বেসরকারি এনজিও সাতক্ষীরা উন্নয়ন সংস্থার (সাস) পরিচালক ঈমান আলীর বিরুদ্ধে শিক্ষকদের বেতন বোনাস না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। চলতি বছরের বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা।
শিক্ষকদের অভিযোগ, সাতক্ষীরার ছয় উপজেলার ৪২০টি উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রকল্পের ৪২০ জন শিক্ষকের চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসের বেতন ও দুই ঈদের বোনাস বকেয়া রয়েছে। এ ঘটনায় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করে স্মারকলিপি দিয়েছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঝরে পড়া বা বিদ্যালয়ে ভর্তি না হওয়া ৮-১৪ বছর বয়সী শিশুদের দ্বিতীয়বার প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ ও আনুষ্ঠানিক শিক্ষার মূলধারায় ফিরে আনতে আউট অব স্কুল চিলড্রেন এডুকেশন প্রোগ্রামের আওতায় উপানুষ্টানিক শিক্ষা ব্যুরোর বাস্তবায়নে দায়িত্ব পায় সাতক্ষীরা উন্নয়ন সংস্থা (সাস)। সাতক্ষীরা জেলার ছয়টি উপজেলায় মোট ৪২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঝরে পড়া ছিন্নমূল বাচ্চাদের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় ২০২১ সালে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদরে ৭৭টি, তালা উপজেলায় ৭০টি, আশাশুনি উপজেলায় ৮৩টি, দেবহাটা উপজেলায় ৫০টি, কালীগঞ্জ উপজেলায় ৭০টি ও কলারোয়া উপজেলায় ৭০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, সাতক্ষীরা উন্নয়ন সংস্থার (সাস) পরিচালক ইমান আলী স্থানীয় আওয়ামী লীগের একজন ডোনার। আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাব খাটিয়ে তিনি বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে আসছিল। এনজিওর কার্যক্রম ভালোভাবে চালাতে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে উপজেলা পরিষদ এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের জেতাতে মোটা অংকের টাকা বিনিয়োগ করেন তিনি।
শিক্ষক এবিএম মোখলেসুল হক বলেন, সরকারের শিক্ষা কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ হলো উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম। সাতক্ষীরায় সরকারের সঙ্গে এই কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে এনজিও সাতক্ষীরা উন্নয়ন সংস্থা (সাস)। এই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিগ্রস্ত পরিচালক ঈমান আলী পুরো ২০২৪ সাল জুড়ে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমের স্কুলগুলোর ভাড়া ও বেতন প্রদান না করে বসে আছে। ইমান আলী শিক্ষকদের দেওয়া ৫ হাজার টাকা থেকে কমিশনও কেটে রাখত। বেতন বোনাস না পেয়ে অনেকে এই অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। বেতন চাইলে চাকরিচ্যুতির হুমকিও দিচ্ছেন সাসের পরিচালক ঈমান আলী। এ বিষয়ে শিক্ষকরা জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছি আমরা।
তালা উপজেলার খালিশখালী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের রুপা নাথ ঠাকুর নামের এক শিক্ষক বলেন, গতবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বেতন ভাতা নিয়মিত পেয়েছি তবে চলতি বছর অর্থাৎ ২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোনো বেতন ভাতা পাইনি। একই সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভাড়া দেয়নি। এ বিষয়ে আমরা মানববন্ধন করেছি। এ ছাড়া সাসের পরিচালকের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বললেও কোনো সমাধান হচ্ছে না।
ফলেয়া এলাকার পাপিয়া সুলতানা বলেন, এই এলাকায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি তবে সময় মত পারিশ্রমিক না পাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। একই সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভাড়া পরিশোধ করছে না সংশ্লিষ্ট বাস্তবায়ন সংস্থা সাস।
সাসের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, সাতক্ষীরা জেলার ছয়টি উপজেলায় সাস উপানুষ্টানিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালন করে আসছে। চলতি বছরে জানুয়ারি মাসে সুপারভাইজারদের বেতন দেওয়া হয়, তবে শিক্ষকদের বেতন ও ঘর ভাড়া দেওয়া হয়নি। বেতন ভাতা দিতে না পারলেও আমরা শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রেখেছি। ছয় উপজেলায় ৪২০ জন শিক্ষক রয়েছে যারা মানবেতর জীবনযাপন করছে। তারা বিভিন্ন সময় বেতনের কথা বললেও আমরা তাদের বেতন দিতে পারছি না ঘটনাটি সত্য। মহাব্যবস্থাপকের সঙ্গে আমরা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখেছি। এ বিষয়ে দ্রুত সমাধান করা হবে।
সাতক্ষীরা উন্নয়ন সংস্থা (সাস) এর পরিচালক ঈমান আলী বলেন, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত আমাদের চুক্তি ছিল। বাকি ৯ মাস সরকারের সঙ্গে আমাদের কোনো চুক্তি হয়নি। তবে কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে বিভিন্ন সময় চিঠি পেয়েছি। চুক্তি না হওয়ার কারণে কারণে কাউকে টাকা দেওয়া হয়নি।
মন্তব্য করুন