রংপুরের কাউনিয়ায় উজানের পাহাড়ি ঢল আর কয়েক দিনের টানা ভারি বৃষ্টিতে তিস্তার পানি ফেঁপে ফুঁলে ওঠায় দেখা দিয়েছে ভাঙন। ঝুঁকিতে আছে তিস্তার তীরবর্তী গ্রামগুলো। প্লাবিত হওয়ায় পানিবন্দি রয়েছে হাজারও মানুষ।
এদিকে তিস্তার পানির তোড়ে কাউনিয়ার বালাপাড়া ইউনয়নের মৌলভীবাজার এলাকার একটি ব্রিজের সংযোগ সড়কের দুইপাশ ভেঙে গেছে। এতে করে বালাপা, শহীদবাগ, হারাগাছ ও লালমনিরহাটের প্রায় ত্রিশ হাজার পরিবার দুর্ভোগে পড়েছে। বানভাসি এসব মানুষদের যাতায়াতের অযোগ্য হয়ে পড়ায় এলাকার মানুষ নাম দিয়েছে ‘অচল সেতু’। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় আলাদা বাঁশ-কাঠ দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল সংযোগ সড়ক। সৃষ্ঠ বন্যায় সংযোগ সড়কটি ভেঙে গেছে। এতে করে প্রায় ১০ গ্রামের মানুষের যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, কাউনিয়ার বালাপাড়া ইউনিয়নে ইউএসএ আইডির অর্থায়নে ও কেয়ার বাংলাদেশের সহযোগিতায় চরাঞ্চলের প্রান্তিক মানুষের চলাচলের সুবিধার্থে ২০১০ সালে ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু বন্যার পানির তোড়ে নির্মিত সেতুর দুইপাশের সংযোগ সড়কের মাটি ধসে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় সেতুতে উঠতে সংযোগ সড়কের বিকল্প হিসেবে সেতুর দুই প্রান্তে তৈরি করা হয় বাঁশ ও কাঠের সাঁকো।
স্থানীয়রা জানান, সেতুটি নির্মাণের প্রায় ৫ বছর পরে বন্যার পানির স্রোতে দুইপাড়ের মাটি ধসে গিয়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সেখানকার লোকজনদের। কিন্তু গত পাঁচ বছর সংযোগ সড়ক নির্মাণে কোনো উদ্যোগ নেয়নি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন। এমন অবস্থায় সেতু পার হতে বাঁশ ও কাঠের সাঁকো ব্যবহার করছেন স্থানীয় লোকজন।
এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন স্থানীয় গোপীডাঙ্গা, আরাজী খোর্দ্দ ভূতছাড়া, মৌলভীবাজারসহ প্রায় ১০ গ্রামের লোকজন বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করছেন। এছাড়াও লালমনিরহাটের রাজপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের যাতায়াতের ভরসা এই সেতুটি। সেতুটির দুই প্রান্তের মাটি ধসে পড়ায় ঝুঁকি নিয়েই পাড়াপার করতে হচ্ছে পার্শবর্তী কয়েকটি স্কুলের শিক্ষার্থীদের।
স্থানীয়দের দাবি, সেতুটির দুইপাশে ধসে যাওয়া মাটির সংযোগ সড়কটি দ্রুত সংস্কার করে মূলসেতুর সঙ্গে চলাচল উপযোগী করা হোক।
গোপীডাঙ্গা গ্রামের মোহাম্মদ আলী বলেন, কী আর বলব। ব্রিজ আছে চলাচল করতে পাই না। আমাদের ভাগ্যই খারাপ। কেউ খোঁজ নেয় না। ব্রিজটা যে ঠিক করা লাগবে কারো মাথাত নাই। কষ্ট থেকে গেল।
মৌলভীবাজার গ্রামের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন আগে তিস্তার স্রোতে সেতুর দুই পাড়ের সংযোগ সড়কের মাটি সরে গিয়ে চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ে। তাই এলাকার মানুষরা নিজেদের উদ্যোগে সেতুতে চলাচল করতে উভয় প্রান্তে বাঁশ ও কাঠের সাঁকো তৈরি করেছিলেন, সেটিও আবার ভেঙে গেছে।
কাউনিয়া উপজেলা প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান জেমি জানান, সেতুটির বিষয়ে আমরা এরই মধ্যে সরজেমিন সার্ভে করেছি, গত কয়েক দিনের বন্যার কারণে পানির স্রোতে ভেঙে গেছে। আগামী সপ্তাহে ঢাকা থেকে সার্ভে টিম আসবে নতুন ব্রিজ নির্মাণের জন্য যত দ্রুত সম্ভব অর্থ বারদ্দ সাপেক্ষে সেতুটির কাজ করা হবে।
কাউনিয়ায়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মহিদুল হক জানান, বিষয়টি আমি শুনেছি, সরজমিনে পরিদর্শন করে অতিদ্রুত বিকল্প পথে যাতায়াতের জন্য ব্যবস্থা করা হবে।
মন্তব্য করুন