জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগরী আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেছেন, ধর্মীয় সম্প্রীতির বন্ধনকে সুদৃঢ় রাখতে জামায়াত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। একটি ইনসাফভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণ করতে চায় জামায়াত। যেখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই সমান অধিকার ভোগ করবে। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা ভিন্নধর্মের হলেও জাতিগতভাবে আমাদের সকলেই বাংলাদেশি।
মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) রাতে সিলেট মহানগর জামায়াতের উদ্যোগে আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন তিনি।
মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন, গত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হিন্দু-মুসলিম সবাই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ছাত্র-জনতা নিহত-আহত হয়েছে। যার ফলে দীর্ঘ ১৭ বছর পর আমরা দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করতে পেরেছি। প্রত্যেক নাগরিকের স্ব-স্ব ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান নির্বিঘ্নে পালনের অধিকার রয়েছে।
তিনি বলেন, বিগত দিনে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক বিরোধিতার কারণে ধর্মের নামে জাতিকে বিভক্ত করা হয়েছে। আমরা ধর্মের নামে বিভক্তির দেয়াল ভেঙে দিতে চাই। সকলে মিলেমিশে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে চাই। সিলেট হচ্ছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ক্ষেত্রে অনন্য। আসন্ন দুর্গাপূজার উৎসবকে নির্বিঘ্নে পালন করতে হিন্দু ভাইদের পাশে জামায়াত অতীতের মতো পাশে থাকবে। শুধু দুর্গাপূজা নয়, ভিন্ন ধর্মাবলম্বী ভাইদের সকল ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। কোনো স্বার্থান্বেষী মহল গুজব ছড়িয়ে যাতে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারে সেদিকে সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।
মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি মোহাম্মদ শাহজাহান আলীর পরিচালনায় নগরীর একটি অভিজাত রেস্টুরেন্টের হলরুমে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শীর্ষ ও স্থানীয় নেতারা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রামকৃষ্ণ মিশন সিলেটের সম্পাদক স্বামী চন্দ্র নাথানন্দজী মহারাজ, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সিলেট মহানগর সভাপতি ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট মৃত্যুঞ্জয় ধর ভোলা, সিলেট জেলা সভাপতি গোপিকা শ্যাম পুরকায়স্থ, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সিলেট জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এডভোকেট বিজয় কৃষ্ণ বিশ্বাস, পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রজত কান্তি ভট্টাচার্য্য, সিলেট মহানগরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রদীপ কুমার দেব, জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রঞ্জন ঘোষ ও মহানগরের সাধারণ সম্পাদক চন্দন দাশ।
জামায়াত নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য মাওলানা হাবিবুর রহমান, সিলেট জেলা দক্ষিণ জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ আব্দুল হান্নান, সিলেট অঞ্চল জামায়াতের টিম সদস্য হাফিজ আব্দুল হাই হারুন, সৌদি আরব জামায়াতের সভাপতি মাওলানা আজাদ সোবহান, মহানগর সহকারী সেক্রেটারি এডভোকেট মোহাম্মদ আব্দুর রব, ড. নুরুল ইসলাম বাবুল ও জাহেদুর রহমান চৌধুরী।
মতবিনিময় সভায় রামকৃষ্ণ মিশন সিলেটের সম্পাদক স্বামী চন্দ্র নাথানন্দজী মহারাজ বলেন, মানুষ হিসেবে সবার একটি হৃদয় হওয়া দরকার। এই সুন্দর উদ্যোগের জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ। এর মাধ্যমে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে একটি সম্প্রীতির সমাজ গঠন সম্ভব।
পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রজত কান্তি ভট্টাচার্য্য বলেন, ঢাকেশ্বরী মন্দিরে জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছিলেন, মসজিদে ইবাদত করতে যদি পাহারা না লাগে মন্দিরে পাহারা লাগবে কেন। আমরা সত্যিকারের এমন সমাজ চাই। যেখানে ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র হবে সবার।
এডভোকেট অরবিন্দ দাশ বলেন, গত ৬ আগস্ট জাতির কঠিন মুহূর্তে সিলেটে জামায়াতের সাহস ও উৎসাহ আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করেছে।
এ সময় অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন, বাবু প্রদীপ কুমার দাশ, বাবু নিত্যঞ্জয় রায়, কালিপদ রায়, শিলা দাস, বলরাম কোমল চন্দ্র, নিখিল মালাকার, কিরেশ দেবনাথ, শ্রী মন মোহন, নান সিংহ, পলাশ চক্রতবর্তী প্রমুখ।
সভায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পক্ষ থেকে ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে মন্দির ও হিন্দু ভাইদের বাসা-বাড়ি পাহারা দেওয়ায় এবং পাশে থাকায় জামায়াতের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি ঠেকাতে জামায়াতের পক্ষ থেকে সহযোগিত অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান তারা। সভায় পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা ছাড়াও নগরীর ১৫১টি পূজা মণ্ডবের সভাপতি-সেক্রেটারিসহ দুই শতাধিক সনাতন ধর্মাবলম্বী অংশ নেন।
পূজা চলাকালীন অবস্থায় সবধরনের আতশবাজি বন্ধ রাখা, আজান ও নামাজের সময় সবধরনের বাধ্যযন্ত্র বন্ধ রাখার ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেন। আসন্ন দুর্গাপূজাকে নির্বিঘ্নে পালন করতে নেতারা পরস্পরের সহযোগিতা কামনা করেন।
মন্তব্য করুন