নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলায় প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষের একমাত্র চিকিৎসাসেবার প্রাণকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। অথচ সেখানে জনবল ও ওষুধ সংকটে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। চিকিৎসাসেবার মান ভালো না হওয়ায় বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দিকে ঝুঁকছে রোগীরা। এই সুযোগে ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে।
চিকিৎসক ও সরঞ্জামের অভাবে এবং অপ্রতুল ওষুধসহ নানা সমস্যায় ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। নিয়ামতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালে হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় রূপান্তরিত করা হয়। ৫০ শয্যার হাসপাতালে বিশেষজ্ঞসহ মোট চিকিৎসক থাকার কথা ১৫ জন।
এর বিপরীতে বর্তমানে আছেন ৯ জন। আছে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের সংকট। অথচ ৫০ শয্যার বিপরীতে প্রায় দ্বিগুণ রোগী ভর্তি থাকে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতি মাসে প্রায় আট থেকে ১০টি সিজারিয়ান অপারেশন হয়। এ ছাড়া হাসপাতালে এক্সরে, ইসিজি, আলট্রাসনোগ্রাফি, সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট চালু আছে। হাসপাতালে ওষুধের অপ্রতুলতা রয়েছে।
ফলে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। নানা সংকটের মধ্য দিয়ে চলছে নিয়ামতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কার্যক্রম। শুধু চিকিৎসক নন, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদেরও সংকট আছে। সহসেবক, হিসাবরক্ষক, কার্ডিওগ্রাফার, চালকসহ তৃতীয় শ্রেণির ৩৭ জন কর্মচারীর বিপরীতে আছেন ১৯ জন। অর্থাৎ ১৮টি পদ ফাঁকা। চতুর্থ শ্রেণির অফিস সহায়ক, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, স্ট্রেচার বহনকারী ও ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট পদে ১৯ জন থাকার কথা, আছেন মাত্র ১২ জন।
সরেজমিন দেখা যায়, মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকালে নিয়ামতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫০ শয্যার বিপরীতে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৬৫, যা শয্যাসংখ্যার প্রায় দ্বিগুণ। ওইদিন বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেন ৪০০ জনের বেশি রোগী।
বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে দেখা যায়, পুরুষ ওয়ার্ডে শয্যা সংখ্যা ১৫টি। সেখানে রোগী ভর্তি রয়েছেন ১৪ জন। শিশু ও মহিলা ওয়ার্ডে শয্যাসংখ্যা ৩৫টি। সেখানে রোগী রয়েছেন ৪৬ জন। শিশু ও মহিলা ওয়ার্ডের মেঝেতে বিছানা পেতেছেন রোগীরা। বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের লম্বা লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে চিকিৎসা নিতে দেখা যায়।
বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা আসমা বেগম বলেন, চিকিৎসক সংকটের কারণে আমাদের দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। হাসপাতাল থেকে কিছু ওষুধ দেয়। বাইরে দোকান থেকেও ওষুধ কিনতে হয়।
পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা নাজমুল হকের সঙ্গে কথা হলে তিনি কালবেলাকে বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যে খাবারগুলো দেয়, তা নিম্নমানের। হাসপাতাল থেকে কিছু ওষুধ দিয়ে হাতে স্লিপ ধরিয়ে দেন। বাকি ওষুধগুলো বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়।
নিয়ামতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহবুব-উল আলম কালবেলাকে বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের মারাত্মক জনবল সংকট রয়েছে। প্রতিদিন ধারণক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ রোগী সামলাতে হয়, প্রতিটি সেক্টরেই জনবলের স্বল্পতা।
এই জনবল নিয়েই আমরা রোগীদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি সেবা দেওয়ার। হাসপাতাল থেকে সব ধরনের ওষুধ রোগীদের দেওয়া হয়। যে ওষুধ হাসপাতালে মজুত থাকে না, সেই ওষুধ দোকান থেকে নিয়ে আসতে বলা হয় রোগীর স্বজনদের।
মন্তব্য করুন