চাঁদপুরের পদ্মা, মেঘনা নদীর ইলিশের চাহিদা তুঙ্গে হওয়ায় দেড় মণ ধানের দামেও মিলছে না ২ কেজি ওজনের ১টি ইলিশ। আর এতে করে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের মাঝেই বিরাজ করছে নীরব হতাশা। তবে উচ্চমূল্যের এ ইলিশের দাম আগামীতে কমার চেয়ে আরও বাড়ারই ইঙ্গিত দিলেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
সোমবার (৭ অক্টোবর) সকালে শহরের বড় স্টেশন মাছঘাটে ইলিশের দাম দেখে ক্রেতারা ধানের দামের সঙ্গে তুলনা করলে এ তথ্য পাওয়া যায়।
চাঁদপুর সিএসডি গোডাউনের ম্যানেজার রবিন্দ্রলাল চাকমা বলেন, বর্তমানে ১ কেজি চাল ৪৫ টাকা করে হলে ১ মণ চালের দাম ১৮০০ টাকা এবং ৩২ টাকা কেজি দরে ধান সরকারিভাবে ক্রয় করা হওয়ায় এক মণ ধানের দাম ১২০০ টাকা। অথচ দুই কেজি ওজনের ১টি ইলিশের দাম হচ্ছে কমপক্ষে ২৪০০ টাকা। যা তুলনামূলক অনেক বেশি। অর্থাৎ ২ কেজি ওজনের ১টি ইলিশ মাছ কিনতে হলে অন্তত দুই মণ ধান কৃষককে বিক্রি করতে হবে। যা করে সাধারণ শ্রেণিপেশার মানুষের সবার পক্ষে বড় ইলিশ খাওয়া সম্ভব নয়।
বড়স্টেশন মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে জেলেদের জালে বড় সাইজের ইলিশ ধরা পড়ছে কম। তার ওপর চাঁদপুরের পদ্মা মেঘনার ইলিশের যে পরিমাণ বাজারে চাহিদা, সে পরিমাণ ইলিশ ঘাটে জেলেরা আনছেন না। তাই বেশি দামে মণ প্রতি ইলিশ কিনতে হচ্ছে বলেই সামঞ্জস্যতা রেখে সে হিসেবে আকার অনুযায়ী ইলিশ বিক্রি করতে হচ্ছে।
ক্রেতারা বলছেন, গরিব ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে চলে গেছে ইলিশের দাম। মধ্যবিত্তরা ইলিশ কিনলেও বড় সাইজের ইলিশ একেবারেই কিনে কম। তারা মূলত ১ কেজি বা তার চেয়ে আকারে ছোট ওইসব ইলিশ কিনে নিজেদের আকাঙ্ক্ষা মিটাচ্ছেন।
চাঁদপুর বড় স্টেশন মৎস্য আড়তে গেলে দেখা যায়, ৩শ হতে ৪শ গ্রামের ইলিশের দাম কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫শ হতে ৬শ টাকা, ৫শ হতে ৭শ গ্রামের ইলিশের দাম ১১শ টাকা, ৮শ হতে ১১শ ওজনের ইলিশ কেজি প্রতি ১৭শ হতে ১৮শ টাকা, দেড় কেজি হতে ১৮শ গ্রামের ইলিশ ২২শ হতে ২৩শ টাকা এবং ২ কেজি বা তারচেয়ে কিছুটা বেশি ওজনের ইলিশের দাম ২৪শ হতে ২৫শ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।
জেলেরা বলছেন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা নদীতে জাল নিয়ে টানাটানি করেও তেমন আশানুরূপ বড় ইলিশ পাচ্ছি না। তাই তেলের দাম এবং নিজেদের পারিশ্রমিক পুষিয়ে নিতে ইলিশ মণ প্রতি আড়তগুলোতে উচ্চমূল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে।
চাঁদপুর মৎস্য সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজি শবে বরাত কালবেলাকে জানান, বর্তমানে বড় সাইজের ইলিশ অধিকাংশই চাঁদপুরের বাইরের। যা চাহিদা মেটাতে সক্ষম নয়। এখন দিনে গড়ে ৪শ থেকে ৫শ মণ ইলিশ ঘাটে আসছে। এর মধ্যে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার বড় আকারের ইলিশের ওজন সর্বোচ্চ দেখা গেছে দেড় কেজি হচ্ছে। তবে দাম যা আছে তা দুর্গাপূজা এবং ভারতে ইলিশ পাঠানোর প্রভাবে বাড়বে না। তবে দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় ইলিশের দাম কেজি প্রতি সামনে আরও বাড়তে পারে।
চাঁদপুর নদী কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আবু কাউছার দিদার কালবেলাকে বলেন, এখনো নদীর পানি ইলিশ বৃদ্ধির অনুকূলে রয়েছে। তাই বড় ইলিশ জেলেদের জালে ধরা না পড়ার তেমন কারণ নেই। আমাদের ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৬ লাখ টন ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
মন্তব্য করুন