গাজীপুরের টঙ্গীতে শত বছরের পয়ঃনিষ্কাশন ড্রেন বন্ধ করে ফ্ল্যাট ব্যবসা করার উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে ড্রেনের উপর মাটি দিয়ে রাস্তা নির্মাণের পাঁয়তারা করছেন নামধারী জামায়াত নেতারা। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সোমবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টঙ্গী পশ্চিম থানা এলাকার পয়ঃনিষ্কাশনের পানি আরসিসি ড্রেনের মাধ্যমে তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসার সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভিতর দিয়ে বিশাল বড় ড্রেনের মাধ্যমে তুরাগ নদীতে ময়লা পানি ফেলে দেওয়া হতো।
তবে, কিছু অসাধু ফ্ল্যাট ব্যবসায়ী নিজেদের স্বার্থে কালভার্ট বসিয়ে প্রায় ড্রেন বন্ধ করে রাতের আঁধারে রাস্তা নির্মাণের পাঁয়তারা করছেন। এতে ময়লা পানি যাওয়ায় বিঘ্ন ঘটছে। কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে পশ্চিম থানা এলাকার খাঁ-পাড়া রাস্তা ও প্রতিটি অলিগলির রাস্তায় হাঁটুসমান পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। রাস্তায় চলাচলকারী সাধারণ মানুষ ও স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের চরম স্বাস্থ্যঝুঁকি ও বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে।
কয়েকজন রিকশাওয়ালার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগে বৃষ্টি হলে রাস্তায় পানি জমলে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে চলে যেত, কিন্তু এখন যাচ্ছে না। তাতে আমাদের রিকশার ইঞ্জিনের ক্ষতি হচ্ছে।
ভুক্তভোগী এলাকাবাসী জানান, শত বছরের পুরোনো ড্রেন কিছু নামধারী জামায়াত নেতা দাবি করা ফ্ল্যাট ব্যবসায়ী কালভার্ট দিয়ে ড্রেন বন্ধ করে রাস্তা নির্মাণ করছেন। এতে টঙ্গী পশ্চিম থানা এলাকার খাঁ-পাড়া, সাতাইশ, গাজীপুরা, তিলেরগাতি, মুক্তারবাড়ি, কলেজ গেটসহ বিভিন্ন জায়গায় হাঁটুসমান পানি জমে আছে। ড্রেন বন্ধ করায় পানি যেতে পারছে না। রাস্তার পাশে বিভিন্ন দোকানে পানি ঢুকে যাওয়া দোকান করে কষ্টে আছেন অনেক ছোট ছোট দোকানদার।
জানা মতে, এ বিষয় নিয়ে গাজীপুরের কয়েকজন বিএনপি নেতা ও এলাকাবাসীদের সঙ্গে জামায়াত নেতাদের আলোচনা হলেও তাৎক্ষণিক কোনো সমাধান হয়নি।
কথা হয় বিএনপি নেতা মো. হাতেম খান মাস্টারের সঙ্গে। তিনি জানান, এই শত বছরের পুরোনো ড্রেন দিয়ে টঙ্গী পশ্চিম থানা এলাকার সব শাখা ড্রেনের পানি এই বড় ড্রেন দিয়ে তুরাগ নদীতে নামানো হয়। এটি বন্ধ হয়ে গেলে আগামী বর্ষায় স্থানীয়দের বসতঘর ও আঙিনায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে। এতে করে জনদুর্ভোগ বাড়বে। মুষ্টিমেয় কয়েকজন ফ্ল্যাট ব্যবসায়ী নিজেদের স্বার্থে এ ড্রেন বন্ধ করার পাঁয়তারা করছেন।
এ বিষয়ে গাজীপুর মহানগর জামায়াতের শূরা সদস্য ও ফ্ল্যাট ব্যবসায়ী মো. ফারুক আহমেদের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, সিটি করপোরেশনের ড্রেন আপনারা বন্ধ করতে পারেন কি না। জবাবে তিনি বলেন, আমাদের মালিকানার জায়গা দিয়ে ৪টি ওয়ার্ডের ময়লা পানি প্রবাহিত হয়। ড্রেন করার সময় আমাদের টাকা দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু দেওয়া হয়নি। ৫৪নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মো. বিল্লাল হোসেন মোল্লা তাদের লিখিত অনুমতি দিয়েছেন। ড্রেন বন্ধ করার অনুমতি দেওয়ার ক্ষমতা কাউন্সিলরের আছে কি না জানতে চাইলে কথা ঘুরিয়ে অন্য কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন সরকারের বাসায় আমরা জামায়াত নেতাসহ বসেছিলাম; কথা হয়েছে এ বিষয় নিয়ে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে গাসিক টঙ্গী জোন (অঞ্চল-১)-এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, আমরা তাদের চিঠি দিয়েছি কিন্তু তারা জবাব দেয়নি। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করে আমরা সেটা ভেঙে দেব।
মন্তব্য করুন