বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র প্রভাবে দিনাজপুরের খানসামায় রোপা আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি শাকসবজিসহ বিভিন্ন ধরনের রবিশস্যের বেশিরভাগ ক্ষেতই নষ্ট হয়ে গেছে। বুধবার (২৩ অক্টোবর) রাত থেকে হিমেল হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি শুরু হয়।
সরজমিনে বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) বিভিন্ন এলাকার আমন ধানের মাঠ ঘুরে দেখা যায়, বৃষ্টি ও ঝোড়ো বাতাসের কারণে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে শাকসবজিসহ বিভিন্ন ধরনের রবিশস্যের। বাতাসে নষ্ট হয়েছে মাঠের পাকা রোপা আমন ধানের। এদিকে এমন ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় কৃষকদের মাথায় হাত পড়েছে। ফলে অনেকটাই ক্ষতিসাধন হয়েছে বলেও জানান কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর উপজেলায় ১৩ হাজার ৭৬০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের আগাম জাতের ধানের আবাদ হয়েছে। এ পর্যন্ত ১৩৮০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান কর্তন হয়েছে। যার গড় ফলন ৬ দশমিক ৪৫ টন (ধানে)। যার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৬৭ হাজার ১৭০ টন। যা গত বছরের তুলনায় বেশি। উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্য আমন মৌসুমে কৃষককে সরকারি প্রণোদনা (বীজ ও সার) দেওয়া হয়েছে।
নেউলা গ্রামের কৃষক আমিনুল ইসলাম বলেন, কয়েক মাস ধরে যে অতিবৃষ্টি হলো এতে অনেক নিচু অঞ্চলের জমিতে ধানের চারা ডুবে গেছে। উঁচু জমিতে ধান ভালো হলেও ঘূর্ণিঝড় দানার কারণে ঝড়ে ধান গাছগুলো হেলে পড়েছে। আমার দেড় বিঘার ধান হেলে পড়েছে। ধানের শীষে যে দানা রয়েছে তা এখনো শক্ত হয়নি। অনেক ধান চিটা হয়ে যাবে। আর যে ফলন হওয়ার কথা ছিল তাও কমে যাবে।
গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষকগোলাম রব্বানী বলেন, চলতি মৌসুমে জমিতে তিন জাতের রোপা আমন ধান রোপণ করি। প্রথম দিকে পাকায় ধান গাছের ক্ষতি করলে পরে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় রোপা আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছিল। কয়েকদিন পর ধান কাটা শুরু করার কথা ছিল। প্রবল বাতাসে পাকা ধান নুয়ে পড়ছে এবং ঝরে পড়েছে অনেক ধান। এ ছাড়া পাকা ধান ক্ষেতে পানি জমে গেছে। এখন ধান কাটা যেমন কষ্টের তেমনি ধান কাটা শ্রমিকদের দিতে হবে দিগুণ মজুরি। প্রচুর ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ফসল নিয়ে এখন দুশ্চিন্তায় আছি।
কৃষক যতীন্দ্র নাথ জানান, তিনি বর্গা নিয়ে ৫০ শতাংশ জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন। ঝোড়ো হাওয়ায় ধান গাছগুলো নুয়ে পড়েছে। বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবার অনেক ভালো ফলন হয়। কিন্তু বৃষ্টির কারণে কাঙ্ক্ষিত ফসল ঘরে তোলা নিয়ে তিনি চিন্তিত।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে রোপা আমন ধানের তেমন ক্ষতি হয়নি। এতে উৎপাদনের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না এমনটাই জানান কৃষি অফিস।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইয়াসমিন আক্তার বলেন, ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে আমন ধানের তেমন ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। কৃষি বিভাগ সার্বক্ষণিক তৎপর রয়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি খুব শিগগিরই এই দুর্যোগ কেটে যাবে।
মন্তব্য করুন