শারদীয় দুর্গাপূজা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব হিসেবে পালিত হয়। এই উৎসবকে ঘিরে চট্টগ্রামে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন শিল্পীরা। সদরঘাট কালীবাড়ি পূজা মণ্ডপগুলোতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
কর্ণফুলী নদীর এঁটেল, দোঁয়াশ মাটি সংগ্রহ করে বাঁশ কাঠের কাঠামোতে তৈরি করেন দেবীদুর্গা, লহ্মী, সরস্বতী, কার্তিক ও গণেশসহ হাজার হাজার প্রতিমা। তবে বেশিরভাগ জায়গায় প্রতিমা তৈরি শেষ, চলছে শেষ তুলির আঁচড়। এরপরই চলে যাবে মণ্ডপে মণ্ডপে।
চট্টগ্রাম মহানগর পূজা কমিটির সভাপতি আশীষ কুমার ভট্টাচার্য কালবেলাকে বলেন, প্রতিবারের মতো এবারও আমাদের প্রস্তুতি আছে। ১৬ থানায় ২৯২টি মণ্ডপ রয়েছে। প্রত্যেক মণ্ডপে আমাদের নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক দল থাকবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছে। পাশাপাশি বিএনপি, জামায়াতও যোগাযোগ করছে। তারা ভীতশঙ্কিত না হতে আশ্বস্ত করছেন। আপনারা আপনাদের উৎসব পালন করবেন, আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি।
প্রতি বছর অক্টোবর মাসকে ঘিরে ঢাকের তালে আর শিউলি ফুলের মিষ্টি গন্ধে পুরো দেশে দুর্গাপূজার হাওয়া বইতে থাকে। দেবী দুর্গার অনিন্দ্য সুন্দর রূপ দিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছেন দেবী তৈরির কারিগরেরা।
তারা জানান, প্রতিমার কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে সকাল থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত তারা পুরোদমে কাজ করছেন। প্রতি বছরই এই কাজের মাধ্যমেই তারা জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। এ পেশা ছাড়া তারা আর অন্য কোনো পেশায় জড়িত নন। তাদের পূর্বপুরুষেরাও এ কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।
দেখা গেছে, পূজা যতই ঘনিয়ে আসছে, শিল্পীদের ব্যস্ততা ততটাই বাড়ছে। মন্দিরে কারিগররা ফুটিয়ে তুলছেন দুর্গা, লহ্মী, সরস্বতী, গণেশ-কার্তিক ও অসুরের প্রতিমা। কিছু কিছু মণ্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষে শুরু হয়েছে রঙের কাজ। আগামী ২ অক্টোবর মহালয়ার মধ্যে দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়বে। ৯ অক্টোবর ষষ্ঠী, ১০ অক্টোবর সপ্তমী, ১১ অক্টোবর অষ্টমী, ১২ অক্টোবর নবমী, ১৩ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্যে দিয়ে ৫ দিনব্যাপী হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার পরিসমাপ্তি ঘটবে।
প্রতিমা তৈরির একজন কারিগর বলেন, অতীতে যেভাবে মানুষ মাটির তৈরি জিনিসপত্র ব্যবহার করতো, সেই চাহিদা না থাকায় আমাদের প্রায় সারা বছরই অলস সময় কাটাতে হয়। তবে দুর্গাপূজা চলাকালে প্রতিমা তৈরি করে যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে কোনোমতে সারা বছর সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। আবার চলতি বছর প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। কিন্তু ক্রেতারা প্রতিমার দাম বাড়াচ্ছে না। এতে আমাদের যে টাকা আয় হওয়ার কথা, তা আর হচ্ছে না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর জেমসন হল, গোসাইল ডাঙ্গা, রহমতগঞ্জ, হাজারি গলিসহ বিভিন্ন পূজামণ্ডপে বইছে উৎসবের আমেজ। প্রতিমা স্থানান্তরের জায়গা নির্ধারণ, তোরণ, আলোকসজ্জা ইত্যাদি সবকিছুতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। একই সঙ্গে আত্মীয়-স্বজনদের আসা-যাওয়া লক্ষণীয়। এ ছাড়া পূজায় ভালো জামা-কাপড় কিনতে ইতোমধ্যে বিপণী বিতানগুলোতে ভিড় জমাচ্ছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
গোসাইল ডাঙার বাসিন্দা আশেক কালবেলাকে বলেন, মাকে বরণ করতে আমাদের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। ধর্ম যার যার উৎসব সবার। আমাদের পূজায় সবাই আমন্ত্রিত।
মন্তব্য করুন