দেবিদ্বারে দুর্গাপূজার বরাদ্দের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে জীবন দাসের বিরুদ্ধে। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি।
প্রশাসনের নির্দেশনা না মেনে প্রতিটি মণ্ডপে পূজার জন্য বরাদ্দকৃত চাল বিক্রি করা ও দেবিদ্বার পৌরসভার অনুদান হিসেবে ৪০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় মোট ৯৩টি পূজামণ্ডপে এবার দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পূজা উদযাপনের লক্ষ্যে প্রতিটি মণ্ডপে ৫শ কেজি করে মোট ৪৬ হাজার ৫শ কেজি চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। এসব চাল সুষ্ঠুভাবে বিতরণের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা পূজামণ্ডপ সভাপতিদের হাতে হাতে চালের ডিও প্রদান করেন। কিন্তু উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা জীবন দাস প্রশাসনের নির্দেশ না মেনে প্রভাব খাটিয়ে নিজেই চাল বিক্রি করে মণ্ডপগুলোতে নগদ অর্থ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
পরে উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক কোম্পানীগঞ্জ বাজারের চাল ব্যবসায়ী পিন্টু সাহার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ওই চাল কিনতে রাজি হন এবং দাম হিসেবে প্রতি কেজি চালের জন্য ৪০ টাকা করে নির্ধারণ করেন। কিন্তু পরদিন জীবন দাস হিন্দু সম্প্রদায়ের সিনিয়র নেতাদের জানান, তিনি ৩৭ টাকা মূল্যে চালগুলো বিক্রি করে দিয়েছেন। পরে তিনি পূজামণ্ডপ সভাপতিদের হাতে ওই চালের মূল্য হিসেবে ১৮ হাজার ৫শ টাকা করে তুলে দেন।
তবে জীবন দাসের এসব অন্যায় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে কয়েকজন মণ্ডপ সভাপতির চালের ডিও নিয়ে খাদ্য গুদাম থেকে তা উত্তোলন করেন এবং বাজারে বিক্রি করে ২০ হাজার ৫শ টাকা করে পান।
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে সমালোচনার শুরু হয়। এ ছাড়াও ওই পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি পৌর প্রশাসকের বরাবর অনুদানের জন্য আবেদন করলে, পৌরসভা থেকে অনুদান হিসাবে ৪০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। অথচ ওই টাকা পৌরসভার ৯টি পূজামন্ডপে বিতরণ না করে নিজে আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ উঠে।
কোম্পানীগঞ্জের চাল ব্যবসায়ী পিন্টু সাহা বলেন, আমার সঙ্গে চাল বিক্রি করার বিষয়ে আলাপ করলে, আমি ৪০ টাকা কেজি চাল কিনতে রাজি হই। কিন্তু পরে খবর পাই তারা ৩৭ টাকা মূল্যে চাল বিক্রি করে দিয়েছে।
দেবিদ্বার কেন্দ্রীয় কালি মন্দির পূজামণ্ডপ কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ বিশ্বজিৎ দত্ত ও চাঁপানগর রনজিৎ সাহা বাড়ির পূজামণ্ডপ সভাপতি রনজিৎ সাহা বলেন, চালের ডিও খাদ্য পরিদর্শকের কার্যালয়ে জমা দিলে পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি জীবন দাস আমাদের ১৮ হাজার ৫শ টাকা করে দেন। প্রতিটি মণ্ডপেই সমানভাবে টাকা দেওয়া হয়। তবে যারা নিজেরা চাল বিক্রি করেছে তারা ২ হাজার টাকা করে বেশি পেয়েছে।
হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের মধ্যে অনিল ঠাকুর, অধ্যাপক বিমল চন্দ্র দত্ত ও স্বপন কুমার ধর বলেন, জীবন দাস আমাদের বিষয়টি জানালে আমরা তাকে এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়ার জন্য অনুরোধ করি। কিন্তু উনি আমাদের কথার গুরুত্ব না দিয়ে নিজেই চাল বিক্রি করেন। উনি নিজে লাভবান হওয়ার জন্য ৪০ টাকা মূল্যে চাল বিক্রি না করে নিজের চুক্তি করা ব্যবসায়ীদের কাছে ৩৭ টাকা মূল্যে চাল বিক্রি করেছেন। প্রতি বছরই এভাবে জীবন দাস পূজামণ্ডপগুলোকে ঠকিয়ে আসছে। আমরা এর প্রতিকার চেয়ে প্রশাসন বরাবর আবেদন করব।
উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ডা. প্রদীব কুমার দে বলেন, আমি এ বছর দায়িত্ব পেয়েছি। চেয়েছিলাম চাল বিতরণে স্বচ্ছতা ফেরাতে কিন্তু সভাপতির জন্য তা করতে পারিনি।
অভিযুক্ত উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি জীবন দাস বলেন, আমি চাল যে মূল্যে বিক্রি করেছি, ওই টাকাই সব মণ্ডপে দিয়ে দিয়েছি। পৌরসভা থেকে পাওয়া টাকা আমরা যাতায়াত খরচ হিসেবে ব্যবহার করেছি।
দেবিদ্বার পৌর প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রায়হানুল ইসলাম বলেন, উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির আবেদনের প্রেক্ষিতে অনুদান হিসেবে আমরা ৪০ হাজার টাকা তাকে প্রদান করেছি।
এ ব্যাপারে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার দৈনিক কালবেলাকে বলেন, সরকারের বরাদ্দকৃত চাল পূজামণ্ডপে দিয়ে দেওয়ার কথা। কিন্তু এটা কেন করা হলো না। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।
মন্তব্য করুন