বগুড়া ব্যুরো ও শেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:০২ এএম
অনলাইন সংস্করণ

পুলিশের গুলিতে নিহত সোহেলের পরিবারের পাশে কেউ নেই

পুলিশের গুলিতে নিহত সোহেল রানা। ছবি ঃ সংগৃহীত
পুলিশের গুলিতে নিহত সোহেল রানা। ছবি ঃ সংগৃহীত

গত ৫ আগস্ট পুলিশের গুলিতে নিহত হন বগুড়ার নন্দীগ্রামের ভুস্কুর গ্রামের সোহেল রানা ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে বিজয় মিছিল নিয়ে গণভবনে যাওয়ার পথে। ঢাকায় একটি ব্যক্তি মালিকানা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন তিনি। গ্রামের বাড়িতে বাবা-মাসহ পাঁচ সদস্যের সংসার চলত সোহেল রানার উপার্জনে। একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে এখন দিশেহারা পরিবারটি। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটলেও কেউ পাশে দাঁড়ায়নি পরিবারটির।

সম্প্রতি নিহত সোহেল রানার বাড়িতে গেলে তার ভাই সিহাব উদ্দিন এ তথ্য জানান।

সোহেল রানা ভুস্কুর গ্রামের ফেরদৌস রহমানের ছেলে। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে সংসারের অভাব অনটনের কারণে ঢাকায় চলে যান ৮ থেকে ৯ বছর আগে। দেড় বছর আগে বিয়ে করে স্ত্রীসহ বসবাস করতেন ঢাকার রায়েরবাগ এলাকায়। ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে পাঠিয়ে দেন শ্বশুরবাড়ি গাইবান্ধা জেলার ঢোলভাঙ্গা গ্রামে।

বড় ভাই সিহাব উদ্দিন বলেন, আমি গরুর ব্যবসাতে লোকসান করে বর্তমানে বেকার। আমার স্ত্রী-সন্তান, বাবা-মার ভরণ-পোষণ চলত ছোট ভাইয়ের পাঠানো টাকায়। কিছুদিন পর ছোট ভাই ব্যবসার জন্য আমাকে টাকা দিতে চেয়েছিল, কিন্তু তার আগেই পুলিশের গুলিতে প্রাণ গেল ভাইয়ের।

সিহাব উদ্দিন আরও বলেন, গত ৩ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টার দিকে ছোট ভাইয়ের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয়। বাজার খরচের টাকা চাইলে সঙ্গে সঙ্গে বিকাশে ১ হাজার টাকা পাঠায়। তাকে আন্দোলনে যেতে নিষেধ করলে বলে, এলাকার কেউ ঘরে নেই, সবাই মাঠে নেমেছ, আমি একা ঘরে থেকে কী করব?

তিনি বলেন, পরদিন ৪ আগস্ট সোহেল রানা নিজেই কয়েকবার ফোন করে বাবা-মাসহ অন্যদের সঙ্গে কথা বলে। ৫ আগস্ট বিকেলে ফোন করতেই রিসিভ করেন অপরিচিত একজন। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে বলেন সোহেল রানা গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। বাড়িতে এ খবর শুনে আহাজারি শুরু হয় পরিবারে। ঢাকায় বসবাস করা চাচাতো ভাইকে সংবাদ দিলে তিনি সোহেল রানার লাশ নিয়ে আসেন বাড়িতে। পরদিন জানাজা শেষে দাফন করা হয়।

সোহেল রানার মোবাইল ফোনে বেশ কিছু ভিডিও পাওয়া যায়। সেখানে দেখা যায় ৫ আগস্ট দুপুরে সোহেল রানা হাতে লাঠি, বুকে জাতীয় পতাকা জড়িয়ে বিজয় মিছিলে লোকজনকে সংগঠিত করছেন। তিনি সবাইকে গণভবনের দিকে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। হাসাপাতালে মৃত্যু সনদ অনুযায়ী সোমবার বিকেল পৌনে ৩টায় সোহেল রানার মৃত্যু হয়।

ছবিতে দেখা যায়, তার বুকের সঙ্গে জাতীয় পতাকা ছাড়াও ছোট একটি ব্যাগ ছিল। গুলি ব্যাগ ভেদ করে তার বুক ক্ষতবিক্ষত হয়ে মৃত্যু হয়েছে।

সোহেল রানার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মা মাবিয়া বেগম ছেলের জন্য বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। লোকজন দেখলে আহজারি করছেন। তিনি বলেন, বাড়ির ভিটা ছাড়া কোনো জমি নেই আমাদের। স্বামী অসুস্থ, বড় ছেলেও বেকার। এত মানুষের খরচ বহন করত সোহেল রানা। সেই ছেলেটাকে গুলি করে মেরে ফেলল পুলিশ? এখন আমাদের সংসার চলবে কী করে? খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে আমাদের। ছেলের বউ সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা। স্বামীর মৃত্যুর খবর শুনে বাবার বাড়ি থেকে এলেও দাফন শেষে আবার চলে গেছে বাবার বাড়ি। পরে ঢাকায় গিয়ে বাসার মালপত্র নিয়ে গেছে বাবার বাড়িতে। বাবার বাড়িতে থেকে আনতে গেলে সে আর শ্বশুরবাড়িতে আসবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।

সোহেল রানার ভাই বলেন, ছোট ভাইয়ের জানাজাতে স্থানীয় কয়েকজন বিএনপি নেতা এসেছিলেন। কিন্তু তারপর থেকে কেউ আর খোঁজখবর নেননি আমাদের।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নাটোরে বজ্রপাতে দুজনের মৃত্যু

দেশছাড়া আ.লীগ নেতাদের শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি ফারুকের

৫৫৬ রান করেও ইনিংস ব্যবধানে হার পাকিস্তানের

পূজামণ্ডপে ইসলামী গানের বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি, সজল দত্তকে বহিষ্কার

প্রবাসী পাত্র চান সুবাহ 

সিরাজগঞ্জে গণধর্ষণ মামলার পলাতক আসামি গ্রেপ্তার

আপনার ভাগ্যে কী আছে? জেনে নিন রাশিফলে

আজ ‘সেভ বাংলাদেশ’ কনসার্ট

চিকিৎসার কথা বলে টাকা দিয়ে নবজাতক নিয়ে উধাও

মিয়ানমারের নৌবাহিনীর গুলিতে জেলে হত্যার প্রতিবাদ ঢাকার

১০

আর্থ্রাইটিস কী, কেন হয়? লক্ষণ ও প্রতিরোধে করণীয়

১১

গাজায় ইসরায়েলের তিন সেনা নিহত

১২

বিএনপির নাম ভাঙিয়ে ফায়দা লোটার চেষ্টা হচ্ছে : রিজভী

১৩

যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দিতে হবে: সেলিমা রহমান

১৪

বিয়ে করলেন শিরিন শিলা

১৫

পূজামণ্ডপে ইসলামী সংগীত, গ্রেপ্তার ২

১৬

যাওয়ার আগে যে বার্তা দিলেন মিজানুর রহমান আজহারি

১৭

নেত্রকোনায় নৌকা ডুবে দুই শিশু-কিশোরীর মৃত্যু

১৮

ক্ষুধা সূচকে ৩ ধাপ পেছাল বাংলাদেশ

১৯

বনের গাছ কেটে বিক্রি করলেন আওয়ামী লীগ নেতা

২০
X