টাঙ্গাইলে প্রায় ৫৪ বছর ধরে একই উঠানে চলে আসছে মসজিদ ও মন্দিরের নিয়মিত কার্যক্রম। যার যার ধর্মের কাজ করে যাচ্ছে। মসজিদের পাশে মন্দিরে ধুমধামে দুর্গাপূজার অনুষ্ঠান চলছে। অপরদিকে মসজিদে আজান ও নামাজের সময় বন্ধ থাকছে পূজার সকল কাযক্রম।
জানা যায়, টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলায় নাগরপুর সদরে চৌধুরী বাড়িতে ৯০ বছর আগে মন্দিরটা প্রতিষ্ঠা হয়। এরপর এখানকার মুসলমানরা নাগরপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ গড়ে তোলেন। সেখান থেকেই পাশাপাশি চলে আসছে দুই ধর্মের ধর্মীয় উৎসব।
সরেজমিনে দেখা যায়, নাগরপুর সদরে একটি দেয়ালে ঘেরা পূজামণ্ডপ ও তার পাশে কেন্দ্রীয় মসজিদ। মন্দিরে চলছে পূজার ধনী আর ঢাকের বাজনা। পূজারী ও দর্শনাথীরা যাচ্ছেন প্রতিমা দেখতে এবং পূজায় অংশ নিতে। দুপুরে মসজিদে আজান শুরুর আগেই থেমে গেল পূজার যাবতীয় কার্যক্রম। এমন সময় জানিয়ে দেওয়া হয় আজান এবং নামাজের পর আবার মন্দিরে মাইক ও ঢোলসহ পূজার যাবতীয় কাযক্রম চলবে। এরপরই পাশাপাশি মসজিদ থেকে ভেসে এলো আজানের সুর পরপরই নামাজিরা আসতে শুরু করলেন মসজিদে। শুরু হলো নামাজ। নামাজ শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পর আবার বেজে উঠল মন্দিরের ঢাক ঢোলসহ উলুধ্বনি। শুরু হয় পূজার কার্যক্রম।
নামাজিরা ও পূজারীরা জানান, এখানকার মানুষ শান্তি প্রিয় কোনো দিন কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা হয়নি। দুই ধর্মের মানুষের মধ্যে অনেক মিল আছে। সবাই মসজিদ ও মন্দিরে নিজ নিজ ধর্মের কার্যক্রম পরিচালন করে। এতে কখনো কারো কোনো প্রকার সমস্যা হয়নি। আমাদের প্রত্যাশা যুগ যুগ ধরে এই বন্ধন অটুট থাকবে।
সমিদী সাহা কালবেলাকে বলেন, এই মন্দিরটা বহু বছর আগের পুরোনো। এখানে পূজা উদযাপিত হয়। পাশেই মসজিদ আছে মুসলমান-হিন্দু আমরা একত্র হয়ে উদযাপিত করি আমাদের অনেক ভালো লাগে। আমি ছোট বেলা থেকেই মা বাবার সঙ্গে এখানে পূজা দেখেছি একটা বছর অপেক্ষা থাকে সবার সঙ্গে দুর্গাপূজায় আমরা একত্রে আনন্দ করব।
অনণ্যা সাহা বলেন, আমাদের মন্দিরের পাশে মসজিদ আমরা যেমন মুসলমানদের ঈদে আনন্দ করি তেমনি আমাদের পূজায় মুসলমানরাও আনন্দ করে আমরা সবাই একসঙ্গে পূজা উদযাপন করি।
পূজা মন্দিরের সভাপতি লিটন কুমার সাহা কালবেলাকে বলেন, আমাদের এখানে কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা নাই। আমরা একে অপরের সঙ্গে প্রায় ৫৪ বছর ধরে পূজা উদযাপন করে আসছি। পূজা উদযাপনে কাউকে কিছু বলতে হয় না। তাদের নিজ নিজ দায়িত্বে তারা তাদের ধর্মীয় উৎসব পালন করে যাচ্ছে।
মসজিদের ইমাম মো. আব্দুল লতিফ কালবেলাকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমি এই মসজিদের ইমামতি করে আসছি। ইমামতির বয়স প্রায় ৩৭ বছর। এই বয়সে আমি দেখতে পেলাম নাগরপুর উপজেলায় চৌধুরীবাড়ী ও মন্দির একই উঠানে একটি দেয়ালে বন্দি। এখানকার মুসলমানরা সব সময়ের জন্য মন্দিরের প্রতি খেয়াল রাখেন যাতে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে পূজায়।
নাগরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপ ভৌমিক কালবেলাকে বলেন, এখানে প্রায় ৫৪ বছর ধরে পূজা অনুষ্ঠান হয়ে আসছে। সনাতন ধর্মের লোক ও মুসলিম ধর্মের লোক তারা উভয়ের মধ্যে সু-সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। এখানে কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে না। এছাড়াও আমরা নাগরপুরের প্রশাসন পূজার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকব।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম সানতু কালবেলাকে বলেন, এই নাগরপুরে দীর্ঘ ৫৪ বছর ধরে মসজিদ ও মন্দিরে প্রত্যেক ধর্মের মানুষ নিজ নিজ ধর্ম সম্প্রতি বজায় রেখে পালন করে আসছে। এই এলাকার মানুষের মধ্যে সামাজিক যে বন্ধন সেটি বিদ্যমান আছে। নাগরপুরের এই দৃষ্টান্ত প্রমাণ করে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এই দৃষ্টান্ত যদি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া যায় তবে বিশ্ব থেকে দূর হবে সাম্প্রদায়িক হানাহানি।
মন্তব্য করুন