নেত্রকোনায় বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। ফলে ধীরে ধীরে জনজীবন স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। তবে বন্যা পরবর্তী নানা দুর্ভোগ। পানি নামতে থাকায় ভেসে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন। পানির স্রোতে ভেঙে গেছে জেলার প্লাবিত ৫ উপজেলার অনেকগুলো ছোট বড় বেশ কয়েকটি সড়ক। এসব সড়কে যান চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে।
এদিকে বন্যায় জেলার ২২ হাজার ৬৪১ হেক্টর জমির রোপা আমন ধান তলিয়ে যায়। এতে দুইশত ৯৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. নুরুজ্জামান। তবে কৃষকদের দাবি ক্ষতির পরিমাণ আরও অনেক বেশি।
এ ছাড়া বন্যায় জেলার ১ হাজার ৭০০ এর বেশি ফিশারির মাছ বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ক্ষতি পরিমাণ ৮ কোটি টাকা বলে জানিয়েছে মৎস্য বিভাগ।
নেত্রকোনার মৎস্য কর্মকর্তা শাহজাহান কবির বলেন, এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ চাওয়া হবে।
জেলার উপদাখালী নদীর পানি বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬টায় বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। এর আগে সকাল ৯টায় বিপৎসীমার শূন্য দশমিক শূন্য ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছিল। বুধবার (৯ অক্টোবর) এ নদীর পানি বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ ছাড়া সবগুলো নদীর পানি সমানভাবে কমছে। পানি উঠায় জেলায় ১৮৬টি বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
পূর্বধলা উপজেলার জারিয়া এলাকার কৃষক হাফিজ মিয়া বলেন, ৮ একর জমির ধান পানিতে চলে গেছে। পোলাপানের পড়ালেখা ও সংসারের খরচ চালানো দায় হবে।
সদর উপজেলার বাইশধার গ্রামের রতন মিয়া বলেন, বন্যায় দুটি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। ১০ একর জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। ধান-মাছের পেছনে ঋণ করে অনেক খরচ করেছি। আশায় ছিলাম ফসল উঠলে ঋণের টাকা শোধ করে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া ও সারা বছরের পরিবারের সংসারের খরচ হবে। বন্যায় সব শেষ হয়ে গেল। এখন পর্যন্ত সরকারের কোনো সহযোগিতা পেলাম না।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারোয়ার জাহান বলেন, উজানে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পানি কমতে শুরু করেছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে।
জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস জানান, বন্যায় পুকুরের মাছ ভেসে যাচ্ছে। রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে ঘরবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বেশ কিছু সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। অসংখ্য মানুষ পানিবন্দি আছেন। ত্রাণসহায়তাসহ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করা হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, সবার সম্মিলিত সহযোগিতায় এ সংকট সহজে কেটে যাবে।
মন্তব্য করুন