ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিতে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যার প্রভাব পড়েছে শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে। বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) রাতের টানা বর্ষণে ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর পাড় উপচে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
এতে মানুষের বাড়িঘরে ঢুকছে পানি। কোথাও হাঁটু, কোথাও কোমরসমান পানি। পৌর শহরের গ্রামীণ সড়ক, ফসলি জমি তলিয়ে গেছে পানিতে। ভেসে গেছে পুকুর ও খামারের মাছ।
শুক্রবার (৪ অক্টোবর) সকালে ৫৬ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হলেও ১২টার দিকে তা ৭১ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। আর ১২টা পর্যন্ত বৃষ্টি ২২৫ মিলিমিটার রেকর্ড করা হয়েছে।
জানা গেছে, টানা বৃষ্টির সঙ্গে ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ভোগাই ও চেল্লাখালী নদী দিয়ে তীব্র বেগে ভারত থেকে আসছে পানি। এতে উপজেলার রামচন্দ্রকুড়া, নালিতাবাড়ী, মরিচপুরান, বাঘবেড় নয়াবিল, পোড়াগাঁও ইউনিয়ন এবং পৌর শহরে প্রবেশ করছে। টানা বৃষ্টি ও ঢলের পানিতে পানি বেড়ে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে, ভেসে গেছে পুকুর ও খামারের মাছ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত থেকে বৃষ্টি ও ঢলের পানি ক্রমাগতভাবে বাড়ছে।
কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, গত ১০ বছরের মধ্যে নদীটিতে এত পানি দেখেননি তারা। হঠাৎ এ পানি বৃদ্ধির কারণে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়ছেন। পৌর শহরের তারাগঞ্জ বাজার ও নালিতাবাড়ী বাজারের প্রধান সড়কে কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও কোমরপানি। ব্যবসায়ীদের দোকানে পানি উঠতে শুরু করেছে। আর বাসাবাড়িতে পানি উঠায় মানুষের চরম ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীতীরবর্তী মানুষ ঘরের আসবাবপত্র সরিয়ে উঁচু জায়গায় নেওয়ার চেষ্টা করছেন। নদীর পানি প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিশেষ করে আমন ধান তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের মধ্যে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। আমন ধানে কোথাও কোথাও থোর এসে গেছে। কিছুদিন গেলেই ধানগুলোর শীষ বের হবে। অপরদিকে নালিতাবাড়ী, গাজীরখামার, শেরপুর সড়কে পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবাহিত হওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ভুক্তভোগীরা জানান, ঢলের পানিতে নিম্নাঞ্চলের কৃষকের আমন ধান, সবজিক্ষেত ও অসংখ্য পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। ঢলের পানি নেমে গেলে প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে বলে তারা জানান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবদুল ওয়াদুদ কালবেলাকে বলেন, নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে পাড় উপচে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এই পানি আশা করছি দ্রুত নেমে যাবে। তাতে কৃষকের কোনো ক্ষতি হবে না। এরপরও কৃষক যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে সরকারিভাবে প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হবে।
নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানা কালবেলাকে বলেন, উপজেলার দুটি নদীতে পাহাড়ি ঢলের পানি নদীর কিনারা উপচে গিয়ে বসতবাড়িতে প্রবেশ করেছে। চারটি ইউনিয়নের সব বিদ্যালয় খোলা রাখা হয়েছে। যারা আশ্রয় নেবে, তাদের জন্য শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।
মন্তব্য করুন