বগুড়ার শেরপুরে কোটি কোটি টাকা মূল্যের দেবোত্তর সম্পত্তির সিংহভাগই বেদখল হয়ে গেছে। স্থানীয় প্রশাসনের দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহায়তায় পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতিসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এসব দেবোত্তর সম্পত্তি দখলে নিয়ে বহুতল ভবনসহ স্থায়ীভাবে স্থাপনা নির্মাণ করেছেন।
এমনকি জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে ব্যক্তি নামে আরএস রেকর্ড পেতে এরইমধ্যে বগুড়া জোনাল সেটেলমেন্ট কর্মকর্তার কাছে আবেদনও করা হয়েছে। অথচ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নামে জন্য এসব দেবোত্তর সম্পত্তি উৎসর্গ করা হয়েছে। তাই এসব সম্পত্তি উদ্ধারে বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় নেতারা।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, শেরপুর মৌজায় সাবেক ২০২৭ ও ২০৬৬ দাগে মোট ১ একর সাত শতক দেবোত্তর সম্পত্তি রয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকা। যার সিংহভাগই বেদখল হয়ে গেছে। এরমধ্যে ১০ শতক জমি দখলে নিয়েছেন পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি রেজাউল করিম মজনু। সেখানে তিনি স্থায়ী ভবন নির্মাণ করে বসবাস করে আসছেন। একইভাবে অন্যান্য প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও দেবোত্তর বেশিরভাগ জমিই দখলে নিয়েছেন।
তবে অভিযুক্তদের দাবি, বৈধ কাগজপত্র মূলেই এসব জমি ভোগদখল করে আসছেন। এই সম্পত্তির সেবায়েতগণের ওয়ারিশ ডা. সমীর কুমার দত্ত অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘ ৩৫ বছর চাকরির কারণে বিদেশে অবস্থান করতে হয়েছে। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে সংগঠক হওয়ার কারণে বাবা-চাচাসহ পরিবারের মোট চারজন সদস্যকে হত্যা করা হয়। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় বাড়ি-ঘর। সংসারের প্রয়োজনে বিদেশে অবস্থান করতে হয়। তাই নিজের জমিগুলো রেকর্ড করতে পারিনি। একইভাবে দেবোত্তর সম্পত্তিও দেখাশোনার সুযোগ পাইনি। এই সুযোগে আ.লীগ নেতা রেজাউল করিম মজনুসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিরা দেবোত্তর সম্পত্তি দখলে নিয়েছেন। পাশাপাাশি জাল-জালিয়াতির ভুয়া কাগজপত্র তৈরির মাধ্যমে নিজের নামে রেকর্ড পেতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। সেবায়েতগণের ওয়ারিশ হিসেবে বেদখল হয়ে যাওয়া এসব জমি উদ্ধারে সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
জানতে চাইলে বিশিষ্ট আইনজীবী অ্যাড. হাবিবুর রহমান বলেন, কোনো সম্পত্তি যা দেবোত্তর বা ব্রম্মত্তোর। সেটি সেবায়েত দ্বারা রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। কারণ এসব জমি ধর্মীয় উদ্দেশ্যে বা প্রতিষ্ঠানের জন্য উৎসর্গ করা হয়েছে। তাই এই সম্পত্তি কোনো ব্যক্তি মালিকানাধীন দখল এবং ভোগ করতে পারবে না। এমনকি এই সম্পত্তি সরকারও খাস জমি হিসেবে দখলে নিয়ে ইজারা বা বন্দোবস্ত দিলেও তা বেআইনি হবে। ধর্মীয় উদ্দেশে উৎসর্গ করা সম্পত্তি কেবল ধর্মীয় হিসেবেই ব্যবহার করা যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
শেরপুর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি নিমাই ঘোষ বলেন, দেবোত্তর সম্পত্তি বিক্রি বা হস্তান্তর করার কোনো সুযোগ নেই। অথচ আমাদের দেবোত্তর সম্পত্তির বেশিরভাগই বেদখল হয়ে গেছে। যা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। তাই এ জমিগুলো উদ্ধারের জোর দাবি জানান তিনি।
এদিকে বক্তব্য জানতে চাইলে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল করিম মজনু বলেন, কোনো দেবোত্তর সম্পত্তি দখল করিনি। সরকারের কাছ থেকে লিজ নেওয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকে ক্রয় করে সেখানে বসবাস করে আসছি। তাই তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো ভুয়া বলে আখ্যায়িত করেন তিনি।
মন্তব্য করুন