ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া ও ফুলপুর উপজেলায় বন্যার পানি ধীরগতিতে নামছে। নতুন করে কোনো এলাকা প্লাবিত না হলেও ভাটি এলাকাগুলোতে অপরিবর্তিত আছে বন্যা পরিস্থিতি। উজানে পানি কমতে থাকায় ক্রমেই ভেসে উঠছে ক্ষতচিহ্ন।
বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) ভোর থেকে এসব উপজেলায় মানুষের ঘরবাড়ি থেকে পানি নামতে শুরু করেছে।
তিন উপজেলায় এখনো পানিবন্দি লক্ষাধিক মানুষ। বন্যাকবলিত এলাকায় খাবারের পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে পানিবাহিত রোগ ছাড়ানোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তিন উপজেলাতেই প্রশাসনের পাশাপাশি ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে সেনাবাহিনী-র্যাবসহ স্বেচ্ছাসেবীরা।
তবে চাহিদার তুলনায় এই ত্রাণ খুবই অপ্রতুল। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ত্রাণের জন্য মানুষের হাহাকার। বন্যার পানি যতই দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে ততই বাড়ছে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ।
ফুলপুর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। ধীরে ধীরে পানি কমতে শুরু করেছে বন্যা কবলিত ছনধরা, সিংহেশ্বর, ফুলপুর সদর, বালিয়া ও রূপসী ইউনিয়ন থেকে। তবে পাঁচটি ইউনিয়নের ৩২টি গ্রামের ৬৮০০ পরিবারের ৩০ হাজার মানুষ এখনও পানিবন্দী আছে৷ পানিবন্দি এলাকায় মানুষ গত কয়েকদিন ধরে ভাত পাচ্ছে না। শুকনো চিড়া-মুড়ি খেয়ে দিন পারি দিচ্ছে। বিশুদ্ধ পানির সংকট চলছে কবলিত গ্রাম গুলোতে।
ফুলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ বি এম আরিফুল ইসলাম বলেন, বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। এখনও ৩২টি গ্রামের ৬ হাজার ৮ শত পরিাবরের ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে৷ ত্রাণ কার্যক্রম অব্যহত আছে। সরকারিভাবে ত্রাণ কার্যক্রম মনিটর করা হচ্ছে। প্রতিদিন বিভিন্ন টিম ত্রাণ দিচ্ছে। বেসরকারি লোকজন প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে যেসব এলাকায় ত্রাণ দরকার সেসব এলাকায় বিতরণ করছে।
হালুয়াঘাট উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়নে পানি ছড়িয়ে পড়েছে। উপজেলার নড়াইল, বিলডোরা ও শাকুয়াই ইউনিয়নে পরিস্থিতি আজ উন্নতির দিকে। উপজেলার অন্য নয়টি ইউনিয়নেও অনেকটা উন্নতি হয়েছে। পানিবন্দি মানুষের খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট চলছে। এখনও উপজেলার ২৫টি গ্রামে ৬ হাজার পরিবারের ২৪ হাজার মানুষ পানিবন্দি আছে।
হালুয়াঘাট ইউএনও মো. এরশাদুল আহমেদ বলেন, উপজেলায় পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছে।
গত শুক্রবার দুপুরের পর অতিবৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল ও নেতাই নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় ধোবাউড়া উপজেলা। পোড়াকান্দুলিয়া, গোয়াতলা ও ধোবাউড়া সদরে ধীরে ধীরে পানি কমছে। উপজেলাটিতে এখনো ৪৫ গ্রামে ৪ হাজার ৫০০ পরিবারে অন্তত ২৩ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। পানিবন্দি গ্রামগুলোতে খাদ্য ও সুপেয় পানির সংকট রয়েছে৷
ইউএনও নিশাত শারমিন বলেন, পানি কমতে শুরু করায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। এখনও ৪৫টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি আছে। বন্যায় কৃষি, মৎস্য, পানিসম্পদ খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দুর্গত এলাকায় সুপেয় পানির সংকট আছে। যারা ত্রাণ বিতরণ করতে আসছেন, তাদের পানি বিশুদ্ধ করণ ট্যাবলেটও দেওযার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
তিন উপজেলায় ৩৩ হাজার ৩৭২ হেক্টর রোপা আমন ধানের জমি প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে পানিতে সম্পূর্ণ তলিয়ে গেছে ১৮ হাজার ৭০২ হেক্টর, আংশিক নিমজ্জিত হয়েছে ১৪৬৭০ হেক্টর। তলিয়ে গেছে ১৮০ হেক্টর জমির শাক-সবজি। এ ছাড়া অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে তিন উপজেলার ১৫ হাজার জন ৭৫১টি মৎস্য খামার তলিয়ে গেছে। মৎস্য খাতে প্রায় ৮৬ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
মন্তব্য করুন