ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে নরসুন্দা নদী। আর সেই নদীপথকে কাজে লাগিয়ে ইজারাবিহীন শতকোটি টাকার পাথর আমদানি-রপ্তানির ব্যবসা করছেন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা।
এতে নান্দাইল উপজেলায় বাণিজ্যিক সুবিধা বাড়লেও, সরকার যেমন কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে, ঠিক তেমনি নরসুন্দা নদীর পানির প্রবাহের পথ বন্ধ হওয়ায় উপজেলায় নষ্ট হচ্ছে কৃষিজমি। নদীর জায়গা অর্থাৎ পানিপ্রবাহের পথ দখল করে পাথরের বিশাল স্তূপ সৃষ্টির মাধ্যমে পানি প্রবাহের গতি হ্রাস করছে। ফলে নদীর নাব্য হ্রাসের পাশাপাশি যে কোনো সময় অল্প বৃষ্টিতেই প্লাবিত হয় উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকা।
এ ছাড়া পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়াই পাথর ক্র্যাসিং করা হচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নামমাত্র ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে সড়ক ও জনপথের জায়গা এবং নদীর জায়গা দখল করে অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে রমরমা পাথর ব্যবসা। সেই পাথর ব্যবসা কেন্দ্র করে নরসুন্দা নদীর জমি (চর) দখল ও পানিপ্রবাহে প্রতিবন্ধকতাসহ পরিবেশ দূষণ করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) সরেজমিন দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা সিলেট, সুনামগঞ্জ, ছাতকসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বড় বড় নৌকা দিয়ে নদীপথে লাখ লাখ ঘনফুট বড় বড় পাথর মুশুলী ইউনিয়নের তারেরঘাট বাজারে নিয়ে আসেন। সেই পাথর নরসুন্দা নদীর তীরে স্তূপ করে রাখা হয়।
পরে তা ক্র্যাসিং মেশিনের মাধ্যমে ভাঙানো হয় এবং তা সারা বছর ক্রয়-বিক্রয় করা হয়। ফলে পাথর ব্যবসায়ীরা নরসুন্দা নদীতে পাথর রেখে পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি ও অবৈধ ক্রাসিং মেশিন ব্যবহার চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে ব্যবসায়ীরা নদীর জায়গা দখলে নিয়ে যাওয়ায় সংকোচন হয়ে যাচ্ছে নদীর প্রস্থতা।
ব্যবসায়ীরা জানান, যেখানে তারা পাথর রাখছেন, সেটি নদীর ভেতরের অংশ, অর্থাৎ নদীর গতিপথ। অনেকেই ব্যক্তিগত জমি ভাড়া নিয়ে পাথর রাখেন। অন্যদিকে পরিবেশ অধিদপ্তরে কোনো ছাড়পত্র ছাড়াই পাথর ভাঙার মেশিনের (ক্যাশিং মেশিন) দেদার ব্যবহার চলছে। এর ফলে যেমন পরিবেশ দূষণ হচ্ছে, তেমনি শব্দ দূষণসহ পাথর ভাঙার অদৃশ্য বালুকণা আশপাশের পথচারীদের চোখে পড়ায় চোখের ক্ষতি হচ্ছে। পাশাপাশি পাথরবহনকারী ছোট-বড় প্রতিটি নৌকা ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা তোলা হয়, যা ব্যবসায়ী সমিতি নিয়ে যায়।
তবে বেশ কয়েকজন পাথর ব্যবসায়ী জানান, ওই তারেরঘাট বাজার পাথর ব্যবসার সমৃদ্ধি লাভের জন্য সরকারি ইজারা ডাকের ব্যবস্থা করলে ভালো হয়। এখানে কারও পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো অনুমতি নেই। স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই চলছে এ ব্যবসা।
পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বাচ্চু নদীতে পাথরের স্তূপ রাখার কথা স্বীকার করে বলেন, এসিল্যান্ড এসে তিন দিনের সময় দিয়ে গেছেন। তবে তিন দিন কেন, তিন মাসেও সরানো সম্ভব নয়।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ইফতেকার উদ্দিন ভূঁইয়া বিপ্লব কালবেলাকে বলেন, সরকারি ইজারা ডাক নেই। অনেকেই ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করছেন। আমার জানা মতে, অনেকের ইনকাম ট্যাক্সের ফাইলও আছে। তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো অনুমোদন নেই।
কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সাকিল মাহমুদ ফয়সাল কালবেলাকে জানান, তিনি এখানে নতুন এসেছেন। বিষয়টি দেখার তিনি একজনকে দায়িত্ব দিয়েছেন।
এ বিষয়ে নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরুণ কৃষ্ণ পাল কালবেলাকে বলেন, নদীতে পাথর রাখার জন্য পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা তা করতে পারেন না। পাথর ভাঙার জন্য যে ক্র্যাসার মেশিন ব্যবহার করছেন, তা ব্যবহার করতে হলে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন প্রয়োজন। ওই বাজার এলাকায় নরসুন্দা নদীর প্রস্থতা কতখানি, তা সার্ভেয়ারকে দিয়ে জরিপ করে দেখা হবে।
মন্তব্য করুন