ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৪২ এএম
আপডেট : ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৫০ এএম
অনলাইন সংস্করণ

লিটনের শরীরে ৫ শতাধিক বুলেট

মায়ের পাশে লিটন। ছবি : কালবেলা
মায়ের পাশে লিটন। ছবি : কালবেলা

নিজের আয় দিয়ে পড়ালেখা চালাতেন লিটন (২০)। অভাবের সংসারে মাঝে মাঝে সংসারের খরচও চালাতে হতো। এখন পড়ালেখা তো বন্ধ, আবার সংসারে অভাবও বেড়েছে। পরিবার চালাতেই হিমশিম, সেখানে চিকিৎসা খরচ কীভাবে চলবে- সে চিন্তায় রয়েছেন লিটনের মা। অন্যদিকে লিটন পড়ালেখা ও সুস্থভাবে বেঁচে থাকার চিন্তায় সময় পার করছেন। টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসা হচ্ছে না তার।

গত ৪ আগস্ট ঠাকুরগাঁও শহরের কোর্ট চত্বর এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন লিটন। সেই গুলিতে ঝাঁঝরা হয়েছিল লিট‌নের পু‌রো শরীর। চি‌কিৎসকরা বল‌ছেন, লিট‌নের শরী‌রে এখনো ৫শর বেশি গু‌লি র‌য়ে গে‌ছে।

লিট‌নের বাড়ি ঠাকুরগাঁও পৌরশহ‌রের দ‌ক্ষিণ সালান্দর পাড়ার মিলন নগর মহল্লায়। বাবার নাম ইয়াকুব আলী। তিন ভাই‌য়ের মধ্যে লিটন সবার ছোট। তিনি ঠাকুরগাঁও সরকা‌রি ক‌লে‌জের অনার্স প্রথম বর্ষের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। একটি ওষুধের দোকানে চাকরি করে পড়ালেখার খরচ চালান লিটন।

লিট‌নের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, বিছানায় কাতরাচ্ছিলেন লিটন। তার পাশে হতাশা আর উদ্বিগ্ন হয়ে বসে আছেন তার মা। সন্তান সুস্থ হতে পারবে কি না, এ নিয়ে চিন্তিত তারা। মা লি‌লি বেগমের কপা‌লে চিন্তার ভাঁজ, আর চোখ বেয়ে ঝরছিল অশ্রু।

পু‌রো শরীরজু‌ড়ে গু‌লির ব‌্যথায় ছটফট কর‌তে থাকা লিটন কালবেলাকে জানান, গুলি লাগার পর শরীরের প্রতিটি জায়গা যেন অবশ হয়ে আছে। কোনো কাজ করতে পারি না, যা কিছু করতে হয়, একজন মানুষের সহযোগিতায় করতে হয়। বে‌শিক্ষণ দাঁড়ি‌য়েও থাক‌তে পা‌রি না, ব‌সেও থাক‌তে পা‌রি না। আবার গরম লাগ‌লে ব‌্যথার তীব্রতা বে‌ড়ে যায়। সারাক্ষণ বাতাস ও ঠান্ডা জায়গা‌তে থাক‌তে হয়। রা‌তে ঘুমাতে গে‌লে মাথায় বিদ্ধ গু‌লির যন্ত্রণায় ঘুম হয় না। বা‌লিশও মাথায় দেওয়া যায় না। এখন সরকারের কাছে একটি চাওয়া, আমার গুলি যেন বের করে দেওয়া হয়। ফের আমি যেন স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারি।

সেদিনের রোমহর্ষক ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে তিনি জানান, ছাত্রদের ডাকা সব কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন। গত ৪ আগস্ট দুপু‌রে শহ‌রের কোর্ট চত্বরের পূর্ব পা‌শের এক‌টি গলি‌তে শিক্ষার্থী‌দের এক‌টি অংশ অবস্থান ক‌রে। এ সময় পু‌লিশ তা‌দের গু‌লি না করার প্রতিশ্রু‌তি দি‌য়ে সেখান থে‌কে চ‌লে যাওয়ার কথা ব‌লে। এ সময় চ‌লে যাওয়ার সময় পেছন দিক থে‌কে লিট‌নের মাথায় গু‌লি ক‌রে পু‌লিশ। গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। কিছু সময় জ্ঞান হা‌রি‌য়ে ফে‌লেন। প‌রে জ্ঞান ফেরার পর উঠে দাঁড়ালে পুলিশ তা‌কে আবারও খুব কাছ থে‌কে এলোপাতা‌ড়ি ছররা গু‌লি কর‌তে থা‌কে। এতে তার পা থে‌কে মাথা পর্যন্ত সমস্ত শরী‌র গুলিবিদ্ধ হয়।

এ সময় কোনোরকম হামাগু‌ড়ি দি‌য়ে পা‌শের এক‌টি বা‌ড়ি‌তে আ‌শ্রয় নেন। ওই বা‌ড়ির লোকজন লিট‌নের রক্তঝরা মাথা কাপড় দি‌য়ে বেঁধে দেন। বা‌ড়ির লোকজন‌কে হাসপাতা‌লে নেওয়ার জন্য বারবার আকুতি জানাচ্ছিলেন লিটন। তবে তাকে পু‌লি‌শের ভ‌য়ে হাসপাতা‌লে নেননি কেউ। একপর্যা‌য়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা তাকেসহ গুলিবিদ্ধ অন্যদের হাসপাতা‌লে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায় বলে জানান লিটন। সেখানেও ভালো চিকিৎসা পাননি তিনি। প‌রে ওইদিন শহ‌রের এক‌টি ক্লি‌নি‌কে অস্ত্রোপচার ক‌রে ১২‌টি গু‌লি বের করা হয়।

তখন পু‌লিশ ও ছাত্রলী‌গের ভ‌য়ে ক্লি‌নিক ছাড়‌তে হয় তা‌কে। প‌রে ৬ তা‌রিখ পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। সেখানে তিন দিন চিকিৎসার পর রংপুর সেনাবা‌হিনী প‌রিচা‌লিত সিএমএইচ হাসপাতা‌লে দুই সপ্তাহ ভ‌র্তি থা‌কেন।

লিট‌নের মা লি‌লি বেগম কালবেলাকে বলেন, ‘আমা‌দের অভাবের সংসার, কোনোরকম ডাল-ভাত খাই‌য়ে জীবন যায়। বিছানায় ব্যথায় কাতরাচ্ছে ছে‌লেটা। এখন ভালো চিকিৎসা করানোর মতো কোনো টাকা-পয়সা আমাদের হাতে নাই’ এ ব‌লে দুচো‌খের পা‌নি ছে‌ড়ে দেন তি‌নি।

লিটনের এলাকাবাসী রফিকুল ইসলাম বলেন, লিটন এখন ব্যথায় কাতর। অনেক কষ্ট করে ছেলেটা নিজের পড়ালেখার খরচ চালাত। এখন চাকরিও নেই, আবার সংসারে অভাব। সবাই একটু সহযোগিতা করলে লিটন আবার আগের অবস্থায় ফিরতে পারবে।

লিট‌নের বর্তমান চি‌কিৎসক ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালের সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. শিহাব মাহমুদ শাহরিয়ার বলেন, ছররা গু‌লি য‌দি খুব অসু‌বিধা না হয়, তাহ‌লে এসব গু‌লি বের কর‌তে অনুৎসাহিত ক‌রি। কারণ মাথায় যে ১৫‌টি গু‌লি আছে, এর জন‌্য ১৫ বার তা‌র অস্ত্রোপচার কর‌তে হ‌বে। এত বিপুলসংখ‌্যক গু‌লি বের করা একেবা‌রে সম্ভব নয়।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, লিটনের সম্পর্কে আমরা খবর নিয়েছি। তার উন্নত চিকিৎসার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আজকের নামাজের সময়সূচি

প্রথম দিনে উইন্ডিজ তুলল ২৫০ রান

গাঁজা-জাল নোটসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের শীতবস্ত্র বিতরণ

উইন্ডিজের প্রতিরোধ ভেঙে বাংলাদেশের স্বস্তি

টাইম ম্যাগাজিনকে ড. ইউনূস / ট্রাম্প ব্যবসায়ী, আমরাও একজন ব্যবসায়িক অংশীদার চাই

২০২৪ সালের হাইয়েস্ট কালেকশন দরদের : শাকিব 

নায়িকা পরীমনির প্রথম স্বামী নিহত

রাজনীতিতে আ.লীগের পুনর্বাসন ঠেকাতে হবে: নুর

নির্বাচন যত দ্রুত হবে, সমস্যা তত কমে আসবে : মির্জা ফখরুল

১০

খাসজমির দখল নিয়ে সংঘর্ষে দুজন নিহত

১১

মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে ক্রীড়াঙ্গন অন্যতম একটি মাধ্যম : আমিনুল হক 

১২

তারেক রহমানের আর্থিক সহায়তা নিয়ে সিয়ামের বাড়িতে মীর হেলাল

১৩

আহত রানার পাশে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’

১৪

ফেসবুকে দাবি ‘মুগ্ধ ও স্নিগ্ধ একই ব্যক্তি’, যা বলছে ফ্যাক্ট চেক

১৫

একদিকে প্রশান্তি, অশান্তিও বিরাজ করছে: শামা ওবায়েদ

১৬

চোর সন্দেহে খুঁটিতে বেঁধে যুবককে নির্যাতন

১৭

র‍্যানকন মটরসের সঙ্গে ক্র্যাক প্লাটুন চার্জিং সলুশনের চুক্তি

১৮

জনকল্যাণে কাজ করাই বিএনপির মূল লক্ষ্য : নয়ন

১৯

‘এক ফ্যাসিস্টকে হটিয়ে আরেক ফ্যাসিস্টকে ক্ষমতায় দেখতে চাই না’

২০
X