ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চেয়ারম্যান লাপাত্তা, তার কোনো খোঁজখবর নেই। তিনি কোথায় আছেন, সঠিক ঠিকানাও কেউ জানে না। একটা প্রশংসাপত্র আর ট্রেড লাইসেন্স করার জন্য তিন দিন ধরে আউলিয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের বারান্দায় ঘুরতেছি। পরে ইউপি সচিব আর প্যানেল চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় কাগজ দুইডা পাইছি।
এভাবেই ইউনিয়ন পরিষদে সেবা নিতে গিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানাচ্ছিলেন আউলিয়াপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা জব্বার মৃধা। সরকার পতনের পর বর্তমানে তৃণমূল মানুষের বিড়ম্বনা ও ভোগান্তি লাঘবের জন্য এসব ইউনিয়ন পরিষদের আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা এসিল্যান্ড এবং প্যানেল চেয়ারম্যানের কাছে হস্তান্তর করেছে জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পটুয়াখালী জেলায় মোট ৭৭টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে ২১ ইউপি চেয়ারম্যান পলাতক রয়েছেন। কোথাও কোথাও চেয়ারম্যানদের সঙ্গে কিছু কিছু দলীয় মেম্বার ও নারী মেম্বারও আত্মগোপনে চলে যান। এতে নাগরিক সেবা থেকে বিঘ্নিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ এবং যথাসময়ে পাচ্ছেন না জন্মসনদ, মৃত্যু নিবন্ধন, নাগরিকত্ব সনদ, ট্রেড লাইসেন্সসহ অন্যান্য সনদ ও প্রত্যয়নপত্র।
পলাতক চেয়ারম্যানদের ইউনিয়নগুলো হলো পটুয়াখালী সদর উপজেলার ছোট বিঘাই, বড়বিঘাই, মাদারবুনিয়া, মরিচবুনিয়া, বাউফলের কালাইয়া, বগা, কালিশুরি, চন্দ্রদ্বীপ, কনকদিয়া, কেশবপুর ধুলিযা, সূর্যমনি, দুমকির লেবুখালী, আঙ্গারিয়া, মুরাদিয়া, দশমিনার বহররমপুর, দশমিনা সদর, রাঙ্গাবালীর ছোট বাইশদিয়া, মৌডুবী, মির্জাগঞ্জের মাধবখালী ও কলাপাড়ার লতাচাপলি।
সদর উপজেলার মরিচবুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদে সরেজমিন দেখা যায়, মো. মাসুম মৃধা অনুপস্থিত। তার অনুপস্থিতিতে সেখানে আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে। কিন্তু প্রশাসনিক কাজে ব্যস্ততার কারণে তিনিও নিয়মিত পরিষদে উপস্থিত থাকতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে পটুয়াখালী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইফফাত আরা জামান ঊর্মি কালবেলাকে বলেন, সদর উপজেলার চারজন চেয়ারম্যান অনিয়মিত। তাদের মধ্যে তিন ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মরিচবুনিয়া ইউপি সদস্যদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা থাকায় আমি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছি।
এ ব্যাপারে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখার উপপরিচালক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জুয়েল রানা কালবেলাকে বলেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর জেলার ২১ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আত্মগোপনে রয়েছেন। এসব ইউপির আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা এসিল্যান্ড এবং প্যানেল চেয়ারম্যানদের দেওয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান-মেম্বাররা যেভাবে সার্বক্ষণিক পরিষদে বসতে পেরেছেন, সেভাবে প্রশাসনের লোক পারছে না। এজন্য একটু সমস্যা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন