পর্যটক খরায় ভুগতে থাকা পর্যটন নগরী কুয়াকাটা পর্যটকে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) বিকেল থেকে সর্বত্রই পর্যটকের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। শারদীয় দুর্গাপূজা আর সাপ্তাহিক বন্ধ সামনে রেখে চার দিন দেশে সরকারি ছুটি থাকায় দেখা যায় এমন পর্যটকের ঢল। এ তথ্য জানিয়েছেন কুয়াকাটার পর্যটননির্ভর সব ব্যবসায়ী।
এ বিষয়ে কথা বললে হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ কালবেলাকে বলেন, দীর্ঘদিন পরে কুয়াকাটায় পর্যটকের আনাগোনা বাড়ছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক থাকলে সারা বছর পর্যটকের আনাগোনা থাকে কুয়াকাটায়। অনেক দিন পরে আমাদের ব্যস্ততা বেড়েছে। আশা করি, সামনের দিনেও এমন দৃশ্য চোখে পড়বে।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) সরেজমিনে দেখা যায়, কুয়াকাটার জিরো পয়েন্ট থেকে শুরু করে আশপাশের এক কিমি জায়গাজুড়ে পর্যটকের হৈ-হুল্লোড়।
সমুদ্রের বুকে কেউ ঝাঁপিয়ে পড়ছে, কেউ বা আবার দলবেঁধে সাঁতার কাটছে। আনন্দ উপভোগের দৃশ্য স্মৃতিপটে ধারণের জন্য কেউ বা আবার ছবি তুলছে। তবে সৈকতের বেহাল দশা দেখে হতাশ পর্যটকরা। তারা বলছেন, এত সুন্দর সৈকতের এমন বিশ্রী অবস্থা! যত্রতত্র পড়ে আছে জিওটিউব আর জিওব্যাগ। এসবে নির্বিঘ্নে উপভোগ করা যায় না আসল সৌন্দর্য।
এ বিষয়ে পর্যটক সোয়াইব বলেন, আমি এই প্রথম কুয়াকাটায় বেড়াতে এলাম। সৈকত আর সাগরের ঢেউ আমাকে বেশ মুগ্ধ করেছে। তবে অব্যবস্থায় ভোগান্তি আছে আমাদের মতো পর্যটকের।
অন্যদিকে, পর্যটকের আনাগোনা বাড়ায় ব্যস্ততা দেখা গেছে কুয়াকাটার সব রেস্তোরাঁসহ পর্যটননির্ভর সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। হোটেল-মোটেলের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের আবাসিক হোটেলে বুকিং ভালো আছে। পর্যটকের উপস্থিতিতে স্বস্তি ফিরছে। তাদের আশা, এখন থেকে এমন পর্যটকের আনাগোনা থাকলে সংকট কাটিয়ে ওঠা যাবে খুব শিগগির।
এ বিষয়ে বেস্ট সাউদার্ন আবাসিক হোটেলের জেনারেল ম্যানেজার আবুল কালাম বলেন, টানা ছুটিতে আমাদের আবাসিক হোটেল শতভাগ রিজার্ভ। অনেকদিন পর এমন পর্যটক এলো কুয়াকাটায়। আমরা পর্যটকের চাহিদাকে সবসময়ই প্রায়োরিটি দেই।
পর্যটক আগমনে বেচাবিক্রি বেড়েছে সৈকত লাগোয়া ব্যবসায়ীদের। আগের থেকে ব্যস্ততা বেড়েছে তাদেরও। সৈকত লাগোয়া চা বিক্রেতা মো. সোহেল বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে চোখে পড়ার মতো পর্যটক কুয়াকাটায় আসছেন। বেচাবিক্রি বাড়তে শুরু করছে। আশা করি, ঘাটতি পুষিয়ে উঠতে পারব।
ক্যামেরাম্যান আল-আমীন বলেন, কাল থেকেই মোটামুটি পর্যটক আসতে শুরু হয়েছে। শুক্রবারও ভালোই পর্যটক বাড়ছে। আমরা আমাদের সংকট কাটাতে পারব। আচার বিক্রেতা মো. জসিম বলেন, পর্যটকরা এখন বেশি ক্রয় করে না। শুধুই ঘুরে ফিরে চলে যায়। তবে আগের চেয়ে বিক্রি বাড়ছে।
সৈকত লাগোয়া খাবার হোটেলের ম্যানেজার মো. সেলিম বলেন, বিগত দিনে বেচাকেনা খুবই খারাপ ছিল। গতকাল ভালোই বিক্রি করতে পারছি। আজ আরও বাড়বে। এখন আমাদের দুশ্চিন্তা কাটবে। সৈকত লাগোয়া কাপড় ব্যবসায়ী মো. জলিল বলেন, বেচাকেনা নেই বিগত দেড় মাস ধরে। কিছু পর্যটকের আনাগোনা বাড়ছে। আশা করছি দ্রুত স্বরূপে ফিরবে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার (টোয়াক) সেক্রেটারি কেএম জহির কালবেলাকে বলেন, আমরা পর্যটকের সেবায় সব অপারেটর প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। আমরা সাধ্যমতো সেবা প্রদান করতে প্রস্তুত। কয়েক দিন ধরে পর্যটক আসতে শুরু করছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা রিজিওনের পুলিশ সুপার মো. আনসার উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, আমরা সম্পূর্ণভাবে পর্যটকের নিরাপত্তার জন্য প্রস্তুত। দেশে চলমান অস্থিরতা কেটে যাওয়ার ফলে পর্যটক বাড়ছে কুয়াকাটায়। তাদের নিরাপদ ভ্রমণে যা যা করা দরকার, তা সবই করা হবে।
মন্তব্য করুন