দুই দশক আগেও কদর ছিল ডাক বিভাগের। রানার চিঠি নিয়ে আসবেন- সে অপেক্ষায় থাকতে হতো। চিঠি আসবে প্রিয়জনের, স্বজনের কিংবা চাকরিপ্রত্যাশীদের জন্য; কিন্তু সবই অতীত হয়ে গেছে। এখন সরকারি নিয়োগের ক্ষেত্রে ডাক বিভাগের মাধ্যমে চিঠি পৌঁছায়, তাও গতিহীন অবস্থায়। ডিজিটালাইজেশনের কারণে ডাক বিভাগ গুরুত্ব হারিয়েছে বর্তমান প্রজন্মের কাছে। আগামী প্রজন্মের কাছে হয়তো ডাক বিভাগ গল্প হবে।
ত্রিশাল উপজেলার আব্দুল মমিন বলেন, ২০০২ সালে আগের দেশ-বিদেশ থেকে দৈনিক চিঠি আসত ৫ থেকে ৭শ করে। মাসে ১৭ থেকে ১৮ হাজারের মতো চিঠি আসত। সরকারি-বেসরকারি মিলে মাসে প্রায় ২৭শ চিঠি আসত অফিসে। টাঙ্গাইলের ভুয়াপুর উপজেলার ভারই গ্রামের একজন ব্যক্তির শুক্রবারে প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা ছিল। তার প্রবেশপত্র এসেছিল বৃহস্পতিবার দুপুরে। তখন পোস্ট অফিস চিঠি পাঠানো বন্ধ করে দেয়। ওই গ্রামে প্রবেশপত্র দিতে গিয়ে পরীক্ষার্থীকে পাওয়া যাচ্ছিল না। তখন মসজিদের মাইক দিয়ে মাইকিং করা হয়। দিনের বেলায় না পাওয়া গেলেও রাতে মাইকিং করার পর মাইকিং শুনে আমার কাছ থেকে প্রবেশপত্র নিয়ে যান। প্রবেশপত্র নিয়ে পরীক্ষা দেন এবং প্রাইমারি স্কুলের চাকরিও হয়। চাকরি হওয়ার পর পোস্ট অফিসে এসে চোখের পানি ছেড়ে দুহাত ধরে কেঁদে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও সরাসরি প্রভাব ফেলে সরকারি সেবা ডিজিটালাইজেশন। ম্যানুয়াল প্রক্রিয়াগুলো স্বয়ংক্রিয় করে এবং কাগজপত্র কমিয়ে ডিজিটালাইজেশন সরকারি সেবাগুলো সহজ এবং দ্রুততর করেছে, যা তাদের দক্ষতা এবং উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করেছে। কর সংগ্রহ, পাসপোর্ট ও ভিসা প্রদান, জমি নিবন্ধন ও স্বাস্থ্যসেবাসহ বিভিন্ন জনসেবাকে ডিজিটালাইজ করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে; কিন্তু অনেকের ডিজিটালাইজেশনের ধারণা নেই। ইন্টারনেটের এ যুগে প্রয়োজন কমেছে ডাক যোগাযোগের।
কোনাবাড়ি গ্রামের শাহজাহান জানান, আমার জীবনে অনেক সরকারি পরীক্ষা দিয়েছি। প্রথমদিকে পরীক্ষায় না টিকলেও যখন চাকরির পরীক্ষার জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নেই। তখন আমার অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পরীক্ষার প্রবেশপত্র পাই পরীক্ষার তিন দিন পর।
ময়মনসিংহ মহানগর সুজনের সম্পাদক আলী ইউসুফ বলেন, সেবাগ্রহীতার সঙ্গে ডাক বিভাগের সমন্বয় করতে না পারা এবং খেয়ালিপনা করার কারণে ডাক বিভাগের গুরুত্ব কমে গেছে। যে চিঠিটা একই স্থানে সরকারিভাবে ১০ টাকায় পৌঁছে দেয়, সেই চিঠি মানুষ তড়িৎসেবা পেতে ১০০ টাকা ব্যয় করে। সাধারণ মানুষ টাকার দিকে তাকায় না, তারা চায় দ্রুত সেবা। ডাক বিভাগ ব্যর্থ হয়েছে মানুষকে সেবা দিতে।
ধোবাউড়া উপজেলার চারুয়া পাড়া গ্রামের পোস্টমাস্টার মো. মুস্তাকিম বলেন, আমি বিএ পাস করে ডাক বিভাগে ২১০০ টাকায় চাকরি শুরু করার পর বর্তমানে বেতন পাই ৪ হাজার ৪৬০ টাকা। আমাদের সুযোগ-সুবিধা নেই।
ময়মনসিংহ প্রধান ডাকঘরের হিসাব অনুযায়ী, ১০টি উপজেলা পোস্ট অফিস, ১৭টি সাব-পোস্ট অফিস এবং ৩০২টি শাখা অফিস রয়েছে।
ময়মনসিংহ প্রধান ডাকঘরের সহকারী পোস্টমাস্টার জেনারেল আব্দুর রাাজ্জাক বলেন, প্রধান ডাকঘর গ্রাহকের চিঠিপত্র, ডকুমেন্ট, পার্সেল ইত্যাদি সাশ্রয়ী রেটে বুকিং নিয়ে সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় পরিবহন করে দেশ-বিদেশে অবস্থানরত নির্ধারিত প্রাপকের কাছে পৌঁছানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করে থাকি।
তিনি বলেন, দেশের সাধারণ জনগণের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় ময়মনসিংহ প্রধান ডাকঘরের রয়েছে ডাক জীবন বিমা সার্ভিস। এখানে জীবন বীমাসহ বিভিন্ন মেয়াদি, শিক্ষা ও বিবাহ বীমা পলিসি গ্রহণের সুযোগ রয়েছে।
মন্তব্য করুন