২৪২/১৯দ নং দলিলসহ এমন হাজার হাজার দলিল জমা করেননি মেহেদী হাসান বলে অভিযোগ এই দলিল লেখকের।
আরেক দলিল লেখক বলেন, গত ২০২২ সালে সব থেকে বেশি দুর্নীতি হয়েছে এই রেজিস্ট্রার অফিসে। এমন নানা ভোগান্তির সমাধানে কেউ কোনো গুরুদায়িত্ব নেয় না বা দলিল লেখকদের নিয়ে কোনো সমস্যা সমাধানের বৈঠক হয় না। এতে করে সাময়িকভাবে দলিল লেখক কমিটিও স্থগিত রয়েছে। সেবা নিতে আসা বকুল মিয়া বলেন, প্রতিদিন আসি আর ঘুরে যাই। নিয়মিত সাব-রেজিস্ট্রার না থাকায় দলিলের কাজ সম্পন্ন হয় না। আরেক সেবাগ্রহীতা শাহজাহান আলী বলেন, দিনের পর দিন ঘুষ দিয়েও হয়রানি হতে হয়, তবুও সেবা পাই না। আমরা দুর্নীতিমুক্ত সেবা চাই।
দুর্নীতির বিষয়ে অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত সদর সাব-রেজিস্ট্রার মেহেদী হাসান প্রথমে কথা বলতে রাজি না হলেও পরে কালবেলাকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে, এসব ভুয়া ও বানোয়াট।
এ বিষয়ে জানতে জেলা সাব-রেজিস্ট্রার জহুরুল ইসলামের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও ফোন রিসিভ হয়নি।
মন্তব্য করুন