পল্লী বিদ্যুতের সাবস্টেশন (উপকেন্দ্র) পাওয়ার সিস্টেমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বৈদ্যুতিক পাওয়ার পরিবহন ও বিতরণের ক্ষেত্রে সাবস্টেশনের গুরুত্ব অপরিসীম। সে হিসেবে সাবস্টেশন এলাকায় কম লোডে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা পাওয়া যায়।
তবে প্রতিটি উপজেলায় সাবস্টেশন উপজেলা সদরে স্থাপন করা হলেও ব্যতিক্রম সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা। নিজস্ব জায়গা ক্রয় করে ২০১৭ সালে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের কামড়াবন্দ এলাকায় সাবস্টেশন (তাহিরপুর সাব জোনাল অফিস-১) স্থাপন করে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ।
এদিকে উপজেলা সদরে সাবস্টেশন না থাকায় সুবিধাবঞ্চিত হচ্ছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, উপজেলা নির্বাহী অফিস, তাহিরপুর সার্কেল অফিস, তাহিরপুর থানাসহ সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দপ্তরের অফিসসমূহ।
অন্যদিকে আরও একটি সাবস্টেশন সদর ইউনিয়নের বাইরে স্থাপন হওয়ার পরিকল্পনা আছে বলে জানা গেছে। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মনে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তাদের দাবি, তাহিরপুর সদর ইউনিয়নে নতুন সাবস্টেশন স্থাপন করতে হবে।
পল্লী বিদ্যুৎ অফিস সূত্রে জানা যায়, তাহিরপুর উপজেলায় ৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন। তবে প্রতিদিন বিদ্যুতের ঘাটতি থাকায় সাড়ে ৩ থেকে ৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেয়ে থাকে তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাটে অবস্থিত সাবস্টেশন। এই সাবস্টেশনের ৬টি ফিডারের মাধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘতম ফিডার হচ্ছে তাহিরপুর সদরের ফিডার। এর লোড সর্বনিম্ন আড়াই মেগাওয়াট। এই ফিডারে উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মাধ্যে (তাহিরপুর সদর, বালিজুরী, দক্ষিণ শ্রীপুর ও দক্ষিণ বড়দল) চারটি ইউনিয়ন যুক্ত।
যেদিন সাবস্টেশনে ৩ থেকে ৪ মেগাওয়াট লোড থাকে সেদিন তাহিরপুর সদরের ফিডারে লোড দেওয়া সম্ভব হয় না। ফলে বাধ্য হয়ে সাবস্টেশন এলাকায় বিদ্যুৎ রেখে সদরে লোডশেডিং দিতে হয়। তা ছাড়া এই লাইনের দূরত্ব বেশি হওয়ায় হালকা ঝড়-বাতাসে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
আরও জানা যায়, এই উপজেলায় উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের টেকেরঘাট এলাকায় আরেকটি সাবস্টেশন (উপকেন্দ্র) অনুমোদন হয়ে আছে। তবে উপজেলার ভৌগোলিক কারণে ও উপজেলা সদরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেবাকেন্দ্রসহ অফিসগুলোর সুবিধার্থে তাহিরপুর সদরে সাবস্টেশনটি প্রয়োজন।
তাহিরপুর সদর ইউনিয়নের অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী আবুল হাসনাত রাহুল ও সমাজকর্মী সোহাগ মিয়া বলেন, প্রথমত কোন যুক্তিতে কর্তৃপক্ষ উপজেলা সদরকে বাদ দিয়ে ইউনিয়নে পল্লী বিদ্যুৎ সাবস্টেশন স্থাপন করেছেন মাথায় আসে না। অথচ উপজেলা সদরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউএনও অফিস, তাহিরপুর সার্কেল অফিস, থানাসহ উপজেলার সর্বোচ্চ পর্যায়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অফিস রয়েছে। অনেক সময় সাবস্টেশনে লোড কম থাকলে আমাদের তাহিরপুর সদরে বিদ্যুৎ থাকে না।
কিন্তু বাদাঘাট সাবস্টেশন এলাকায় বিদ্যুৎ থাকে খবর পাওয়া যায়। কারণ সাবস্টেশনে বিদ্যুতের লোড কম থাকলেও সাবস্টেশন এলাকায় সহজেই নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা দেওয়া যায়। তারা আরও বলেন, শুনেছি তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের টেকেরঘাট এলাকায় আরও একটি সাবস্টেশন স্থাপনের অনুমোদন রয়েছে। কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের অনুরোধ তারা যেন পরবর্তী সাবস্টেশন তাহিরপুর সদরে স্থাপন করেন। ভৌগোলিক দিক দিয়েও তাহিরপুর সদরে সাবস্টেশন অতি জরুরি। তা না হলে তাহিরপুর সদরের গুরুত্বপূর্ণ অফিসগুলোসহ এ চারটি ইউনিয়ন ভোগান্তি শেষ হবে না।
দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের রিপছান হাবিব জানান, বাদাঘাট ইউনিয়নে সাবস্টেশন হওয়ায় বৈদ্যুতিক লাইন তাহিরপুর সদর হয়ে দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নে এসেছে। বাদাঘাট ইউনিয়ন থেকে এই ইউনিয়নের দূরত্ব তুলনামূলক অনেক বেশি। লোড কম থাকলেই তাহিরপুর থেকে এই ইউনিয়ন বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা হয়। অথবা পুরো লাইন বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকে। তা ছাড়া সাবস্টেশন থেকে আমাদের ইউনিয়নের দূরত্বের কারণে এবং বর্ষায় ঝড়-বৃষ্টির কারণে লাইনে খুব বেশি সমস্যা দেখা দেয়। এজন্য বর্ষায় প্রায়ই টানা এক-দুদিন বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা তৌফিক আহমেদসহ কয়েকটি দপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, হালকা ঝড়-বাতাস হলেই তাহিরপুর সদরে বিদ্যুৎ থাকে না। সদরে যদি সাবস্টেশন থাকত, তাহলে হয়তো এমন ভোগান্তিতে পড়তে হতো না। ভবিষ্যতে যদি এই উপজেলায় সাবস্টেশন স্থাপন করা হয় তাহলে সদরে স্থাপন করলে ভালো হবে।
সুনামগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মিলন কুমার কুণ্ডু কালবেলাকে জানান, তাহিরপুর উপজেলায় অনেক আগে বাদাঘাট এলাকায় সাবস্টেশন (উপকেন্দ্র) স্থাপন করা হয়েছে। এ উপজেলাটি বিচ্ছিন্ন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব খারাপ। বর্তমানে এ উপজেলায় সাবস্টেশন হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। আর যদি হয় তাহলে টেকেরঘাটে একটি সাবস্টেশন হতে পারে।
মন্তব্য করুন