বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র মো. রোকনুজ্জামানকে কৌশলে অপহরণ ও ‘বন্দুকযুদ্ধের’ নাটক সাজিয়ে তাকে হত্যার অভিযোগে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি আলী আজগর টগর ও পুলিশ ইন্সপেক্টর সুকুমার বিশ্বাসসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা আমলি আদালতে মামলাটি করেন নিহত ছাত্রের বাবা মো. আবু বক্কর ছিদ্দিক।
পরে মামলাটি আমলে নিয়ে আদালতের বিজ্ঞ বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোস্তফা কামাল পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ঝিনাইদহ কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার আর্জিতে বলা হয়েছে, মো. রোকনুজ্জামান গত ২০১৯ সালে চুয়াডাঙ্গা ফার্স্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের আইন বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। বেআইনি, অনৈতিক কার্যকলাপ ও চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করায় এবং ভিন্ন মতের অনুসারী হওয়ায় আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে রোকনুজ্জামানকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছিলেন।
আলী আজগরের নির্দেশে ২০১৯ সালের ২৯ আগস্ট দুপুরে আসামি সজল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র রোকনুজ্জামানকে কৌশলে মোবাইল ফোনে ডেকে দক্ষিণ চাঁদপুর ছটাঙ্গার মাঠে যেতে বলেন। বাবা আবু বকর ছিদ্দিককে জানিয়ে রোকনুজ্জামান আসামি সজলের সঙ্গে ছটাঙ্গার মাঠে যান। সেখানে পৌঁছার পর আসামিরা অস্ত্রের মুখে রোকনুজ্জামানকে অপহরণ করে।
এরপর পরিবারের পক্ষ থেকে খোঁজ-খবর করেও কোথাও পাওয়া যায়নি। পরদিন সকালে লোকমুখে জানতে পারেন দামুড়হুদার জয়রামপুর কাঁঠালতলার বখতিয়ার মিয়ার বাঁশবাগানে রাত ২টার দিকে একজনকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে। সদর হাসপাতাল মর্গে গিয়ে বাদী ছেলে রোকনুজ্জামানের লাশ শনাক্ত করেন। ময়নাতদন্ত শেষে ওই দিন রাতে লাশ দাফন করা হয়।
মামলার আর্জিতে আরও বলা হয়েছে, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী রোকনুজ্জামানকে হত্যার উদ্দেশ্যে কৌশলে অপহরণ করা হয়। এরপর প্রধান আসামি আলী আজগরের নির্দেশে ওসিসহ পুলিশ সদস্যরা রোকনুজ্জামানকে গুলি করে হত্যা করেন। সন্তানের দাফন শেষে বাদী মো. আবু বকর ছিদ্দিক ৩১ আগস্ট দামুড়হুদা মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করলেও পুলিশ তা মামলা হিসেবে গ্রহণ করেনি। বাদী দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকায় বাড়িতে ফিরে মামলা করতে দেরি হয় বলে আর্জিতে উল্লেখ করেছেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- দামুড়হুদা মডেল থানার সাবেক ওসি সুকুমার বিশ্বাস, দামুড়হুদা মডেল থানার তৎকালীন পরিদর্শক (তদন্ত) কেএম জাহাঙ্গীর, এসআই তপন কুমার নন্দী ও শেখ রফিকুল ইসলাম, কনস্টেবল দিপু গাঙ্গুলী, খালিদ মাসুদ, নজরুল ইসলাম, শফিউর রহমান ও ফিরোজ ইকবাল এবং আওয়ামী লীগ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী দর্শনা পৌর এলাকার দক্ষিণ চাঁদপুরের মাছুম, সুমন, রাজিব ও সজল।
এ বিষয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ঝিনাইদহ কার্যালয়ের পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) রেশমা শারমিন কালবেলাকে বলেন, আমাদের কাছে এখনো কাগজ এসে পৌঁছায়নি। তবে মামলার কপি পেলে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হবে।
মন্তব্য করুন