রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের মুন্সি বাজার এলাকায় পদ্মা নদীর পানি কমতে শুরু করায় ফের নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। ফলে একদিনে অন্তত ৫০ মিটার কৃষিজমি পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। এতে করে ভাঙন আতঙ্কে রয়েছেন কয়েকশ পরিবার।
মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, দেবগ্রাম ইউনিয়নের মুন্সি বাজার এলাকার বেশ কয়েকটি বাড়ি ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। চোখের সামনে আবাদি জমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভাঙন আতঙ্কে শত শত পরিবার নদীর পারে দিন কাটাচ্ছেন। ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীনের আগেই ৭-৮টি পরিবার ঘরবাড়ি ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। এখানে যারা বসবাস করতেন তাদের অধিকাংশ কয়েকদফা নদীভাঙনের শিকার হয়ে এখানে বসবাস করছিলেন। অনেকের ছিল মাঠে শত বিঘা ফসলি জমি, গোয়ালে গরু আর গোলা ভরা ধান। এখন এগুলো সবই স্মৃতি।
মুন্সি বাজার এলাকায় বাস করা সাহিদা আক্তার নামে এক নারী বলেন, স্বামীর এই বসতভিটায় আর হয়তো থাকতে পারব না। এই রান্না হয়তো শেষ রান্না। এই রান্না আমি শেষ করতে নাও পারি। কারণ নদীভাঙন শুরু হলে দৌড়ে পালানো লাগবে। সারা রাত ঘুমাই না, জেগে থাকি, কখন যেন এই বসতভিটা নদীতে চলে যায়। ঘরে দুই শিশু সন্তান আছে, স্বামীর শেষ সম্বল জায়গাটুকু সেটাও নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। এখন আমরা কোথায় যাব, কী খাব একমাত্র উপরওয়ালা জানে।
একই এলাকার সাদ্দাম সরদার বলেন, সব হারানোর পথে। আমার সব শেষ। এই বাড়ি নদীতে চলে গেলে ছেলেমেয়েদের নিয়ে কোথায়ও দাঁড়ানোর জায়গা নেই। সারা রাত ঘুম হয় না। কোথায় গিয়ে, কী করে চলব।
দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলাম বলেন, ইতোমধ্যে উপজেলা থেকে একটি প্রতিবেদন চেয়েছে এ ব্যাপারে। সেটা জমা দিব। দীর্ঘদিন ধরে নদী ভাঙন চলছে। দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প না নিলে মানচিত্র থেকে দেবগ্রাম ইউনিয়ন পুরোপুরি হারিয়ে যাবে।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র বলেন, ভাঙনের খবর শোনামাত্রই আমি ভাঙনকবলিত স্থানগুলো পরিদর্শন করেছি। ভাঙনরোধে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে আমি ঊর্ধ্বতনদের জানিয়েছি।
রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী এম এ শামীম কালবেলাকে বলেন, আমরা ভাঙনকবলিত জায়গা পরিদর্শন করেছি। ভাঙনের বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারা আমাদের যেভাবে নির্দেশনা দেবে আমরা পরবর্তীতে সেভাবে কাজ করব।
মন্তব্য করুন