এইচএসসি পরীক্ষার ঘোষিত ফলাফল নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। ফলাফল নিয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড প্রাঙ্গণে প্রতিদিন উত্তাপ ছড়াচ্ছে ফেল করা শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে শিক্ষা বোর্ডের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এক দফা দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড প্রাঙ্গণে অবস্থান নেন একদল শিক্ষার্থী। এসময় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীরা ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘আবু সাঈদের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’- এ রকম আরও নানা স্লোগান দেন।
সোমবার (২১ অক্টোবর) দুপুর আনুমানিক দুইটার দিকে শিক্ষা বোর্ডের মূল ফটকের তালা দেয়। তাদের বিক্ষোভে স্থবির হয় বোর্ড কার্যক্রম।
দেখা যায়, কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অবস্থান দেখা গেছে। বোর্ড প্রাঙ্গণে বিক্ষিপ্তভাবে ঘোরাফেরা করছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী। দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত তারা অবস্থান কর্মসূচি পালন করে যাবেন বলে জানিয়েছেন।
অন্যদিকে আন্দোলন ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে শিক্ষা বোর্ড প্রাঙ্গণে। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকটি টিম সেখানে অবস্থান করছে।
ফলাফলে বৈষম্য করা হয়েছে অভিযোগ করে গত বৃহস্পতিবার থেকে বোর্ড ঘেরাও কর্মসূচি শুরু করেন এইচএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীরা। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার বাদ দিয়ে শনিবার থেকে ফের আন্দোলন শুরু করেন তারা।
বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা জানান, ফলাফল নিয়ে তারা অসন্তুষ্ট। তাদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। উত্তরপত্র যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি। সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের নামে বৈষম্য করা হয়েছে। তাদের সব বিষয়ে পাস করিয়ে দিতে হবে।
বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা জানায়, ফলাফল নিয়ে তারা অসন্তুষ্ট। তাদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। উত্তরপত্র যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি। সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের নামে বৈষম্য করা হয়েছে। তাদের সব বিষয়ে পাস করিয়ে দিতে হবে।
ফাহাদ নামে এক শিক্ষার্থী কালবেলাকে জানায়, মাধ্যমিকের ফলাফল অনুযায়ী এইচএসসির ফলাফল দেওয়া হোক। আমাদের ইচ্ছে করেই ফেল করানো হয়েছে। আমরা কোনোভাবে এই ফলাফল মানি না। আমাদের সাবজেক্ট কীভাবে ম্যাপিং হয়েছে; সেই বিষয়ে জানতে চাই। কেননা পরীক্ষা দেওয়ার পরেও কীভাবে অনুপস্থিত আসে? আমরা এই রেজাল্ট মানি না। সিলেট বোর্ড আর মাদ্রাসা বোর্ডে মাত্র দুই বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে সবাইকে পাস করানো হয়েছে। অথচ চট্টগ্রাম বোর্ডে সঠিকভাবে খাতা মূল্যায়ন করা হয়নি। খাতা না কেটেই বোর্ড কর্তৃপক্ষ মনগড়া রেজাল্ট দিয়েছে। চট্টগ্রাম বোর্ডের ইংরেজি প্রশ্ন সহজ আসার পরেও তাদের গণহারে ইংরেজিতে ফেল করিয়ে দিয়েছে। এ ছাড়াও সিলেট বোর্ডে মাত্র দুই বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে সবাইকে পাস করানো হয়েছে অথচ চট্টগ্রাম বোর্ডে সঠিকভাবে খাতা মূল্যায়ন করা হয়নি। এসময় সঠিকভাবে সাবজেক্ট ম্যাপিং করা হয়নি।
জানা গেছে, গত ১৫ অক্টোবর এইচএসসির ফলাফল প্রকাশিত হয়। এবার চট্টগ্রামে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১ লাখ ৬ হাজার ২৯৮ জন। তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিল ১ লাখ ৫ হাজার ৪১৬ জন, পাস করে ৭৪ হাজার ১২৫ জন। পাসের হার ৭০ দশমিক ৭২ শতাংশ। ফেল করার পেছনে ‘সাবজেক্ট ম্যাপিং’ পদ্ধতিকে দুষছে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থী আহাদ জানায়, গত বৃহস্পতিবার আমরা আমাদের এক দফা দাবি জানিয়ে চেয়ারম্যান স্যার বরাবর স্মারকলিপি জমা দিয়েছি। সেদিন তিনি আমাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। তাই আজ আমরা সকাল থেকে এখানে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করছি। কিন্তু আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হচ্ছে না।
তবে শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম কালবেলাকে বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ফলাফল তৈরি করা হয়েছে। এখানে কারও বিষয়ে বৈষম্য করার সুযোগ নেই। শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ইতোমধ্যে জানানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষ পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।
মন্তব্য করুন