সিলেটে শিশুশ্রম বাড়ছেই। যে বয়সে শিশুরা বই-খাতা নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা, সে বয়সে শ্রম বিক্রি করছে স্বল্প দামে। আবার শিশু শ্রমের আড়ালে অনেক শিশু জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধে। রাজনীতিতে ব্যবহার করছে শিশুদের। কেউ কেউ খাবারের অভাবে হচ্ছে ভবঘুরে। ছুটছে নেশার পেছনে।
পরিসংখ্যান বলছে, সিলেট জেলায় ২ হাজার পথশিশু রয়েছে। বিভাগে চার জেলা মিলিয়ে প্রায় ৫ হাজার পথশিশু রয়েছে।
সিলেট নগর ঘুরে দেখা যায়, পেটে ভাত নেই, পরনে পোশাক নেই—শিশুরা বিভিন্ন বাসস্টেশন, রেলওয়েস্টেশন, মাজার, বিপণিবিতানের সামনে প্রতিদিনই ঘুরছে শিশু। একমুঠো খাবারের জন্য কখনো হাত পাতছে মানুষের কাছে আবার কখনো কাগজের টুকরো, বোতল, ভাঙা আসবাবপত্র কুড়িয়ে তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে।
সিলেটে এসব পথশিশুদের পুনর্বাসন ও প্রশিক্ষণ দিতে কাজ করছে বিভিন্ন বেসরকারি ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। ইউনিসেফ, এফআইভিডিবি, পথশিশু সেবা সংস্থা দীর্ঘদিন ধরে সিলেটে পথশিশুদের নিয়ে কাজ করছে। তাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা দিচ্ছে সিলেট সদর উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়, শহর সমাজসেবা কার্যালয়, সিলেট জেলা সমাজসেবা কার্যালয়, সিলেট বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয়।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী সিলেটের পথশিশুর সংখ্যা অন্যান্য বিভাগের তুলনায় কম। ১০০ থেকে ১৫০ জন পথশিশু আছে।
সিলেট বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পথশিশুদের সুবিধা বঞ্চিত গণ্য করে সমাজসেবা অধিদপ্তর তাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরকারি খরচে লালন-পালন করে থাকে।
সিলেট বিভাগের এ ধরনের প্রতিষ্ঠান হচ্ছে নগরীর বাগবাড়িতে সরকারি শিশু পরিবার (বালক)-১১৩ জন, রায়নগরে সরকারি শিশু পরিবার (বালিকা) ৯০, কালীঘাটে সমন্বিত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষাকার্যক্রমে ৭, শেখঘাটে সরকারি বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে ৩৭, বাগবাড়িতে মহিলা ও শিশুকিশোরী হেফাজতীদের নিরাপদ আবাসন কেন্দ্রে (সেফহোম) ২৭, বাগবাড়ির ছোট মনি নিবাসে ২৭, খাদিমনগরে সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র ২৭, শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ পুনর্বাসন কেন্দ্রে ৭০ জন।
এ ছাড়া হবিগঞ্জে সরকারি শিশু পরিবার (বালক) ৬৬, শ্রীমঙ্গলে সরকারি শিশু পরিবার (বালিকা) ৬০, সুনামগঞ্জে সরকারি শিশু পরিবার (বালিকা) ৯০, মৌলভীবাজারের সমন্বিত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষাকার্যক্রমে ৬, হবিগঞ্জে সমন্বিত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষাকার্যক্রমে শূন্য জন, সুনামগঞ্জের জয়কলসে সমন্বিত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষাকার্যক্রমে শূন্য জন, মৌলভীবাজারে এতিম মেয়েদের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ৪৮ জনকে পুনর্বাসন ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন সময় এসব প্রতিষ্ঠান পথ শিশুদের রাস্তা থেকে তুলে এনে প্রতিষ্ঠানে রেখে পুনর্বাসন দেওয়া হয়। এখান থেকে অনেককে স্কুলমুখী করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা জানান, দরিদ্রতা, বাবা-মার অসচেতনতার কারণে শিশুরা রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে। একবার যে শিশু রাস্তায় বের হয়ে যায়, তাকে আর ঘরে ফেরানো যায় না। একসময় সে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। দুষ্টচক্রে জড়িয়ে তারা বিপথগামী হয়।
নগরীর জিন্দাবাজারে কথা হয় পথশিশু খাদিজার সঙ্গে। সে কালবেলাকে বলে, অভাব-অনটনের দায়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে সারা দিন বেলুন বিক্রি করে আমার পরিবার চালাই। আমাদের কেউ সহযোগিতা করে না।
শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. রুলী বিনতে রহিম বলেন, পথশিশুদের স্বাস্থ্যের বিষয়টা আগে দেখা উচিত। রাস্তায় থাকার কারণে অনেক রোগজীবাণু হতে পারে এবং এই রোগ ছড়াতে পারে। এজন্য আগে তাদের সুস্থ রাখতে হবে।
তিনি বলেন, সমাজসেবা কার্যালয়ের পাশাপাশি সিটি করপোরেশন পরিসংখ্যান নিয়ে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিতে পারে।
সিলেট বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক নিবাস রঞ্জন দাশ বলেন, পথশিশুদের নিয়ে সমাজসেবা কার্যালয় কাজ করছে। রাস্তা থেকে ধরে এনে তাদের পুনর্বাসন ও স্কুলে পাঠানোর ব্যবস্থা করছে।
মন্তব্য করুন