লালবর্ণের ডাকবাক্সগুলো প্রায় হারিয়ে গেছে মানিকগঞ্জ থেকে। কাঁধে খাকি রঙের বস্তা নিয়ে গ্রামের পথে ডাক হরকরার ছুটে চলার দৃশ্য এখন আর চোখে পড়ে না। ডাকঘরে খাম, পোস্টকার্ড, ডাকটিকিট থাকলেও তা বিক্রি কমেছে অনেক।
আধুনিকতার তথ্যপ্রযুক্তির যুগে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অগ্রগতি ও উন্নয়নের প্রতিযোগিতায় ডাক বিভাগ অনেকটাই পিছিয়ে। এ জেলার ছড়িয়ে রয়েছে ১৩৭টি ডাক অফিস। দশক দুয়েক আগেও এগুলো সচল ছিল। তবে ডাক বিভাগের কর্মকতারা বলছেন জনবলসহ যানবাহন কম থাকায় পিছিয়ে রয়েছে ডাক বিভাগ।
ডাক বিভাগের অফিস সূত্রে জানা যায়, এই জেলার ৭টি উপজেলায় ডাক বিভাগের শাখা অফিস রয়েছে ১২৭টি উপশাখা অফিস ৩টি এবং সদরে প্রধান শাখাসহ ৬টি উপজেলায় রয়েছে আরও ৭টি ডাক অফিস। উপশাখা ৩টিসহ সাত উপজেলা ডাক বিভাগ অফিসে কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন মাত্র ৫৬ জন, যা প্রয়োজনের চেয়ে প্রায় অর্ধেকেরও কম। জেলার প্রান্তিক গ্রামের ১২৭টি শাখা ডাক অফিসে জনবল রয়েছেন ২৮৫ জন। এখানেও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
এই জেলার মানুষ মনে করেন, ডাক বিভাগের সেবাগুলো বেশিরভাগই এখনো এনালগ পদ্ধতির হওয়ায় সেগুলো চাহিদা অনুযায়ী সময়োপযোগী ও তুলনামূলক গুণগত মানসম্পন্ন সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে পারছে না। ইতোপূর্বে ডাক বিভাগের সেবার ধরনে পরিবর্তন ও কিছু সেবা আধুনিকায়ন করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও সেসব বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি নেই। ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানটি এখন অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম করছে বলে মনে করা হচ্ছে।
জেলার সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বিশ্বাস বলেন, ডাক বিভাগের সোনালি দিন ফিরিয়ে আনতে হলে কর্মপরিধি ও সেবার মান বাড়ানো প্রয়োজন। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষের যুগে টিকে থাকতে হলে ডাক বিভাগকেও আমূল পরিবর্তন করতে হবে। যেমন ইমেইল, কুরিয়ার সার্ভিসসহ বেসরকারি পর্যায়ে পরিচালিত সেবাগুলোর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে কীভাবে দেড়শ বছরের পুরোনো প্রতিষ্ঠানকে পুনরুজ্জীবিত করা যায়, সেই পথ ও উপায় খুঁজে বের করতে হবে।
তিনি বলেন, সঠিক ও যুগোপযোগী পরিকল্পনা, ডিজিটাল সামগ্রীর ব্যবহার, প্রশিক্ষিত জনবল নিয়োগ, নিজস্ব মোবাইল ব্যাংকিং সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানো, প্রত্যন্ত অঞ্চলের অফিসগুলোর সংস্কার, দ্রুত চিঠির আদান-প্রদানে ব্যবস্থা করাসহ যুগপোযোগী উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেই সুদিন ফিরবে ডাক বিভাগের বলে মনে করা হয়।
মানিকগঞ্জ প্রধান ডাকঘরের পোস্টমাস্টার কালবেলাকে বলেন, আমাদের জনবলসহ যানবাহন কম থাকায় সেবা প্রদানে কিছুটা বাধাগ্রস্ত হলেও আমরা চেষ্টা করি জনগণকে সঠিক সময়ে সঠিক সেবা দিতে। তবে প্রিয়জনদের কাছে হাতে লেখা চিঠি বন্ধ পওয়ার পর থেকেই কমেছে ডাক বিভাগের গুরুত্ব বলে মনে করেন তিনি।
মন্তব্য করুন