‘দেশে অনেক পুরাতন গণমাধ্যম ছিল, যারা দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকে ভূমিকা রাখতে পারেনি। কিন্তু কালবেলা মাথার ওপরে খড়গ, বুকে তাক করা বন্দুকের নল অথবা সাগর-রুনির মতো পরিণতি জেনেও সত্যকে সত্য এবং মিথ্যাকে মিথ্যা হিসেবেই প্রমাণিত করেছে। সেই সঙ্গে ২৪ এর ছাত্র-আন্দোলনে পেছন থেকে উৎসাহিত করেছে, সমর্থ জুগিয়েছে কালবেলা।’
বুধবার (১৬ অক্টোবর) রাজশাহী নগরীর একটি অভিজাত রেস্টুরেন্টে কালবেলার দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
বক্তারা বলেন, ‘কালবেলা এখন শিশু, সবেমাত্র দুই বছর পার করে তিনে পদার্পণ করেছে। শিশুরা হিতাহিত জ্ঞান রাখে না। আগুনে হাত পড়লে পুড়ে যাবে সেটি তারা বুঝতে পারে না, আগুনকে হাতে তুলে নেয়। কালবেলা বিগত দুই বছরে আগুন হাতে নিয়েই তাদের পথ চলেছে। অনেক অতি উৎসাহী মিডিয়া ছিল, যারা সত্যের পক্ষে ভূমিকা রাখতে পারেনি। সেই জায়গায় আমরা বলব, অনেক বয়জ্যেষ্ঠ মিডিয়া যা পারেনি কালবেলা তা করে দেখিয়ে দিয়েছে।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর। কালবেলার রাজশাহী বিভাগীয় ব্যুরোপ্রধান আমজাদ হোসেন শিমুলের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশা, সদস্য সচিব মামুন-অর-রশিদ মামুন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রাজশাহী মহানগরীর সেক্রেটারি ইমাজ উদ্দিন মণ্ডল, প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারি অধ্যাপক সরওয়ার জাহান পিন্স।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বলেন, কালবেলা দুই বছরে অনেক দূর এগিয়েছে। কালবেলার নিয়মিত আয়োজন থাকে ‘যত মত তত পথ, বাণিজ্য বেলা, দেশকাল, প্রয়োজন আছে, বিশ্ববেলা, তারাবেলা, যন্তরমন্তর, খেলা’ ইত্যাদি। টেকনোলজি বা আইসিটিতে কালবেলা একটি বড় ভূমিকা রেখেছে। আমি কালবেলার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি।
পবিত্র কুরআনের উদ্ধৃতি দিয়ে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, তোমরা সত্যকে মিথ্যার সঙ্গে মিশ্রিত কর না। এটি পত্রিকার ক্ষেত্রে যেমন সত্য তেমন প্রতিটি মানুষের জন্য অবশ্য করণীয়। আবার আরেক জায়গায় আছে, তোমরা জেনে-শুনে সত্যকে গোপন করো না। আমার মনে, কালবেলা সত্যের ওপরই আছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আরএমপি কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান বলেন, অনেক মিডিয়া ম্যাকিং সংবাদ পরিবেশন করে। কিন্তু সেই দিক থেকে কালবেলা আলাদা। কালবেলা সমসময়ই বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করে থাকে। আশা রাখব, কালবেলা এই ধারা ভবিষ্যতেও অব্যাহত রাখবে। আমার ফোনে কালবেলাসহ কয়েকটি প্রয়োজনীয় অ্যাপস ডাউনলোড করা আছে। প্রত্যেকদিন ঘুমানোর আগে কালবেলা অ্যাপসে ঢুকে আপডেট নিউজ দেখি।
অনুষ্ঠানে রাজশাহী মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মামুন-অর-রশিদ মামুন বলেন, ছাত্ররা এই স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটিয়েছে। এই কালবেলাও ছাত্র-শিশু। কালবেলাও মিডিয়াতে বিপ্লব ঘটিয়েছে। তাই আমি এই ‘শিশুকে’ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের সঙ্গে তুলনা করতে চাই। এজন্য আমি কালবেলার সাফল্য কামনা করি।
জামায়াতের রাজশাহী মহানগরীর সেক্রেটারি ইমাজ উদ্দিন মণ্ডল বলেন, অনেক মিডিয়া মনে করে হয়ত কালবেলা ওপরে উঠে যাচ্ছে এটিকে দমাতে হবে। তার মানে এটিকে কীভাবে টেনে নিচে নামানো যায় আমরা অনেকেই হয়তো সেই ভূমিকায় আছি। শুধু কালবেলা নয়, এরকম যারা ভূমিকা রাখে এবং ওপরে উঠতে চায় তাদের নিচে নামানোর প্রবণতা আছে। আমরা কথা হচ্ছে, কাউকে নিচে নামানোর দরকার কী? ভালো কাজের প্রতিযোগিতায় আপনি ওপরে ওঠেন, সমস্যা তো নেই। আমি কালবেলাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই ২৪ এর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনে অনন্য ভূমিকা রাখার জন্য। অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ মিডিয়া ছিল, দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকে যারা ভূমিকা রাখতে পারেনি। কিন্তু কালবেলা ‘শিশু’ হয়েই সেই ভূমিকা পালন করেছে।
আলোচনা সভা শেষে কেক কেটে রাজশাহীতে কালবেলার দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করা হয়। এর আগে মানবসেবায় বিশেষ অবদান রাখার জন্য ৩১ বছর থেকে অ্যাম্বুলেন্স চালানো মো. আশরাফুল আলীম নামের এক অ্যাম্বুলেন্স চালককে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথিসহ অন্য অতিথিরা এই চালকের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন।
আলোচনা সভা ও কেক কাটা অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে রাজশাহী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক মহা. হবিবুর রহমান, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) রাজশাহী জেলার সভাপতি আহমেদ সফিউদ্দিন, বিশিষ্ট সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও অনুবাদক ড. নাজিব ওয়াদুদ, রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) সাবেক সভাপতি সরদার আব্দুর রহমান, রাজশাহী এডিটরস ফোরামের সভাপতি মো. লিয়াকত আলী, রাজশাহী সাংবাদিক কল্যাণ সমিতির আহ্বায়ক আকবারুল হাসান মিল্লাত, রাজশাহী টেলিভিশন জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী হাসান শ্যামল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে রাজশাহী ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহকারী মহাসচিব ড. সাদেকুল ইসলাম স্বপন, রাজশাহী এডিটরস ফোরামের সদস্য সচিব আহসান হাবীব অপু, রাজশাহী প্রেসক্লাবের আহ্ববায়ক কমিটির সদস্য মো. আনিসুজ্জামান, জিয়াউল গনি সেলিম, বরেন্দ্র প্রেসক্লাবের সভাপতি শামসুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম, বিশ্বাস বিল্ডার্সের প্রজেক্ট ম্যানেজার মো. মমিনুল ইসলামসহ আরো অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন