বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৪ আগস্ট সিরাজগঞ্জে গুলিবিদ্ধ হন নাটোরের বাগাতিপাড়ার আব্দুল্লাহ আল বাকী মিঠু (৩২)। সংঘর্ষের সময় পুলিশের ছররা গুলি এসে লাগে মিঠুর শরীরের বিভিন্ন স্থানে। শুধু চোখ-মুখ ও কপালেই আটটি গুলি লাগে মিঠুর। গুলিতে বাঁ চোখের দৃষ্টি হারিয়েছেন তিনি। ডান চোখেও ঝাপসা দেখছেন।
শরীরের অন্যান্য স্থানের কয়েকটি গুলি বের করা গেলেও চোখ-মুখ ও কপালে থাকা আটটি ছররা গুলি এখনো বের করা সম্ভব হয়নি। আন্দোলনে অংশ নিয়ে চোখের দৃষ্টি হারিয়ে মিঠুর সংসারজুড়ে নেমেছে অন্ধকার।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) সকালে সরেজমিনে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার হাটগোবিন্দপুর গামে আব্দুল্লাহ আল বাকী মিঠুর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, আন্দোলনে চোখের দৃষ্টির সঙ্গে নিজের চাকরি হারিয়ে অসহায় অবস্থায় দিন পার করছে তার পরিবার। মাস দুয়েক আগেও পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মিঠুই পাঁচ সদস্যের সংসারের ভার সামলেছেন। আন্দোলনের আগে সিরাজগঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালের সিটিস্ক্যান অপারেটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন মিঠু। আন্দোলনে চোখের দৃষ্টি হারিয়ে হারিয়েছেন চাকরি।
আব্দুল্লাহ আল বাকী মিঠু কালবেলাকে বলেন, চোখের দৃষ্টি আর চাকরি হারিয়ে আমি একদম নিঃস্ব। আমার সংসারটা শেষ হয়ে গেছে। পরিবারের সামান্য যা কিছু ছিলো সেগুলো বিক্রি করে চিকিৎসা করেছি। বর্তমানে সংসারের ব্যয় ও চিকিৎসার খরচ সবটাই ধারদেনা করে চলছে। চোখের চিকিৎসার জন্য কিছুদিন পর পরই যেতে হচ্ছে ঢাকায় জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে। বেশ কয়েকবার ধারদেনা করে ঢাকায় গেলেও এখন আর সেটিও সম্ভব না। জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে তার এক চোখে অস্ত্রোপচার করা হলেও তাতে কোনো লাভ হয়নি।
মিঠুর বাবা আব্দুল খালেক বলেন, আন্দোলনে চোখের দৃষ্টি হারিয়ে আমার ছেলের চাকরিটা চলে গেছে । চাকরি না থাকায় ২ মাস ধরে সংসারে কোনো আয় রোজগার নেই। আমি নিজেও দীর্ঘদিন থেকে অসুস্থ হয়ে ঘরে পড়ে আছি। এই অবস্থায় ছেলের চিকিৎসা চালানো আমাদের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
বাগাতিপাড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র প্রতিনিধি মোনায়েম ইসলাম রুমি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে গঠিত স্বাস্থ্য বিষয়ক উপকমিটির কাছে প্রায় ৪ সপ্তাহ আগে মিঠুর চিকিৎসার সব রিপোর্টসহ তার তথ্য পাঠানো হয়েছে। আমরা চেষ্টা করেছি আন্দোলনে যারা আহত হয়েছেন তাদের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে।
মন্তব্য করুন