বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, কখনো জামায়াতে ইসলামী দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেলে মালিক হিসেবে নয়, সেবক হিসেবে কাজ করবে। বাংলাদেশকে একটি মানবিক দেশ হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
শনিবার (১৯ অক্টোবর) বিকেলে নওগাঁ শহরের নওজোয়ান মাঠে জামায়াতে ইসলামী নওগাঁ জেলার সদস্য (রুকন) সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের সম্পূর্ণ কৃতিত্ব মহান আল্লাহর। আর জমিনের কৃতিত্ব ১৮ কোটি জনতার। আর নেতৃত্বের কৃতিত্ব বাংলাদেশের যুবসমাজের।
তিনি বলেন, জনগণের সহযোগিতা ও সমর্থনের জন্য তাদের দুয়ারে দুয়ারে যাব এবং কৃতজ্ঞতা আদায় করার সুযোগ নেব। যারা অতীতে মালিক হয়েছেন তাদের পরিণতি চোখের সামনে আমরা দেখতে পেয়েছি। দূর অতীতেও দেখেছি, নিকট অতীতেও দেখেছি। এর থেকে সব রাজনৈতিক দলের শিক্ষা নেওয়া উচিত।
জামায়াতের আমির আরও বলেন, মানুষের সঙ্গে গাদ্দারি করলে, ধোঁকা দিলে, জলুম করলে, লুট করলে, অপরাধ করলে, ও ব্যাংকিং সেক্টর থেকে অর্থ লুট করলে কি হয় এর থেকে আমাদের সবার শিক্ষা নেওয়া উচিত। আশা করি আমরা সবাই শিক্ষা নেব। তাহলে আগামীতে আমাদের সন্তানরা যেজন্য জীবন দিয়েছে ও পুঙ্গত্ববরণ করেছে, তাদের আশা পূরণ হব। এ যাত্রায় আমরা আমাদের সাংবাদিক বন্ধুদের বিশেষ সহযোগিতা চাই। তারা যেন আমাদের সোজা-সাপ্টা কথাগুলো তুলে ধরে।
ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে শফিকুর রহমান বলেন, একটা কথা স্পষ্ট করতে চাই। যারা একটা জাতিকে টুকরো টুকরো করে তারা কোনো দিন জাতির মঙ্গল চায় না। এই বিভক্তি আর চলতে দেওয়া যায় না। দেশ ও জাতিকে সামানের দিকে এগিয়ে নিতে হবে, দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার পক্ষে জামায়াতে ইসলামী। আমরা মানুষকে মানুষের মর্যাদা দিতে চাই। আমরা দল ও ধর্মের ব্যবধান না করে মানুষকে দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
জামায়াতে ইসলামীকে বাংলাদেশের সবচাইতে মজলুম দল বলে উল্লেখ করে জামায়াতের আমির বলেন, সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে খুন, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অপরাধের একটা স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছিল আওয়ামী লীগ। আমাদের কলিজার টুকরা নেতৃত্বকে বিচারের নামে প্রহসন করে তারা হত্যা করেছে। আমাদের শত শত কর্মীকে হত্যা করেছে। অসংখ্য নেতাকর্মীকে গুম করেছে। ঘরবাড়ি ধ্বংস করেছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের সব জামায়াতে ইসলামীর কার্যালয় সিলগালা করেছে। আমাদের দলের নিববন্ধন অন্যায়ভাবে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। দিশাহারা হয়ে এ বছরের পয়লা আগস্ট আমাদের দলকে তারা নিষিদ্ধ করেছে। এই বিবেচনায় বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সবচাইতে মজলুম দল। এর চেয়ে মজলুম দল আর বাংলাদেশে নেই।
জুলাই আন্দোলনের কৃতিত্ব কারও একার নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এই কৃতিত্ব দেশের ১৮ কোটি মানুষের উল্লেখ করে জামায়াতের এ শীর্ষ নেতা বলেন, সাড়ে ১৫ বছর আগে এই আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল। সর্বশেষ জুলাই আন্দোলনে আমাদের সন্তানেরা বুকের তাজা রক্ত রাজপথে ঢেলে দিয়েছে। রাজপথে আমরা আমাদের সন্তানদের নামাজ আদায় করতে দেখেছি। এই আন্দোলন কোনো নির্দিষ্ট আদর্শের ছিল না। এই আন্দোলন মানুষের মুক্তির সংগ্রামের আন্দোলন ছিল।
ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, এই আন্দোলনের মূল কৃতিত্ব আল্লাহর। এই আন্দোলনকে বাস্তবায়ন করেছে আমাদের সন্তানরা। দেশের ১৮ কোটি মানুষ এ আন্দোলনের সঙ্গে ছিল। নির্দিষ্ট কোনো দলের ভিত্তিতে এই আন্দোলনকে বিভক্ত করতে চাই না। দেশের প্রত্যাশা পূরণ করতে তরুণরা যে দেশপ্রেম বুকে নিয়ে শহীদ হয়েছে, পুঙ্গত্ব বরণ করেছে তা পূরণ করার দায়িত্ব নিয়েছে বর্তমান সরকার। আমরা যারা রাজনীতিবিদ রয়েছি তাদেরও দায়িত্ব রয়েছে।
নওগাঁ রুকন সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জামায়াতে ইসলামী নওগাঁ জেলা শাখার আমির ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য খ ম আব্দুল রাকিব। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন- জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও রাজশাহী অঞ্চল পরিচালক অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দীন, রাজশাহী অঞ্চল সহকারী পরিচালক রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
মন্তব্য করুন