দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক সংকটে ভুগছে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম) বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট। ৩৫ বেডের এই গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটটিতে কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় পোড়া রোগীদের সঠিক চিকিৎসা সেবা পেতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। দায়িত্বরত ইন্টার্ন চিকিৎসক ও নার্সদের সহায়তায় কোনো রকমে চলছে এই ইউনিট, যা রোগীদের চিকিৎসার মানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার চরবিশ্বাস গ্রামের দেড় বছর বয়সী শিশু মেহেদী হাসান মিরাজ গরম পানিতে পুড়ে যাওয়ার পর বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি হয়। তার বাবা আল-আমিন বলেন, এতদিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন, অথচ কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা পাচ্ছেন না। শুধু মেহেদী নয়, এমন অভিযোগ এ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন প্রতিটি রোগীর।
২০২২ সালে ঝালকাঠিতে লঞ্চে আগুনের ঘটনার পর বার্ন ইউনিট চালু করা হলেও ডা. মারুফুল ইসলাম এক মাস আগে বদলি হয়ে ঢাকায় চলে যাওয়ায় বর্তমানে এই ইউনিটে কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। ফলে ইউনিটটি এখন চিকিৎসকশূন্য। ফলে ইন্টার্ন চিকিৎসক ও নার্সদের ওপর ভরসা করে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন রোগীরা। এমনকি ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত সেবিকা, আয়া, এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা না থাকায় রোগীরা ভোগান্তিতে পড়ছেন। এয়ারকন্ডিশন নষ্ট এবং বৈদ্যুতিক ফ্যানগুলোর অচল অবস্থার কারণে গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছেন রোগীরা। এ ছাড়া ওয়ার্ডে পরিচ্ছন্নতার মানও অত্যন্ত নিম্নমানের, যেখানে ময়লা-আবর্জনা জমে থাকার কারণে রোগীরা সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছেন।
শেবাচিম হাসপাতালের সহকারি-পরিচালক রেজওয়ানুল আলম চিকিৎসক সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, বার্ন ইউনিটসহ বিভিন্ন বিভাগে চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে, এবং এসব পদে নিয়োগের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, বরিশালে নতুন দশতলা ভবন নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যেখানে আধুনিক বার্ন ইউনিট থাকবে। এটি পাস হলে ঢাকায় যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা কমে যাবে।
বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা সংকট এবং অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে রোগীদের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তবে এই সংকট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া না হলে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষকে আরও দীর্ঘদিন ঢাকামুখী হতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য খাতের সংশ্লিষ্ট মহলকে শিগগিরই কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে জনসাধারণের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা জরুরি।
মন্তব্য করুন