পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে রাতের আঁধারে বন বিভাগের ১২৭টি গাছ কেটে ফলেছে দুর্বৃত্তরা। ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক হন উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি খোরশেদ আলম শাহ।
শুক্রবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টায় দেবীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের তালতলা খয়ের বাগানে সন্দেহভাজন হিসেবে তাকে আটক করে পুলিশে হস্তান্তর করেছে সেনাবাহিনী।
স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাতে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা খয়ের বাগানে মিঞ্জিরি, পিঠালীসহ বিভিন্ন প্রজাতির ১২৭টি গাছ কেটে ফেলে রেখে যায়। পরদিন শুক্রবার সকালে কাটা গাছগুলো দেখতে পেয়ে ভুক্তভোগীরা দেবীগঞ্জ ফরেস্ট রেঞ্জ অফিসে খবর দেন।
পরে বন বিভাগের কর্মকর্তারা আনুমানিক সকাল ৮টায় সেখানে যান এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন। এর ঘণ্টাখানেক পর সেখানে সহকারী বন সংরক্ষক নূরন্নাহার ও সেনাবাহিনীর ক্যাম্প কমান্ডার ক্যাপ্টেন সাইফসহ একটি টিম সেখানে যায়। তার কিছুক্ষণ পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান দেবীগঞ্জ উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি খোরশেদ আলম শাহ।
স্থানীয়রা আরও জানান, এ সময় সহকারী বন সংরক্ষক নূরন্নাহার সেনা কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেন খয়ের বাগান এলাকায় গাছ না লাগানোর বিষয়ে খোরশেদ আলম শাহ তাকে হুমকি দিয়েছেন। বন কর্মকর্তার এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ক্যাম্প কমান্ডার ক্যাপ্টেন সাইফ অভিযুক্ত খোরশেদ আলমক শাহকে আটকের নির্দেশ দেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিনি থানায় আটক ছিলেন। একই সঙ্গে সেখানকার উপকারভোগীরা সে সময় খোরশেদ আলম শাহকে গাছ কাটার মূলহোতা বলে দাবি করেন। এ ছাড়া দুই বছর ধরে সদর ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম খয়ের বাগানের কয়েক হাজার গাছ কাটেন বলে সেখানকার এলাকাবাসী জানান।
বন বিভাগের সদর বিট অফিসার রিয়াজুল হাসনাত বলেন, সকাল ৭টায় খবর পেয়ে অফিসের বাকি কর্মকর্তাদের নিয়ে ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে ১২৭টি গাছ কাটা অবস্থায় দেখতে পাই আমরা। তবে স্থানীয়দের ধারণা খোরশেদ আলম শাহ গাছ কাটার ইন্ধনদাতা হতে পারেন। যদিও আমরা তাকে হাতেনাতে গাছ কাটার সময় আটক করিনি।
এ বিষয়ে সহকারী বন সংরক্ষক নূরন্নাহার কালবেলাকে বলেন, এলাকাবাসীর মৌখিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে আটক করেছেন সেনাবাহিনী।
এদিকে উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান হালিম কালবেলাকে বলেন, খোরশেদ আলম শাহ আইনের প্রতি শতভাগ শ্রদ্ধাশীল একজন মানুষ। তাকে কারো মিথ্যা এবং মৌখিক অভিযোগে আটক করা উচিত হয়নি। আমি যতটুকু জানি, খোরশেদ সাহেবের সঙ্গে বন বিভাগের কিছুটা দূরত্ব আছে। কারণ, খোরশেদ সাহেবের ২০ একর জমি দীর্ঘদিন থেকে বন বিভাগের দখলে আছে। সেই জমি বন বিভাগের কাছ থেকে ফেরত পেতে আইনি প্রক্রিয়ায় চেষ্টা চালাচ্ছেন। এসব বিষয় নিয়ে খোরশেদ সাহেব ভূমি মন্ত্রণালয়, এসিল্যান্ড অফিস, ফরেস্টের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেছেন। তার মতো ওই এলাকায় কয়েক শতাধিক ভুক্তভোগী ভূমি মালিক রয়েছেন।
আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে দেবীগঞ্জ থানার ওসি সোহেল রানা কালবেলাকে বলেন, আটক খোরশেদ আলম শাহের বিরুদ্ধে বন বিভাগ মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ২০১৯ সালে ভূমি মন্ত্রণালয়ের জরিপ অধিদপ্তর থেকে এক পরিপত্রে বলা হয়, প্রাইভেট ফরেস্ট অর্ডিন্যান্স-১৯৫৯-এর আওতায় বনায়নকৃত ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি বন বিভাগের নামে রেকর্ড করা যাবে না এবং ক্ষতিপূরণ দেওয়া না হলে ভূমি মালিকদের নামে রেকর্ড করতে হবে।
পরে ২০২১ সালে ভূমি আপিল বোর্ডে বন বিভাগের একটি মামলার রায়ে বিচারক প্রাইভেট ফরেস্ট অর্ডিন্যান্স-১৯৫৯-এর আওতায় বনায়নকৃত জমি ব্যক্তিমালিকানাধীন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। গত ২০০৭ ও ২০১৪ সালে পৃথক দুটি প্রতিবেদনে পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক ওই জমিগুলোকে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি হিসেবে উল্লেখ করেন।
মন্তব্য করুন