বন্যাকবলিত ময়মনসিংহের ফুলপুরে গো-চারণভূমি তলিয়ে যাওয়ায় গো-খাদ্যের সংকটে পড়েছেন খামারিরা। অসময়ের ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত হয় উপজেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল। বন্যার সময় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হয় দেশের অন্যতম বৃহত্তম গবাদিপশু সমৃদ্ধ অঞ্চলটি।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর জানায়, বন্যা আক্রান্ত হয়েছে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ৩৫টি ইউনিয়নের প্রায় ১৮৩ বর্গকিলোমিটার এলাকা। বন্যা আক্রান্ত এলাকার প্রায় ১৫ হাজার গবাদিপশু পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যাকবলিত প্রতিটি বাড়িতেই কিছু না কিছু গবাদিপশু রয়েছে। বন্যার পানিতে চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ফলে বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। পশুর মুখে চাহিদামত খাবার দিতে পারছে না খামারিরা।
সরেজমিনে বন্যা আক্রান্ত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে বন্যাকবলিত প্রতিটি এলাকায় গবাদিপশু নিয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন কৃষকরা।
উপজেলার ফুলপুর মধ্যনগর গ্রামের মাজেদা বেগম বলেন, প্রায় ১০ দিন ধরে তার বাড়িতে পানি। নিজেরা আধা পেট খেয়ে কোনোভাবে দিন পার করলেও গবাদিপশুগুলোকে অনাহারেই রাখতে হচ্ছে বেশি সময়। বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলের কোথাও শুকনো জায়গা নেই, কোথাও ঘাসের দেখা নেই। শুকনো খড়ের জোগান নেই কলাগাছের কিছু পাতা খেতে দিয়েছি ছাগলকে। খাবার ইচ্ছা না থাকলেও ক্ষুধার্ত পশুরা এসব খেয়েই কোনোরকমে বেঁচে আছে।
বালিয়া ইউনিয়নের আন্ধারচর গ্রামের কৃষক হৃদি মোতালেব বলেন, গবাদিপশু পালন করেই তার সংসার চলে। বন্যার কারণে বাড়িতে পানি ওঠায় গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে গো খাদ্যের সংকটে ১০টি ছাগল ভেড়া বিক্রি করে দিয়েছি অর্ধেক দামে। নিজে এক প্যাকেট ত্রাণ পেলেও গবাদিপশুর জন্য কিছু জোটেনি। বাড়িতে খড়ের স্তূপ থাকলেও বন্যা আক্রান্ত হওয়ায় খড়ের স্তুপ থেকে পর্যাপ্ত খড় নিয়ে আসা হয়নি। খাদ্যের অভাবে সংসারের আয়ের উৎস গবাদিপশুগুলোকেও অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আব্দুর রেজ্জাক কালবেলাকে বলেন, বন্যা আক্রান্ত এলাকগুলোতে গো-চারণ ভূমি তলিয়ে যাওয়ায় গবাদিপশুর খাদ্য সংকট হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলার প্রায় ২০০ হেক্টর জমির কাঁচা ঘাস পানিতে তলিয়ে গেছে। খামার পর্যায়ে গবাদিপশুগুলো শুকনো খাবারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ায় গবাদিপশু পালনে খরচ বেড়ে গেছে।
মন্তব্য করুন