ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ মোকাবিলায় সাতক্ষীরার সরকারি কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগর ও আশাশুনির সরকারি কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করেছে জেলা প্রশাসক। এরইমধ্যে দুর্গত মানুষের পাশে থাকার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন।
জেলার ৮৮৭টি আশ্রয়ণকেন্দ্রের পাশাপাশি বিভিন্ন দ্বিতল মসজিদ, পাকা স্থাপনাকে বিকল্প আশ্রয়ণকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।
বুধবার (২৩ অক্টোবর) বিকেলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় জেলা প্রশাসক মো. মোস্তাক আহমেদ এ তথ্য জানান।
জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা শেষে সাতক্ষীরা উপকূলীয় এলাকায় ভারি বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা রয়েছে জানিয়ে জেলা প্রশাসক মো. মোস্তাক আহমেদ। তিনি বলেন, এরইমধ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের ঝড়ের পূর্বেই সংকেত অনুযায়ী মানুষকে নিরাপদে আশ্রয় কেন্দ্রে আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে প্রত্যেক ইউনিয়নে মেডিকেল টিম প্রস্তুতকরণ, পর্যাপ্ত শুকনো খাবার ও খাওয়ার পানি মজুত রাখা, দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে উদ্ধার কার্যক্রম চালানোর জন্য ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স ও স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, উপকূলের ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শ্যামনগর উপজেলায় ২ হাজার ৯৮০ জন এবং আশাশুনি উপজেলায় ১ হাজার ২০ জন সিপিপি সদস্য এবং রেডক্রিসেন্ট ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনকে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় শুরু হওয়ার পূর্বে প্রতিবন্ধী, বৃদ্ধ, শিশু ও গর্ভবতী নারীসহ ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তর এবং শিশু ও নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক বলেন, শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নে উদ্ধারকারী নৌযান হিসেবে স্পিডবোট, প্রয়োজনীয় সংখ্যক ইঞ্জিনচালিত নৌকা/ট্রলার এবং স্থলযান প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া সব উপজেলার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স টিমের সদস্যদের ঝড়ের পরে রাস্তায় গাছ পড়লে তা অপসারণে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও কর্মী বাহিনীসহ প্রস্তুত রাখতে হবে বলা হয়েছে।
সভায় জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে উপকূলের আশাশুনি, শ্যামনগর ও কালিগঞ্জে বেড়িবাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলো চিহ্নিত করে সংস্কারসহ পযাপ্ত জিও বালুর বস্তা প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে।
সাতক্ষীরার আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী বলেন, ঘূর্ণিঝড় দানার কারণে সাতক্ষীরায় দুই নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখি যেতে বলা হয়েছে। দুপুর ১২টা থেকে যে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে তা চলমান থাকবে।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) রাতে উপকূলী এলাকায় আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় দানা। তবে সাতক্ষীরা এলাকায় কতটা আঘাত হানবে তা এখন বলা সম্ভব হচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার উপকূলীয় এলাকার কৈখালী, গাবুরা, সোরা, লেবুবুনিয়া, নাপিতখালী, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনী, রমজাননগরসহ বিভিন্ন এলাকায় বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
একইভাবে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের কুড়িকাউনিয়া, হরিষখালী, চাকলা, বিছট, দয়ারঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায় বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
বেশ কিছুদিন আগে কপোতাক্ষ নদের পানি কুড়িকাউনিয়া ও খোলপেটুয়া নদীর পানি হরিষখালী ও বিছট এলাকায় বেড়িবাঁধ উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করায় এসব নদ-নদীর তীরবর্তী এলাকায় বসবাসকারী জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ঘূর্ণিঝড় দানা আঘাত হানার শঙ্কায় ফের চিন্তিত হয়ে পড়েছে শ্যামনগর ও আশাশুনির ভাঙন কবলিত এসব এলাকার মানুষ।
মন্তব্য করুন