আমার বাবাকে আমি গত ২০ বছর আগের মতো পেতে চাই। আমার বাবা এক নারীর পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে আমার মাসহ চার ভাইবোনের কোনো খোঁজ নেন না। বাবার ভালোবাসা থেকে আমরা বঞ্চিত। আমি আমার আগের বাবাকে ফেরত চাই।
এভাবেই সংবাদ সম্মেলনে হাউমাউ করে কেঁদে বাবাকে পরকীয়া থেকে ফিরিয়ে আনার আকুতি জানায় এক পুলিশ সদস্যের মেয়ে।
রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার বরুড়া প্রেস ক্লাবে পুলিশ সদস্য মোনায়েম হোসেনের শাস্তির দাবিতে স্ত্রী ও সন্তানরা এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। ভুক্তভোগী হেলেনা আক্তার বলেন, আমার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার আড্ডা ইউনিয়নের পোম্বাইশ গ্রামে।
আমার স্বামী মোনায়েম হোসেন বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর এএসআই পদে কক্সবাজার জেলায় ৮-এপিবিএন জামতলী ক্যাম্পে কর্মরত।
আমি ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ালেখা করা অবস্থায় একই এলাকার মোনায়েম হোসেন বিয়ে করার জন্য আমার পরিবারকে নানা কৌশলে ভয়ভীতি দেখান, তখন আমার বাবা প্রবাসে থাকার কারণে আমার মা ও আত্মীয়স্বজন একমত হয়ে বিয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন। ২০০১ সালে মোনায়েম হোসেন তখন কোনো কাজ করতেন না, আমার পরিবার তার সব খরচ বহন করত।
এরই মধ্যে ২০০৩ সালে তার পুলিশে চাকরি হয়। ভালোমতোই আমাদের সুখের সংসার চলছিল। ২০১৯ সালে পরকীয়ায় আসক্ত হয় আমার স্বামী মোনায়েম।
আমার প্রথম সন্তান এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী, ছেলে দশম শ্রেণি, তৃতীয় ছেলে দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী, ছোট মেয়ের বয়স ২ বছর ৬ মাস। বিপত্তি বাদে ছোট মেয়েকে নিয়ে। ২০২১ সালে করোনায় আক্রান্ত থাকা অবস্থায় আমার ভুলবশত ছোট মেয়েটি কনসেপ্ট হয়।
সে আমাকে বাচ্চা নষ্ট করতে বলে, তখন ডাক্তার আমার শারীরিক অবস্থা পর্যালোচনা করে দেখেন বাচ্চা নষ্ট করতে গেলে আমার শারীরিকভাবে বড় ধরনের ঝুঁকি রয়েছে। তাই আমি বাচ্চা নষ্ট করিনি তার কথামতো—এটাই আমার বড় অপরাধ।
লক্ষ্মীপুর জেলার এক বিধবার সঙ্গে তার পরকীয়া হয়। অবৈধ সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরে চলছে। ওই মহিলার সঙ্গে সম্পর্কের পর থেকে তিনি নানা অজুহাত দেখিয়ে আমাকে মানসিকভাবে চরম টর্চার করতেন। একপর্যায়ে তার অনৈতিক কর্মকাণ্ড ও নানা মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে চাঁদপুরের বাসা থেকে সন্তান নিয়ে বাড়িতে চলে আসি।
২০২১ সাল থেকে আমার ভরণপোষণ, হাসপাতালের চিকিৎসা খরচ, বাচ্চাদের লেখাপড়ার খরচ ও ভরণপোষণ কোনো কিছুই দিচ্ছে না। আমার চার সন্তান ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবে বাবার আদর থেকে বঞ্চিত হয়ে কান্নাকাটি করে। আমি তাদের, কী দিয়ে সান্ত্বনা দেব।
মোনায়েম চাকরির শুরু থেকে এ পর্যন্ত আমার পরিবারের কাছ থেকে তদবির, প্রমোশনসহ নানা অজুহাতে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আমি এই চার সন্তান নিয়ে এখন কী করব। আমি চার সন্তান নিয়ে পথে বসা ছাড়া আর কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছি না।
মোনায়েমের পরকীয়া ও নানা নির্যাতনের বিষয়ে আমি পুলিশের কয়েকটি দপ্তরে অভিযোগ করে কোনো সমাধান না পেয়ে কুমিল্লার বিজ্ঞ আমলি আদালতে তার বিরুদ্ধে মামলা করি। ওই মামলায় বিজ্ঞ আদালত মোনায়েমকে আমার সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা এবং বাচ্চাদের যাবতীয় ভরণপোষণের বিষয়ে দায়িত্ব বহন করবে এই শর্তে তাকে জামিন দেন।
এরপর তিনি আমাকে এবং আমার সন্তানদের নিয়ে কক্সবাজারে একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান। ভাড়া বাসায় থাকা অবস্থায় তাকে বাসায় আসতে বললে নানা অজুহাত দেখানো শুরু করেন। তিন মাস ভাড়া বাসায় রাখার পর আমাকে জানান, তার ঢাকায় দুই মাসের ট্রেনিং আছে।
আমাকে এ ভাড়া বাসা ছেড়ে দিতে হবে। তার সঙ্গে ঢাকা নিয়ে যেতে বললে তিনি আমাকে ট্রেনিং শেষে নিয়ে যাবেন বলে আশ্বাস দেন। দুই মাস পর বাসায় নিতে বললে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। আমি আবারও কুমিল্লা বিজ্ঞ আদালতের শরণাপন্ন হই। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
কয়েক দিন আগে আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন শুনেছি। বর্তমানে বিভিন্ন লোক মারফতে বলে বেড়াচ্ছেন আমাকে ডিভোর্স করে দিয়েছেন। অথচ আমি এই ধরনের কোনো কাগজপত্র এখন অবধি পাইনি। তিনি একজন পুলিশ কর্মকর্তা হয়ে বেআইনিভাবে আমাদের হয়রানি করে যাচ্ছেন।
আমার স্বামী ও সন্তানদের অধিকার ফিরে পেতে বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শকের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
মন্তব্য করুন