বরগুনার পাথরঘাটায় রান্না ঘরের পাশ থেকে ১০ ফুট লম্বা একটি অজগর সাপ উদ্ধার করেছে বন বিভাগ। পরে সাপটি পাশের বনে অবমুক্ত করা হয়। মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) সকাল ১০টার দিকে পাথরঘাটা পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড খাদ্য গুদামের পূর্ব পাশে ফারুক মিয়ার রান্না ঘরের পাশ থেকে জালে পেঁচানো অবস্থায় অজগরটি দেখা যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকালে ফারুক মিয়ার স্ত্রী রাহিমা বেগম ঘর থেকে পুকুর পাড়ে যাওয়ার সময় রান্না ঘরে বড় একটি অজগর দেখতে পায়। পরে ভয় পেয়ে তিনি পাশের বাড়ির লোকজনদের ডাক দেয়। তারা বন বিভাগের সদস্যদের খবর দিলে সাপটি উদ্ধার করা হয়।
স্থানীয় শহিদুল ইসলাম বলেন, আমি সকালে রাস্তায় বের হলে ফারুকের স্ত্রীর ডাক-চিৎকার শুনতে পাই। ঘটনাস্থলে গিয়ে একটি সাপ দেখেতে পেয়ে বন বিভাগের খবর দেই।
পরিবেশ কর্মী শফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, প্রায়ই উপকূলীয় এলাকায় বড় বড় সাপ দেখা যায় লোকালয়ে চলে আসে। খাবারের সন্ধানে অথবা জোয়ারের পানিতে এ সাপগুলো এখন লোকালয়ে ছুটছে। সাপ পরিবেশের নানাবিধ উপকার করে থাকে। অনেকে সাপটি মারতে চেয়েছিল আমি তাদের নিষেধ করেছি।
বন বিভাগের উদ্ধারকর্মী জহির হোসেন বলেন, এটি একটি অজগর সাপ। সাপটি উদ্ধার করে পাশের বনে অবমুক্ত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা এবং তরুণ বন্যপ্রাণী গবেষক জোহরা মিলা জানান, অজগর নির্বিষ সাপ। এটি নিশাচর ও খুবই অলস প্রকৃতির, প্রয়োজন ছাড়া নড়াচড়াও করে না। এই প্রজাতিটি গাছে একাকী বাস করলেও শুধু প্রজননকালে জোড়া বাঁধে। সাধারণত মার্চ থেকে জুনের মধ্যে এদের প্রজননকাল। দেশের ম্যানগ্রোভ বন, ঘাসযুক্ত জমি, চট্টগ্রাম ও সিলেটের চিরসবুজ পাহাড়ি বনে এদের দেখা পাওয়া যায়। সাপটি সাধারণত মানুষের ক্ষতি করে না। খাদ্য হিসেবে এরা ইঁদুর, কচ্ছপের ডিম, সাপ, বন মুরগি, পাখি, ছোট বন্যপ্রাণী ইত্যাদি খায়। সাপটি নিজের আকারের চেয়েও অনেক বড় প্রাণী খুব সহজেই গিলে খেতে পারে।
জোহরা মিলা বলেন, চামড়ার জন্য সাপটি পাচারকারীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। ফলে আমাদের বনাঞ্চল থেকে এটি দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২ এর তপশিল-২ অনুযায়ী এ বন্যপ্রাণীটি সংরক্ষিত, তাই এটি হত্যা বা এর যে কোনো ক্ষতি করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
মন্তব্য করুন