শেরপুরে নদীর পানি কিছুটা কমেছ। ফলে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বন্যার পানি কমতে থাকায় বিধ্বস্ত বাড়িঘরে ফিরছে বন্যাদুর্গতরা। অন্যত্র আশ্রয় নেওয়া মানুষজনের অনেকে আসবাবপত্র নিয়ে নিজের ঘরে ফিরছে, আবার অনেকে বাড়িঘর মেরামত ও পরিষ্কার করছেন।
এদিকে গত চারদিনে বন্যার পানিতে নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও নকলা উপজেলায় মোট ৮ জন মারা গেছেন। এ ছাড়া এখনও পানিবন্দি সহস্রাধিক পরিবার। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নালিতাবাড়ী এবং ঝিনাইগাতী উপজেলার প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ। তাদের অনেকেরই মাটির ঘর পানির সঙ্গে মিশে গেছে।
শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্যমতে, সোমবার (৭ অক্টোবর) সকালে শেরপুরের ভোগাই নদীর নাকুগাঁও পয়েন্টের পানি বিপৎসীমা ৭৫ সেন্টিমিটার, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ৫৪০ সেন্টিমিটার, ভোগাই নদী নালিতাবাড়ি পয়েন্টে ১৩৮ সেন্টিমিটার এবং চেল্লাখালীর বাতকুচি পয়েন্টের পানি ৭৭ সেন্টিমিটার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জানা গেছে, শেরপুর জেলায় ৩০১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যাকবলিত হয়েছে। এর মধ্যে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ২৪২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। আর আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে ৫৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বেশি বন্যাকবলিত হয়েছে নালিতাবাড়ী উপজেলা। উপজেলার ১২ ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার ১২১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১১৯টি বন্ধ রয়েছে।
এ ছাড়া রাস্তায় অবস্থান করা মানুষের পাশেই রাখা হয়েছে গৃহপালিত গরু, ছাগল, ভেড়াসহ হাঁস-মুরগি। মাঠ ডুবে যাওয়ায় পশু খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে।
অন্যদিকে ঝিনাইগাতী এবং নালিতাবাড়ী উপজেলায় ২ হাজার ৫৭টি মাছের ঘের ভেসে গেছে। অন্তত ২০ হাজার হেক্টর আমন আবাদ এবং এক হাজার হেক্টর সবজির আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে অন্তত ৬৫ হাজার ৪০০ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুম রানা বলেন, নালিতাবাড়ীতে আমরা মোট ১২৩টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছি। কেন্দ্রগুলোতে শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। আজ নতুন করে কোনো বৃষ্টি হয়নি। এ ছাড়াও নদীর পানিও কমে গেছে। আমরা দুর্গত মানুষকে বাড়িতে ফেরানোর কাজ করছি। শেরপুর জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, শেরপুর জেলার তিনটি প্রধান নদীর পানিই আজ বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন দুর্গতদের মাঝে প্রায় ১৫ হাজার শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দুর্গতদের পুনর্বাসনের জন্য টিন ও নগদ অর্থের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পানি আরও একটু কমলেও ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে বিতরণ করা হবে।
মন্তব্য করুন