কে এম রাশেদ কামাল, মাদারীপুর
প্রকাশ : ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:৪৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

‘এহন আর কেউ চিডি পাডায় না, পিয়নও আহে না’

মাদারীপুরের খোয়াজপুর ইউনিয়নের পোস্ট অফিস। ছবি : কালবেলা
মাদারীপুরের খোয়াজপুর ইউনিয়নের পোস্ট অফিস। ছবি : কালবেলা

‘আমার ভাই যহন চিডি পাডাইতো, মাইনষেরে দিয়া চিডিখান বারবার পড়াইতাম। এক চিডি যে কয়বার পড়াইছি, তা কইতে পারমু না। পাশের বাড়ির এক ছোড ভাইরে দিয়া চিডির উত্তর লেহাইতাম। এহন আর কেউ চিডি পাডায় না, পিয়নও আহে না।’

কালবেলার প্রতিবেদকের কাছে এভাবেই স্মৃতি রোমন্থন করছিলেন মাদারীপুর সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা আ. সালাম বেপারি। প্রায় ২৫ বছর আগে বড় ভাই কালাম বেপারি ঢাকায় বাইং হাউজে জব করতেন। পরিবারের খোঁজ নিতে গ্রামে যখন চিঠি পাঠাতেন, লেখাপড়া না জানা সালাম বেপারি চিঠিখানা হাতে পেয়েই প্রতিবেশী একমাত্র কলেজ পড়ুয়া ছোট ভাইয়ের কাছে চলে যেতেন চিঠিখানা পড়াতে।

জেলা পোস্ট অফিস সূত্রে জানা যায়, মাদারীপুর জেলায় পোস্ট অফিসের সংখ্যা ৯৫টি। এর মধ্যে একটি প্রধান ডাকঘর, তিনটি উপজেলা পোস্ট অফিস, তিনটি সাব-অফিস এবং ৮৮টি শাখা অফিস রয়েছে। ডাকঘরের গ্রাম পর্যায়ের শাখা অফিসে পোস্টম্যানরা নামমাত্র সম্মানীর বিনিময়ে বাইসাইকেলে চড়ে কেউবা আবার হেঁটে প্রেরকের পাঠানো চিঠি প্রাপকের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরে। খোয়াজপুর ইউনিয়ন (শাখা অফিস) পোস্ট অফিসের ডাকপিয়ন (রানার) মো. মোতালেব কবিরাজের সঙ্গে কথা হয় দৈনিক কালবেলা প্রতিবেদকের।

তিনি ১৯৮৬ সাল থেকে মঠের বাজার শাখা অফিসের পোস্টম্যান হিসেবে কর্মরত আছেন। অসংখ্য মানুষের বাড়ি গিয়ে তাদের চিঠি, পোস্টাল অর্ডার এবং বিভিন্ন ডকুমেন্ট পৌঁছে দিয়েছেন।

মোতালেব কবিরাজ বলেন, ১৯৮৬ সালে মাত্র ৩১০ টাকা সম্মানীর বিনিময়ে পোস্টম্যান হিসেবে আমি জয়েন করি। আজ ২০২৪ সাল, অথচ এখন আমার মাসিক সম্মানী মাত্র ৪ হাজার ৩৫৪ টাকা। আমাদের নেই কোনো পেনশন সুবিধা। এভাবেই চলছে আমাদের জীবন। আমাদের অবস্থা দেখার কেউ নেই।’

তার জীবনের স্মরণীয় ঘটনা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, আমার ইউনিয়নের সবচেয়ে দূরবর্তী জায়গা হচ্ছে চর গোবিন্দপুর উত্তরকান্দি। আজ থেকে ২৫ বছর আগের কথা। ওই এলাকার আব্দুর রাজ্জাক মিয়ার তিন ছেলে সৌদি আরব থাকত। প্রবল বৃষ্টির মধ্যে হেঁটে একবার তাদের বাড়িতে একটি চিঠি পৌঁছে দিতে গিয়ে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা আটকে পড়েছিলাম। সন্ধ্যার পরে বাসায় ফিরেছি। সেদিন আর অন্য কোনো চিঠি বিলি করতে পারিনি। তবে তারা আমাকে সেদিন যথেষ্ট আপ্যায়ন করেছিলেন। সেদিনের বিষয়টি আমার খুব মনে আছে।’

বেশিরভাগ মানুষ সরকারি ডাক বিভাগের পরিবর্তে বেসরকারি কুরিয়ারের মাধ্যমে চিঠি, ডকুমেন্টস এবং পার্সেল আদান-প্রদান করে থাকেন।

মাদারীপুর প্রধান ডাকঘরের ভারপ্রাপ্ত পোস্টমাস্টার শাহাবুদ্দিন সোহেল জানান, ‘মাদারীপুরে প্রধান ডাকঘর, উপজেলা ডাকঘর এবং গ্রাম পর্যায়ের শাখা অফিসসহ মোট ৯৫টি অফিসের মাধ্যমে আমরা সেবা দিয়ে থাকি। আগের থেকে আমরা অনেক আধুনিক সেবা দিয়ে থাকি এখন। চিঠি, পার্সেল, মানিঅর্ডারসহ বিভিন্ন ধরনের আধুনিক সেবা দিয়ে যাচ্ছি। সঞ্চয়পত্রের কার্যক্রম, জমাজমির পর্চা উত্তোলন, পাসপোর্টের কাগজপত্র প্রক্রিয়াকরণসহ অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন সেবা দিয়ে আসছে ডাক বিভাগ।’

মাদারীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের কার্যকরী সদস্য শহিদুল ইসলাম রাহাত বলেন, ‘সরকারি ডাক বিভাগকে আরও জনপ্রিয় করতে হলে তাদের সেবার মান আরও উন্নত করতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের সেবাগুলো জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিসিবির পরিচালক প্রশ্নে যা বললেন তামিম

মোখলেস উর রহমানকে জীবন বিমা করপোরেশনের চেয়ারম্যান নিয়োগ

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন প্রতিনিধিদলের ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন

প্রথম দিনে বাফুফে সভাপতি পদে বিক্রি হয়নি কোনো মনোনয়ন

ম্যাজিস্ট্রেট উর্মির বিরুদ্ধে এবার লালমনিরহাটে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলার আবেদন

ডিজিটালাইজেশনের কারণে ডাক বিভাগ গুরুত্ব হারিয়েছে

সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যায় ঢাকার কড়া প্রতিবাদ

৬৫ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে হার মানলেন গুলিবিদ্ধ জীবন

‘পরোক্ষ ধূমপানে মা ও শিশু উভয়ের মৃত্যুর মতো ঘটনা বাড়ছে’

সিভাসুতে অস্থিরতা / ক্যাম্পাস ছেড়ে সড়কে শিক্ষার্থীরা

১০

শেরপুর-ময়মনসিংহ-নেত্রকোনায় এখনো পানিবন্দি ৬৩ হাজার পরিবার

১১

চিঠি লেখায় উদ্বুদ্ধ করা প্রয়োজন

১২

পাবিপ্রবিতে ছাত্রীর সঙ্গে শিক্ষকের অনৈতিক সম্পর্ক, অতঃপর...

১৩

সিরিজে সমতা ফেরানোর লক্ষ্যে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ

১৪

‘প্রতিবন্ধী অধিকার ও সুরক্ষা আইন সংশোধন প্রয়োজন’

১৫

‘আনন্দঘন পরিবেশে প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপন করবেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা’

১৬

সাংবাদিক তুরাব হত্যা মামলার তদন্ত শুরু করল পিবিআই

১৭

কিছুটা শক্তি কমলো হারিকেন মিল্টনের, এগোচ্ছে দ্রুত

১৮

ভোক্তা অধিকারের অভিযানে দোকান ফেলে পালালেন ব্যবসায়ীরা

১৯

৯০ হাজার টন সার কিনবে সরকার

২০
X