সিলেটে পুলিশের গুলিতে নিহত ৩ যুবকের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের নির্দেশ নিয়েছেন বিজ্ঞ আদালত। এর আগে সিলেট বিয়ানীবাজারের নিহত ৩ যুবককে ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয়।
পরবর্তীতে নিহতদের পরিবার বিয়ানীবাজার থানায় দফায় দফায় মামলা করেন। এর প্রেক্ষিতে এক সপ্তাহ আগে বিজ্ঞ আদালত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে গত ৫ আগস্ট বিয়ানীবাজারে বিজয়োল্লাস উদ্যাপনের সময়ে পুলিশের গুলিতে নিহত ৩ যুবকের লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেন।
এজন্য ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা সব কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের জন্যও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে কালবেলাকে জানিয়েছেন বিয়ানীবাজার থানার ওসি মো. এনামুল হক চৌধুরী।
ওসি মো. এনামুল হক চৌধুরী জানান, আদালতের পূর্ণাঙ্গ নির্দেশনা অফিসিয়ালি হাতে আসেনি। পুরো আদেশ পাওয়ার পরই মরদেহ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জানা গেছে, ৫ আগস্ট বিয়ানীবাজার থানায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও হামলা চলাকালে গুলিতে তিন যুবক নিহত হয়েছেন এবং আরও অন্তত ১০জন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে কলেজ শিক্ষার্থী রায়হান উদ্দিনকে (১৮) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নিজ বাড়িতে দাফন করা হয়েছে। তিনি পরিবারের সঙ্গে বিয়ানীবাজার পৌরসভার পূর্ব নয়া গ্রামে ভাড়া বাসায় থাকতেন। অপর নিহত বিয়ানীবাজার পৌরসভার পূর্ব নয়াগ্রামের ময়নুল ইসলামকে (৩২) টিএন্ডটি রোডস্থ পৌরসভার কবরস্থানে দাফন করা হয় এবং মোল্লাপুর ইউনিয়নের কটুখালিপাড় এলাকার পারিবারিক কবরস্থানে নিহত তারেক আহমদের (২৪) মরদেহ দাফন করা হয়েছে। নিহত সবারই ময়নাতদন্ত ছাড়াও দাফনকার্য সম্পাদন করা হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ২০ আগস্ট বাদী হয়ে সাবেক সাংসদ ও সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে প্রধান আসামি করে প্রথম মামলা দায়ের করেন নিহত তারেক আহমদের মা ইনারুন বেগম ওরফে ইনারুন নেছা। মামলায় সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম পল্লব, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মো. জামাল হোসেনসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৭৫ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ ও ১৫০-২০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি রাখা হয়।
শুধু তাই নয়, এ মামলায় স্থানীয় ছয়জন সাংবাদিকসহ এক ডজনেরও বেশি প্রবাসী আসামির তালিকায় রয়েছেন। যদিও মামলা এজাহারভুক্ত হওয়ার দুইদিন পর গত ২২ আগস্ট সেই মামলা প্রত্যাহার চেয়ে সিলেটের আমল গ্রহণকারী আদালতে আরেকটি আবেদন করেন ইনারুন নেসা। যেখানে উল্লেখ করা হয়, আসামিদের কাউকেই বাদী ইনারুন নেছা চেনেন না।
একই দিনে নিহত অপর দুই যুবক রায়হান আহমদ ও ময়নুল ইসলাম নিহতের ঘটনায় গত ২৬ আগস্ট তাদের পরিবারের সদস্যরা থানায় পৃথক দুটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এর মধ্যে রায়হান উদ্দিন হত্যা মামলার বাদী ছিলেন তার বড়ভাই বোরহান উদ্দিন এবং ময়নুল ইসলাম হত্যা মামলার বাদী ছিলেন তার স্ত্রী শিরীন বেগম। এই মামলা দুটিতেই প্রধান আসামি করা হয় সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদকে। এ ছাড়া দুই মামলার এজাহারনামীয় ৫৮-৬০ জনের নাম উল্লেখ এবং ১৫০-১৬০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।
এ ছাড়াও বিয়ানীবাজারে গত ৫ আগস্ট উচ্ছৃঙ্খল জনতার হামলায় আহত হওয়ার ঘটনায় গত ১ অক্টোবর রাতে পৃথক আরেকটি মামলা দায়ের করেন উপজেলার দুবাগ ইউনিয়নের বড়গ্রামের নাজমুল ইসলাম চৌধুরী ওরফে তাজিম। মামলায় আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র দ্বারা আঘাত করে গুরুতর রক্তাক্ত জখমের অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলার বাদী ও আহত নাজমুল ইসলাম চৌধুরী এখনও পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি বলেও অভিযোগে উল্লেখ করেন।
থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট গুলিতে আহত হওয়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বিয়ানীবাজার উপজেলার দুবাগ ইউনিয়নের বড়গ্রামের আশ্রব আলীর ছেলে সাহাব উদ্দিন, একই গ্রামের মৃত মইয়ব আলীর ছেলে আলী হোসেন, কোনাগ্রাম সুতারকান্দি গ্রামের ওয়াহাব আলীর ছেলে নিয়াজ উদ্দিন, পৌরশহরের নয়াগ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে সেলিম উদ্দিন, সিলেট নগরীর বরইকান্দি ভার্থখলার অলিউর রহমান মালিকসহ ২৩ জনকে এজাহারনামীয় এবং আরও ১০০-১২০জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।
বিয়ানীবাজার থানার ওসি মো. এনামুল হক চৌধুরী জানান, অন্যায়ভাবে নিরীহ কাউকে হয়রানি করা হবে না। তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য করুন