‘নাই টেলিফোন, নাইরে পিয়ন, নাইরে টেলিগ্রাম, বন্ধুর কাছে মনের খবর কেমনে পৌঁছাইতাম’ একসময়কার গানের কলি আজ অতীত। একালে হারিয়ে গেছে সেকালের চিঠির লালবাক্স। দেখা মেলে না ডাক পিয়ন ও চিঠি বহনকারী ছোট্ট ভটভটির। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যাই আছে সবই মরীচীকা ধরা। একসময় চিঠিপত্রই ছিল যোগাযোগমাধ্যমের অন্যতম। নিকট আত্মীয়-পরিজনের পাশাপাশি প্রিয় মানুষের কাছে চিঠিপত্র পাঠানোর জন্য রাস্তার পাশে বসানো হয়েছিল লাল রঙের ডাকবাক্স। আর সেই ডাকবাক্সে চিঠি ফেলার পর মানুষ অপেক্ষা করত কখন তার প্রিয়জন সেই চিঠি পাবে।
সাধারণ মানুষের ভাষ্য, ডিজিটাল যুগে অ্যানালগ মূল্যহীন। আগে কাগুজে চিঠি লিখার চর্চা ছিল। এখন প্রায়ই হারিয়ে গেছে। কাগুজের লিখা চিঠি এখন রূপ নিয়েছে ডিজিটালে। এসএমএসের মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যে চিঠি পৌঁছে যাচ্ছে প্রিয়জন, স্ত্রী ও স্বজনের কাছে। সময়ও কম, খরচও কম। অন্যতম সুবিধা হলো, হাত না ঘুরে সরাসরি আদান-প্রদান। ডাকপিয়নের অপেক্ষা কিংবা পোস্ট অফিসে গিয়ে চিঠি আসার খবর নিতে হচ্ছে না। ফলে ডিজিটালের প্রভাবে হারিয়ে গেছে অ্যানালগ। যদিও সরকারি চিঠিপত্র এখনো ডাকে আদান-প্রদান হয়ে থাকে।
আগ্রাবাদ পোস্ট অফিসের পোস্টমাস্টার সৈয়দ মাহবুবুল আলম কালবেলাকে বলেন, নব্বই দশকের দিকে চিঠির অনেক আদান-প্রদান হতো। চিঠি আসত বস্তায় বস্তায়। এখন অনেক কমেছে। ডিজিটালের যুগে মানুষ এসএমএস, হোয়াটসঅ্যাপ কিংবা মেইলে যোগাযোগ বাড়িয়েছে। সরকারি কার্যালয়ে চোখে পড়ে চিঠির বাক্স। প্রতিদিন সেখান থেকে চিঠি আনা হয়। অনেকে রেজিস্ট্রি চিঠি পাঠাচ্ছে। আমার জোন থেকে প্রতিমাসে প্রায় দুই লাখ টাকার রাজস্ব সরকার পায়। সে অনুপাতে আমাদের বেতন সীমিত। বেতনের দিক থেকে আমাদের প্রতি সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
এক জরিপে দেখা যায়, ২০০৪ সালেও দেশে ২৩ কোটি চিঠি লেনদেন হয়েছে। অথচ ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সাধারণ চিঠি আদান-প্রদান হয়েছে ৫ কোটি আর ২০১৪-১৫ সালে হয়েছে ৪ কোটি। এভাবেই প্রতি বছর ব্যক্তিগত চিঠির ব্যবহার দিন দিন কমছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, চিঠি লেখার মধ্যে আনন্দ আছে। অনেক সময় মনের ভাব মুখে বলা হয়ে ওঠে না। কিন্তু চিঠি লেখার মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায়। আমি মনে করি চিঠি লেখার বিষয়টা জাগ্রত করা বা জিইয়ে রাখা প্রয়োজন। চিঠি লিখলে মানুষের যেমন ভাষার চর্চা হয় তেমনি লেখারও চর্চা থাকে। পাশাপাশি মানুষের মনের ভাব প্রকাশের চর্চা থাকে।
মন্তব্য করুন